সংঘাত নয়, শান্তি চাই -প্রধানমন্ত্রী

35

hasina_sm3_838551087কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশে শান্তির ধারা অব্যহত থাকুক। সংঘাত মুক্ত দেশে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ ভালো থাকুক।- এমন প্রত্যাশাই করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ প্রত্যাশার কথাই ব্যক্ত করেন।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই সুন্দর বাংলাদেশ। সংঘাত চাই না আমরা, শান্তি চাই। বাঙালি জাতির একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে চাই আমরা।
সুন্দরভাবে দেশ গড়ে উঠুক, বিশ্ব সভায় মর‌্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হোক এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
‘বাঙালি সংস্কৃতির প্রধান বৈশিষ্ট্য অসাম্প্রদায়িকতা’  উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ধর্ম-বর্ণ ভেদাভেদ ভুলে মানুষে মানুষে মিলন হবে- এটাই বাঙালি সংস্কৃতির মূল কথা। আজ মাঝে মধ্যে নিজের মনেই প্রশ্ন জাগে, বাঙালি জাতি কী তার সংস্কৃতির মূলধারা থেকে বিচ্যুত হচ্ছে? হয়তো কোন একটা গোষ্ঠী!
‘নববর্ষ, বাঙালি নিজস্ব উৎসব, প্রতিটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে এক হয়ে উদযাপন করে বাঙালি। বাংলাদেশে এ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটাই বাঙালির শাশ্বত ঐতিহ্য। আবহমান কাল ধরে চলমান অসাম্প্রদায়িকতার চমৎকার এ পরিবেশ বিরাজমান থাকুক এটাই সবার আকাঙ্ক্ষা।’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
জঙ্গিবাদ, ধর্মান্ধতা, অসহিষ্ণুতা, সহিংসতা-এসব বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই নয় বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য, অতিথিপরায়ণতা হচ্ছে বাঙালির আদর্শ। বাঙালির তো কখনই সম্পদের প্রাচুর্য ছিল না। কিন্তু অল্পতে তুষ্ট বাঙালি জীবনকে উপভোগ করার কৌশল জানতো।
তিনি বলেন, আজ জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। ধর্মের লেবাসধারীরা ধর্মীয় উপসনালয়ে হামলা করছে। আমরা গত বছর দেখেছি, কীভাবে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের চত্বরে পবিত্র কোরআন শরীফে আগুন দেওয়া হয়। জাতীয় মসজিদ তছনছ করা হয়। এরপরও তারা কীভাবে নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করে।
সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যই এসব আমানবিক আচরণের পরিবর্তন আনতে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শিল্পী-সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবীদের এ ব্যাপারে আমি আহ্বান জানাই তারা যেন আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেন। নিচু ও সংর্কীণ মানসিকতার বিরুদ্ধে মানুষের চেতনাকে আরো জাগ্রত করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। মানুষের মূল্যবোধকে আরো জাগ্রত করতে হবে।
১০০ বছর আগে ১৯১৪ সালের এইদিনে কিশোরগঞ্জ জেলার কেন্দুয়ায় জন্মগ্রহণ করেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। বাংলাদেশ সংবিধানের স্কেচ করেন জয়নুল আবেদিন।
জয়নুল আবেদিন ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের ছবিগুলো মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা, এদেশের মানুষের প্রতি বৃটিশদের চরম অবহেলার চিত্র ফুটিয়ে তোলে।
১৯৭০ সালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে মহাপ্রলয়ে ক্ষয়ক্ষতি, মানুষের দুঃখ দুর্দশার জয়নুল আবেদিন আঁকলেন বিখ্যাত ছবি ‘মনপুরা-৭০’। ৩০ ফুট দীর্ঘ এই শিল্পকর্মে শিল্পী সাইক্লোনের ভয়াবহতা ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি বাঙালির ঘুরে দাঁড়ানোর দৃঢ় চেতা মনোভাবও তুলে ধরেন।
১৯৭০ সালে ফিলিস্তিন সফর করে যুদ্ধক্ষেত্রে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের স্কেচ এঁকে বিভিন্ন আরবদেশে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছিলেন এই বিখ্যাত চিত্রশিল্পী।
এভাবে তিনি ফিলিস্তিনিদের ন্যায়সঙ্গত দাবির প্রতি প্রত্যক্ষ সমর্থন এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে জয়নুল আবেদিনের এসব অবদানের কথা স্মরণ করেন।
বাঙালির মুক্তির আন্দোলনে জয়নুল আবেদিনের অবদানের কথা বলতে গিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অবদানের কথাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
জয়নুল আবেদিন ও কাজী নজরুলের মিল তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন শব্দের কারুকার্যের মাধ্যমে অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদ করেছেন। অন্যজন রঙ-তুলির আঁচড়ে সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং বঞ্চনাকে তুলে ধরেছেন।
জয়নুল আবেদিন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন কেবল একজন শিল্পী ছিলেন না, বাংলাদেশের শিল্পসংস্কৃতির অঙ্গনে নানা ক্রান্তিকালে তিনি নেতৃত্বও দিয়েছেন।
তিনি বলেন, শিল্পাচার্য ১৯৪৩ সালের দুভিক্ষ শীর্ষক চিত্রমালার জন্য সারাবিশ্বে খ্যাতিলাভ করেছেন। তার নৌকা, সংগ্রাম, নবান্ন, মনপুরা-৭০, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রভৃতি শিল্পকর্ম একদিকে বাংলার নিসর্গ, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে যেমন ফুটিয়ে তুলেছে, তেমনি বাঙালির জীবন-সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি এসব শিল্পকর্মে মূর্ত হয়ে উঠেছে।
বছরব্যাপী জয়নুল আবেদিনের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস শিল্পাচার্যের শিল্পকর্ম দেখার মাধ্যমে দেশি-বিদেশি দর্শক আমাদের বিশ্বমানের শিল্পকলা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাবেন। নবীন শিল্পীরা উৎসাহিত হবেন।
পরে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে শিল্পার্চায জয়নুল আবেদিনের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।