সড়ক দুর্ঘটনা ও তার নির্মমতা

52

ছাদিকুর রহমান

বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এর তথ্য মতে। বাংলাদেশে প্রায় ১০০টির বেশী জাতীয় মহাসড়ক আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জেলা সড়ক রয়েছে। তার মধ্যে ৩৫৩৮ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক, ৪২৭৮ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক ও ১৩৬৩৮ কিলোমিটার জেলা সড়ক রয়েছে। সর্বমোট ২১৪৫৪ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে প্রতিদিন শত শত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। প্রতি বছর এই ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় হাজার হাজার মানুষের তাজা প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। আর হাজার হাজার মানুষকে করে দিচ্ছে স্থায়ী ভাবে পঙ্গু। তার ফলে অসংখ্য পরিবারে নেমে আসে কালো অন্ধকার হয়তোবা পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী মানুষটি ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় স্থায়ী ভাবে পঙ্গু কিংবা নিহত হলে পরিবারে নেমে আসে চরম দরিদ্রতা ও দুর্বিষহ। ইতিপূর্বে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন আমাদের দেশের অনেক প্রতিভাবান মানুষ তার মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী বৃহত্তর সিলেটের কৃতি সন্তান এম সাইফুর রহমান ২০০৯ সালে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাংলাদেশের বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ২০১১ সালে একই দিনে শহীদ বুদ্ধিজীবি ড. মুনির চৌধুরীর ছেলে বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক মিশুক মনির। সুনামগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র কবি মমিনুল মউজদীন ২০০৭ সালে। সাবেক ছাত্রনেতা ও সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার হোসেন শামীম ২০১২ সালে। বর্তমান আইন মন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হকের স্ত্রী ও নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর প্রতষ্ঠাতা চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের স্ত্রী ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। গত ২৯/১১/২০১৪ তারিখে বাংলাদেশের বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর সাবেক পরিচালক জগলুল আহমেদ চৌধুরী রাজধানী ঢাকায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। গত ০৮/০২/২০১৪ তারিখে রাগীব রাবেয়া ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত একুশে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে তার সাথে দেখা হয়েছিল। তিনি নিজেও এবছর রাগীব রাবেয়া একুশে পদক লাভ করেন। অল্প কিছু কথাও হয়েছিল। অল্প সময়ে যতটুকু বুঝেছিলাম তিনি অত্যন্ত বিনয়ী মানুষ ছিলেন। আর অনেক প্রতিভাবান মানুষ ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।
হয়তো বা এসব মানুষের সমাজে আরো অনেক কিছু দেবার ছিল। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার অনেক কারণ রয়েছে তার মধ্যে অদক্ষ গাড়ি চালক, অকার্যকর ট্রাফিক আইন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, সড়কের বেহাল দশা, গাড়ি চলন্ত অবস্থায় চালক মোবাইলে কথা বলা, নসিমন, করিমন, টমটম ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়া, রোড ডিভাইডার না থাকা, মাদকাসক্ত গাড়ি চালক, যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং ইত্যাদি।  এসব সমস্যা সমাধানে সামাজিক ভাবে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাই প্রয়োজন ব্যাপক সামাজিক সচেতনতা কার্যকারী ট্রাফিক আইন, সরকারের সুদৃষ্টি। সড়ক মহাসড়কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন। তা না হলে আমাদের সড়ক মহাসড়কগুলো অদূর ভবিষ্যতে স্থায়ী মরণ ফাঁদে পরিণত হবে।