শঙ্কা নিয়ে চলছে অসংখ্য গাড়ি ॥ ২১ জেলায় বিজিবি মোতায়েন

37

04_117673কাজিরবাজার ডেস্ক :
২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধে রাতে সরব মহাসড়কগুলো। হামলার ঝুঁকি নিয়েই চলছে অসংখ্য গাড়ি। মঙ্গলবার দিনের বেলায়ও দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল করেছে। ঢাকা-খুলনা-বরিশাল-সাতক্ষীরা-কুষ্টিয়া-পাইকগাছা রুটে গাড়ি চলছে তুলনামূলক বেশি। তবে ট্রিপ সংখ্যা কম। ঢাকা-রাজশাহী রুটে বাস চললেও সংখ্যায় তা খুব কম। পুলিশি নিরাপত্তায় খুশি চালক ও পরিবহন মালিকরা। এদিকে চোরাগোপ্তা হামলা থেমে নেই। দুর্বৃত্তদের আগুন ও পেট্রলবোমায় ঝরছে প্রাণ, পুড়ছে গাড়ি।
কম যাত্রী থাকায় উল্লিখিত রুটগুলোয় দিনে বাস চলছে তুলনামূলক কম। তবে রাতে প্রায় স্বাভাবিক সময়ের মতো চলছে দূরপাল্লার বাস। রাজধানীর সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে দিনে তেমন বাস ছাড়েনি। রাতে কলাবাগানের কাউন্টারগুলো থেকে চট্টগ্রাম-সিলেটের উদ্দেশে গাড়ি ছেড়ে গেছে। গাবতলী টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসের সংখ্যা তুলনামূলক কম।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকামুখী দূরপাল্লার বাসগুলো পাটুরিয়া ফেরিঘাট থেকেই পুলিশ প্রটেকশন দেয়া হচ্ছে। নিরাপত্তা দেয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে ঈগল পরিবহনের হাসান শাহিদ বলেন, একটি ফেরিতে যতগুলো গাড়ি পার হয়ে পাটুরিয়া নামে, সেসব গাড়ির সামনে একটি করে পুলিশের টহল গাড়ি থাকে। এভাবে কয়েক দিন মহাসড়কে গাড়ি চলছে। সোহাগ পরিবহনের মইনউদ্দিন খান বলেন, অবরোধের মধ্যে গাড়ি চালাতে গিয়ে পুলিশের ভালো সহযোগিতা পাচ্ছি।
হানিফ এন্টারপ্রাইজ কাউন্টারের মাস্টার এখলাসউদ্দিন বলেন, দূরপাল্লার গাড়ি চলছে। একদিনের জন্যও গাড়ি বন্ধ হয়নি। তিনি জানান, পুলিশ মূলত মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট চিহ্নিত করে প্রটেকশন দিচ্ছে। পুরো মহাসড়কজুড়েই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা গেলে ভালো হতো। যদিও আমরা বুঝি, বাস্তবে এটি করা খুবই কঠিন।
জেআর পরিবহনের বাচ্চু মিয়া বলেন, দিনে আমরা গাড়ি চালাচ্ছি না। আমাদের নৈশকালীন গাড়িগুলোই কেবল গাবতলী ছেড়ে যাচ্ছে। শ্যামলী পরিবহনের শাকিল আহমেদ জানান, আমাদের কোম্পানি দক্ষিণাঞ্চলগামী গাড়িগুলো চালাচ্ছে। তবে উত্তরাঞ্চলগামী কোচগুলো পুরোপুরি বন্ধ।
সাকুরা পরিবহনের আল আমীন বলেন, আমরা মূলত বরিশাল-স্বরূপকাঠি রুটে গাড়ি চালিয়ে থাকি। মঙ্গলবার বেলা ১১টা পর্যন্ত আমাদের চারটি গাড়ি ঢাকা ছেড়ে গেছে। দুপুর নাগাদ আরও তিনটি গাড়ি ঢাকা ছেড়ে যাবে।
মামুন এন্টারপ্রাইজের সঞ্জয় মল্লিক বলেন, ঝুঁকি থাকলেও গাড়ি চালানো হচ্ছে; তবে সীমিত আকারে। স্বাভাবিক সময়ে আমাদের ১০টি গাড়িতে পাঁচটি ট্রিপ হতো, এখন চালানো হচ্ছে তিনটি ট্রিপ। সার্বিক পরিবহনের মিজানুর রহমান বলেন, সার্বিক পরিবহন মূলত দিনেই গাড়ি চালায়। অন্য কোম্পানি দিনে গাড়ি চালাতে ঝুঁকি বোধ করলেও আমরা তেমন করি না। মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায় খুলনার উদ্দেশে রওনা করা আবদুল হাফিজ বলেন, বিশ্ব ইজতেমায় এসেছিলাম। আত্মীয়ের বাসায় দুই দিন থেকে আজ ঝুঁকি নিয়েই রওনা হয়েছি। চলমান রাজনীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ক্ষমতার জন্যে দুই পক্ষই উন্মাদ আচরণ করছে। একটি পক্ষ তো এবার ইজতেমার সময়ও অবরোধ শিথিল করল না। এটা দুর্ভাগ্যজনক।
এদিকে পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যেও গাড়িতে হামলা করছে অবরোধকারীরা। সোমবার রাতে চট্টগ্রামের বিএসআরএম গেট এলাকায় একটি ট্রাকে পেট্রলবোমা ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। এতে গাড়িটিতে আগুন ধরে যায়। চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে এটি রাস্তার উল্টে যায়। এতে চালক এনাম নিহত হন। আহত হন আরও দুইজন। বন্দরনগরীর ষোলোশহর রেলস্টেশন এলাকায় যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন দিয়েছে অবরোধকারীরা। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় লেগুনায় আগুন দেয় অবরোধকারীরা। এছাড়া সারা দেশে যানবহানে হামলা, ভাংচুর চালায় অবরোধকারীরা।
২১ জেলায় বিজিবি মোতায়েন : জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দেশের ২১ জেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিজিবি মহাপরিচালক আজিজ আহমেদ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, মন্ত্রী ও সচিবের মৌখিক নির্দেশেই জেলাগুলোয় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাজধানীতে অন্তত ১৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, দেশের সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে সোমবার বিজিবি মোতায়েনের নির্দেশ দেয়া হয়। এতে জননিরাপত্তার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সচল রাখার বিষয়টিও বিবেচনা করা হয়েছে।