অভিনেতা খলিল আর নেই

65

khalil_bg_banglanews24_353093334কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিশিষ্ট অভিনেতা খলিলউল্ল্যাহ খান আর নেই। গতকাল ৭ ডিসেম্বর সকাল ১০টা ৫৮ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিলো ৮০ বছর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি শ্বাসকষ্ট, ফুসফুস ও কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন। শক্তিমান এই অভিনেতার মৃত্যুতে চলচ্চিত্রাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তিনি তিন ছেলে ও তিন মেয়ে এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার আরও দুই ছেলে ছিলো। বাবার আগেই তারা চিরবিদায় নিয়েছেন।
দু’দিন আগে খলিলের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ইনটেনসিভ কেয়ারে চিকিৎসা চলছিলো তার। গুরুতর একটি অস্ত্রোপচারের জন্য সকালে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন খলিল। তার হাতে এই সম্মাননা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি অসুস্থ খলিলের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
১৯৩৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সিলেটে জন্মেছিলেন খলিল। তার স্ত্রীর নাম রাবেয়া খানম। ঢাকার মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডে থাকতেন তিনি। হাসপাতাল থেকে এখানেই মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। বাসার নিকটস্থ গোরস্তানে তাকে বাদ আছর দাফন করা হয়।
মঞ্চ দিয়েই খলিলের অভিনয় জীবন শুরু হয়। কলিম শরাফী ও জহির রায়হান পরিচালিত ‘সোনার কাজল’ ছবিতে নায়ক হিসেবে রূপালি পর্দায় অভিষেক হয় তার। এই ছবিতে তার নায়িকা ছিলেন সুলতানা জামান ও সুমিতা দেবী। এরপর নায়ক হিসেবে ‘ভাওয়াল সন্ন্যাসী’, ‘প্রীত না জানে রীত’, ‘কাজল’, ‘জংলীফুল’, ‘সঙ্গম’সহ আরও কয়েকটি ছবিতে কাজ করেন তিনি। প্রতিটিই ছিলো  বেশ ব্যবসাসফল।
ছবির নায়ক হওয়ার মাধ্যমে রূপালি পর্দায় অভিষেক হয় তার। গুণী এই অভিনেতা তিন শতাধিক ছবিতে কাজ করেছেন। চিত্রনায়িকা কবরী প্রযোজিত ও আলমগীর কুমকুম পরিচালিত ‘গুণ্ডা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন কিংবদন্তী অভিনেতা খলিল।
এসএম পারভেজ পরিচালিত ‘বেগানা’ ছবিতে প্রথমবার খলনায়ক হিসেবে অভিনয় করেন খলিল। নেতিবাচক চরিত্রেও তার অভিনয় প্রশংসিত হয়। এরপর খলনায়ক হিসেবেই নিয়মিত কাজ করতে থাকেন তিনি। ফলে নায়ক চরিত্রে আর ফেরা হয়নি।
খলিল অভিনীত ছবির তালিকায় আরও উল্লেখযোগ্য ‘আলোর মিছিল’, ‘অশান্ত ঢেউ’, ‘সমাপ্তি’, ‘তানসেন’, ‘নদের চাঁদ’, ‘মাটির ঘর’, ‘পাগলা রাজা’, ‘অলংকার’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘বেঈমান’, ‘কন্যাবদল’, ‘যৌতুক’, ‘সোনার চেয়ে দামি’, ‘বদলা’, ‘মেঘের পর মেঘ’, ‘মধুমতি’, ‘ওয়াদা’, ‘ভাই ভাই‘, ‘বিনি সুতোর মালা’, ‘মাটির পুতুল’, ‘সুখে থাকো’, ‘অভিযান’, ‘গুণ্ডা’, ‘পুনর্মিলন’, ‘কার বউ’, ‘বউ কথা কও’, ‘দিদার’, ‘আওয়াজ’, ‘নবাব’, ‘দ্বীপ কন্যা’, ‘আয়না’ প্রভৃতি। উর্দু ছবিতেও অভিনয় করেছেন তিনি। এ তালিকায় উল্লেখযোগ্য ‘ক্যায়সে কহু’, ‘পুনম কি রাত’, ‘উলঝান’ প্রভৃতি।  রাজ্জাকের সঙ্গে ‘বাপ বড় না শ্বশুড় বড়’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এরপর আর নতুন কোনো ছবিতে দেখা যায়নি তাকে।
চলচ্চিত্রের পাশাপাশি টিভি নাটকেও অভিনয় করেছেন খলিল। তার অভিনীত নাটকের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিটিভিতে প্রচারিত আব্দুল্লাহ আল মামুনের ধারাবাহিক নাটক ‘সংশপ্তক’।
অভিনয়ের পাশাপাশি দুটি ছবি প্রযোজনা করেছিলেন খলিল। এর মধ্যে ‘সিপাহী’পরিচালনা করেন কাজী হায়াৎ। আর মালেক আফসারীর পরিচালনায়  ‘এই ঘর এই সংসার’ছবিতে অভিনয় করেন প্রয়াত নায়ক সালমান শাহ।
অভিনয়ে পুরোদস্তুর ব্যস্ত হওয়ার আগে বাংলাদেশের আনসারের কর্মকর্তা ছিলেন খলিল। তিনি বাংলাদেশ চলচিত্র শিল্পী সমিতির দ্বিতীয় সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।