ভয়ে কাজে যেতে পারছে না মহিলা শ্রমিকরা ॥ কুলাউড়ায় চা বাগানের ৪ শ্রমিক পরিবার ১৫ দিন থেকে অবরুদ্ধ

70

শাহ আলম শামীম, কুলাউড়া থেকে :
কুলাউড়া উপজেলার মেরিনা চা বাগানে হামলার শিকার ৪ শ্রমিক পরিবার গত ১৫ দিন থেকে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। বাগানে নিয়মিত ৩ মহিলা শ্রমিক কাজে যোগ দিতে পারছে না। থানায় মামলা দিয়েও শ্রমিক পরিবারগুলো রয়েছে উদ্বেগ উৎকন্ঠায়। গত ২৯ নভেম্বর শনিবার তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মেরিনা চা বাগানের বাংলাটিলায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ ২০-২৫ জন লোক ছইফ মিয়া ও রইছ মিয়ার বাড়িতে গিয়ে চুরির অপবাদ দিয়ে সবাইকে গালিগালাজ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ঘরের পুরুষদের হাত পা বেঁধে রড ও লাঠি দিয়ে মারধর শুরু করেন। তাদের হামলায় গুরুতর আহত হন রুবেল মিয়া (২৬), মুকিত মিয়া (৩০), ছইফ মিয়া (৪০), কুরবান আলী (১৮), রাবেয়া বেগম (২২) ও কুরবান আলী (২০)। ইউপি সদস্যের নির্দেশে রুবেল ও মুকিত মিয়ার দৃষ্টিশক্তি নষ্টের লক্ষ্যে চোখের ভেতরে চুন দেয়। আহতরা বর্তমানে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল ও সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
আহতদের পরিবারের অভিযোগ, আহত মুকিতের স্ত্রী নাজমা বেগম, রুবেলের মা ফাতেমা বেগম ও ছইফ মিয়ার স্ত্রী সকিনা বেগম বাগানের নিয়মিত শ্রমিক। বাগানের কাজ করতে পারছে না তারা। ঘটনার পর থেকে ৪টি শ্রমিক পরিবার রয়েছে নিরাপত্তাহীনতায়। পরিবারের লোকজন বাগানে নির্বিঘেœ চলাফেরা করতে পারেনা। হামলায় আহত কুরবান আলী ছিলো এইচএসসি টেস্ট পরীক্ষার্থী। আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় পরীক্ষা দিতে পারেননি। রইফ মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা বেগম জানান, আসামীদের ভয়ে কাজ করতে পারছি না বা খাবারের সন্ধানে কোথাও বের হতে পারছিনা। আমরা ন্যায় বিচার চাই। এ ঘটনায় রইফ মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে কুলাউড়া থানায় মামলা (নং-২৭, তারিখ- ২৯/১১/১৪) দায়ের করেন। এদিকে থানায় মামলা দায়েরের পর গত ৩০ নভেম্বর রবিবার বাগানের শ্রমিকরা কর্মবিরতী পালন করে। শ্রমিকরা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি ও সম্পাদকসহ বাগানের নিরীহ শ্রমিকদের ওপর থেকে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
বাগান ব্যবস্থাপক জুবায়ের আহমদ চৌধুরী জানান, ৪ শ্রমিক পরিবারের অভিযোগ মিথ্যা। তারা কাজ করতে পারছে না বলে কোন অভিযোগ করেনি। আহতরা বাগানের কোন শ্রমিক নয়, তারপরও নিজ খরচে মৌলভীবাজার থেকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করি।
জয়চন্ডী ইউপি চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন আহমদ কমরু জানান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নেহার বেগমের বাসার কাজের মেয়ে বাসা থেকে চুরি করে কিছু মালামাল নিয়ে যায়। তিনি এ বিষয়টি আমাকে অবগত করেছেন। বাগানে মারামারির ঘটনার সময় আমি আসরের নামাজে ছিলাম। আমি স্থানীয় এমপির প্রতিহিংসার শিকার।
এ ব্যাপারে কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ অমল কুমার ধর জানান, বাগানের এই কয়টি পরিবারকে অন্য শ্রমিকরা দেখতে পারেনা। চোর অপবাদ দিয়ে এদের আলাদা করে রেখেছে। চোর হলেও এদের পুলিশে সোপর্দ করতে পারতো। কিন্তু তা না করে চোখ নষ্ট করার জন্য চুন দেয়া উচিত হয়নি। মামলার তদন্ত চলছে। বাগানে হওয়ায় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে একটু ধীরে হবে।