সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আমাদের করণীয়

301

॥ আবু মালিহা ॥

প্র তি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় বহুলোক হতাহত হয়। এ ব্যাপারে জাতীয় পরিসংখ্যান বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আমাদের দেশ জনবহুল দেশ। দেশের বহু সম্পদের মধ্যে মানব সম্পদ একটি বড় সম্পদ। তবে প্রশিক্ষিত মানুষগুলোই দেশ জাতির উপকারে আসে বেশী। অতএব এসব মানব সম্পদ রক্ষা করা জাতীয় ও সামাজিক দায়িত্ব। কিন্তু এ ব্যাপারে সর্বমহলের উদাসীনতা জাতিকে উৎকন্ঠায় ফেলে দেয়। যে কোন মানুষের নিরাপত্তা বিধান করা রাষ্ট্রীয় মূলনীতির অংশ এবং এ ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগই মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হয়। আমাদের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সড়কের সংস্কার ও বৃদ্ধির জন্য সরকার বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে। তা প্রশংসনীয়। পাশাপাশি এ ব্যাপারে অনিয়ম ও ব্যত্যয় যে ঘটে না, তা কিন্তু নয়। অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে সত্য যে, প্রতি বছরই আমাদের দেশের সড়ক দুর্ঘটনায় বহুলোক নিহত হয়। এবং আহত হয় অনেক লোক। বিশেষ করে যানবাহন চলাচলে এ সমস্ত লোকের প্রাণ সংহার সিংহভাগই হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে বেসরকারীভাবে একটি ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা) প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছিল গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্য। অর্থাৎ মানুষ যাতে নিরাপদে সড়ক পথে চলাচল করতে পারে। এবং যারা যানবাহন পরিচালনা করেন তাদের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্লাকার্ড বহন করে এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রচারণার মাধ্যমে সকলের সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে অনেক কর্মসূচীও গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে প্রখ্যাত অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন বড়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। বিভিন্ন সেমিনার শিম্পোজিয়মের মাধ্যমে নিরাপদে সড়ক চলাচলে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে থাকেন।
অনেক সময় আমরা ছোট বড় অনেক গাড়ীর পিছনে বিজ্ঞাপনী আকারে অনেক লেখা পড়ে থাকি। এগুলোর মধ্যে হচ্ছে- একটি দুর্ঘটনা সারাজীবনের কান্না, নিরাপদে পথ চলুন, আপনার জীবন রক্ষা করুন, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশী, জেব্রা ক্রসিং দেখে রাস্তা পারাপার হউন, গাড়ী চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না, জীবন তো একটাই, বুঝে শুনে পথ চলুন, সত্যি কথা বলতে কী এ সমস্ত সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন আমাদের দৃষ্টিগোচর অহরহই পড়ে, কিন্তু এ ব্যাপারে কতটুকু সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে তা জাতীয় পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে! কিন্তু আমার ধারণা এ ব্যাপারে যতটুকু সচেতনতা বাড়ানো দরকার আমরা কিন্তু তেমনটি পাচ্ছি না। না সরকারীভাবে, না বেসরকারী ভাবে। তবে সচেতনতা একদম যে হচ্ছে না, তা কিন্তু নয়। তবে এ ব্যাপারে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা দরকার সমাজ সচেতন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সরকারী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে।
এ ব্যাপারে কিছু প্রস্তাবনা আকারে পেশ করা যেতে পারে, যেমন (ক) আধুনিক ডিজিটাল সিগনাল পোস্ট নির্মাণ করা (খ) ফিটনেস বিহীন কোন যানবাহন পথে না নামানো (গ) জনপথ ও সড়ক উন্নয়ন সংস্থায় দুর্নীতিহীন লোকজন বসানো (ঘ) ওভারব্রীজ পারাপারে লোকজনকে উৎসাহিত করা এবং আইন প্রয়োগে যথাসাধ্য চেষ্টা করা (ঙ) গাড়ী চালানোর সময় যাবতীয় সরঞ্জাম ব্যবহার করা (চ) ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানে সতর্ক হওয়া (ছ) রাস্তার উভয় পাশে ফুটপাত নির্মাণ করা (জ) ছোট ও ভারী যানবাহনের আলাদা রুট তৈরী করা (ঝ) শিক্ষার্থী ও অফিসগামী মানুষদের আলাদা পরিবহনের ব্যবস্থা করা (ঞ) এবং প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর ফিটনেস চেকিং এর জন্য জনগণ ও সড়ক উন্নয়ন সংস্থার পক্ষ থেকে একজন ম্যাজিষ্ট্রেটের অধীনে মোবাইল টীম বের করা।
এ সমস্ত উপরোল্লিখিত ব্যবস্থা যদি সরকার এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ধীরে ধীরে অনুশীলন প্রক্রিয়াতে আনা যায় তবে আশা করা যায় সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে রোধ করা যাবে এবং নিরাপদে সড়ক চলাচলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। এবং এভাবে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আর যেন কোন মানুষ সারা জীবনের দুর্বহ বোঝা আর যন্ত্রণার শিকারে পরিণত না হয়, সে ব্যাপারে আমরা সকলে সচেতন হই এবং নিরাপদ সড়ক সৃষ্টির মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করি।