নান্দনিক স্থাপত্য শৈলীতে পুনর্নির্মিত শহীদ মিনারের উদ্বোধন আজ

54

Photo-111স্টাফ রিপোর্টার :
চা বাগানগুলোর ফাঁক দিয়ে প্রতিটি নতুন ভোরে নব দিগন্তে যেভাবে রক্তিম সূর্যের দেখা মেলে, সেই রূপ আর আবহমান বাংলার সংগ্রামী চেতনাকে প্রস্ফুটিত করে নির্মিত হয়েছে নগরীর চৌহাট্টায়স্থ এ শহীদ মিনারটি। অপরূপ নান্দনিকতা আর সিলেটি ঐতিহ্যর এ দুয়ের মিশেলে নির্মিত হল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। দেশের অন্যতম এই আকর্ষণীয় ও মনমোহনী শহীদ মিনার নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা। আজ বুধবার ১০ ডিসেম্বর/২০১৪ সন্ধ্যা ৬ টায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ নান্দনিক স্থাপত্য শৈলীর পুনর্নির্মিত শহীদ মিনারটির আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন করবেন।
আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। তারপরই সিলেটবাসীকে বিজয় দিবসের উপহার হিসেবে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে দেশের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন এ শহীদ মিনারটি। উদ্বোধন শেষে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এক সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি বিশেষ হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। এছাড়া সন্ধ্যা ৭টায় সিলেটের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও সম্মিলিত নাট্য পরিষদের উদ্যোগে থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এদিকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদযাপনের লক্ষ্যে শহীদ মিনারের আশপাশের দেয়ালগুলোও রং করাসহ মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন দিয়ে সাজানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১শ ফুট চওড়া ভূমির উপর ৪৫ ফুট উচ্চতার স্তম্ভটির মাধ্যমে আন্দোলিত ভূমি থেকে জেগে ওঠা বাঙালির আবহমান সংগ্রামী চেতনাকে উপলক্ষ্য করে শহীদ মিনারটির দৃষ্টিনন্দন নকশা আঁকেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক শুভজিৎ চৌধুরী। তাঁর সহযোগী স্থপতি হিসেবে কাজ করেন কৌশিক সাহা, সিপাউল বর চৌধুরী, ধীমান চন্দ্র বিশ্বাস ও জিষ্ণু কুমার দাস। প্রকৌশলী হিসেবে শহীদ মিনার নির্মাণে যুক্ত হন হুমায়ূন খান ও দেবাশীষ ভট্টাচার্য। গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর শহীদ মিনারের আনুষ্ঠানিক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। নকশা অনুযায়ী শহীদ মিনারের মূল স্তম্ভের পেছনে অনেকটা সবুজ টিলার মতোই ভাঁজ ভাঁজ আন্দোলিত ভূমি। মূল স্তম্ভের ঠিক মধ্যখানে লাল গোলাকৃতি বস্তুটি অবিকল সূর্যোদয়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। সিলেটের চা-বাগানগুলোতে গাছের ফাঁক দিয়ে প্রতিটা নতুন ভোরে যেমন করে সূর্য ওঠে, দূর থেকে দেখে শহীদ মিনারের এই স্তম্ভের ওই রূপকেও ঠিক তেমনটাই মনে হবে। পুরনো শহীদ মিনারের আগের ১৯ শতক জমির সাথে শহীদ সামসুদ্দীন হাসপাতাল থেকে আরো ১৭ শতক জমি নিয়ে নির্মিত হল এ নতুন শহীদ মিনার।
শহীদ মিনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন পরিষদ’র সমন্বয়ক ও সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান জানান, আজ ১০ ডিসেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় শহীদ মিনারটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। অর্থমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শহীদ মিনারটি উদ্বোধন করবেন বলে জানান তিনি। উদ্বোধন উপলক্ষে ৭ দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। তিনি বলেন, নতুন এ শহীদ মিনারটি নির্মাণে প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
উল্লেখ্য, সিলেট অঞ্চলের ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার হিসেবে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মিত হয় ১৯৮৮ সালে। ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা ও কিছু প্রতিশ্র“তিশীল মানুষের হাত ধরেই বীজ বপীত হয় সেই শহীদ মিনারের। পরবর্তীতে সেই শহীদ মিনারই সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মর্যাদা লাভ করে। ২০১৩ সালের ২২ ফেব্র“য়ারি সিলেট নগরীতে হেফাজতে ইসলামীর মিছিল থেকে হামলা চালানো হয় শহীদ মিনারে। তাদের তান্ডবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শহীদ মিনার। পরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত নতুন নকশা সহযোগে শহীদ মিনারটি পুনর্নির্মাণের জন্য সিসিক কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
এদিকে আধুনিক স্থাপত্যকলায় দৃষ্টি নন্দন পুনর্নির্মিত সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এর উদ্বোধন উপলক্ষে গতকাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন পরিষদের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা সদর উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয় । উক্ত সভায় আলোচনা করেন ও উপস্থিত ছিলেন, আনম শফিকুল হক, মোঃ কলন্দর আলী, ব্যারিষ্টার আরশ আলী, সুপ্রিয় চক্রবর্তী, ধীরেন সিংহ, নাজনীন হোসেন, লোকমান আহমদ, জাকির আহমদ, এনায়েত আহমদ, প্রিন্স সদরুজ্জামান, আব্দুর রহমান জামিল, সায়ফুল আলম রুহেল, শামসুল আলম সেলিম, আব্দুল কাইয়ুম মুকুল, অনুপ কুমার দেব, বিভাস শ্যাম যাদন, কে এ কিবরিয়া, এমাদ উদ্দিন মানিক, খোয়াজ রহিম সবুজ, বিপ্রদাস ভট্টাচার্য্য, রজত কান্তি গুপ্ত, সিরাজ উদ্দিন শিরুল, বশির আহমদ জুয়েল, মোহাম্মদ বাদশা গাজী, প্রমুখ। সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুর হবে বিকেল সোয়া ৪টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে। সন্ধ্যা ৫টায় অনুষ্ঠিত হবে সুধী সমাবেশ, ৬টায় অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উক্ত অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকলকে উপস্থিত থাকার আহবান জানিয়েছেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন পরিষদের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা সদর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী ও সমন্বয়ক বদর উদ্দিন আহমদ কামরান।