আটককৃত ভুয়া সাংবাদিকসহ ৫ জনকে কারাগারে প্রেরণ, প্রিন্সিপালের মামলা দায়ের

37

স্টাফ রিপোর্টার :
দক্ষিণ সুরমার ভোকেশনাল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ভুয়া সাংবাদিকসহ আটককৃত ৫ জনকে গতকাল বৃহস্পতিবার কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এর আগে পুলিশ আটককৃতদের মধ্যে টেকনিক্যাল ভোকেশনাল স্কুল এন্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও সাংবাদিক নামধারী বেলায়েত হোসেন সবুজ, ফারজানা ও সবুজের বন্ধু শুভ্র চন্দ্রকে সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (আমলী-৫) আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীর আবেদন জানায়। পরে ওই আদালতের বিচারক মোঃ আনোয়ারুল হক তাদের ৩ জনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী রেকর্ড করেন।
আটককৃতরা  হচ্ছে- গোলাপগঞ্জ থানার হেতিমগঞ্জ নিজতফা গ্রামের মহিউদ্দিন আহমদের পুত্র বেলায়েত হোসেন সবুজ (২৭), একই এলাকার বিশু চন্দ্র শীলের পুত্র ও সবুজের বন্ধু শুভ্র চন্দ্র শীল (১৯),সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কলিমপুর গ্রামের মৃত মতি মিয়ার মেয়ে বর্তমানে টেকনিক্যাল রোডের জামাল মিয়ার কলোনীর বাসিন্দা মোচ্ছাঃ ফারহানা বেগম (২২), হবিগঞ্জের মাধবপুর থানার দুর্গাপুর গ্রামের মির্জাহান মিয়ার পুত্র বর্তমানে টেকনিকেল রোডের হাবিব হোসেন কমপ্লেক্সের বাসিন্দা ইমরুল হাসান (২০) ও বিশ্বনাথ থানার টেংরা গ্রামের আলকাছ মিয়ার পুত্র টেকনিক্যাল ভোকেশনাল স্কুল এন্ড কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্র মতিন (২০)।
এদিকে ঘটনারদিন রাতেই টেকনিক্যাল ভোকেশনাল স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল সাইদুর রহমান বাদি হয়ে ৫ জনকে আসামী করে দক্ষিণ সুরমার থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। নং- ২৩।
গতকাল বিকেল ৪টায় আটককৃত বেলায়েত হোসেন সবুজ কোর্ট লকাপে থেকে এ প্রতিবেদককে জানান, বেশ কিছুদিন ধরে সে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা-লেখি করে আসছিল বলে দাবি করে টিভি চ্যানেল এস এর সাংবাদিক হন। টেকনিক্যাল ভোকেশনাল স্কুল এন্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হিসেবে কলেজের সুব্রত স্যার প্রিন্সিপালকে (নানা অনিয়মের কারণে) ফাঁসানোর জন্য বলেন। সবুজ আরো জানান, সুব্রত স্যার আমাকে ট্রেস্ট পরীক্ষায় পাস করিয়ে ও ফাইনাল পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র দেয়ার আশ্বাস দিয়ে আমাদের দিয়ে এ ঘটনা ঘটান। তাছাড়া আটক হওয়ার পর আমি থানায় এ বিষয়ে একটি লিখিতও দিয়েছি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দক্ষিণ সুরমা থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) ফজলুর রহামান জানান, গতকাল বেলায়েত হোসেন সবুজ, ফারজানা ও সবুজের বন্ধু শুভ্র চন্দ্রকে সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (আমলী-৫) আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীর আবেদন জানায়। পরে ওই আদালতের বিচারক মোঃ আনোয়ারুল হক তাদের ৩ জনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী রেকর্ড করেন। পরে আটককৃত ৫ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়। মামলা তদন্তাধীন অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত বুধবার দুপুর ২টার দিকে যোহরের নামাজ পড়ে টেকনিক্যাল রোডস্থ  বাসায় খাবার খেতে বসেন। কড়া নাড়ার শব্দ পেয়ে তিনি দরজা খুলেন। দরজা খোলার পর একটি মেয়ে তার পা জড়িয়ে ধরে বলে-‘স্যার আমাকে বাঁচান আমি এই স্কুলের ছাত্রী। আমাকে ৩/৪টা ছেলে তাড়া করেছে।’ তখন অধ্যক্ষ নিচে নেমে ২জন পিয়নকে ডেকে বিষয়টি দেখতে বলেন। তাৎক্ষণিকভাবে আরো ২জন এসে এই মেয়েটির ছবি তুলে নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে অধ্যক্ষের কাছে ২৫ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে ওই মেয়ের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে মর্মে টিভি চ্যানেল ও পত্রিকায় রিপোর্ট করবে বলে হুমকি দেয় অধ্যক্ষকে। এক পর্যায়ে অধ্যক্ষ চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং তাদের তিনজনকে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখেন। বিষয়টি দক্ষিণ সুরমা পুলিশ ফাঁড়িকে জানানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনা স্থলে গিয়ে ৩ জনকে আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। তাদের কাছে ৬টি মোবাইল সেট, ১টি মুভি ক্যামেরা, ১টি সনি মিনি ষ্টীল ক্যামেরা, ২টি মডেম, ২টি পেনড্রাইভ, চ্যানেল সেভেন নামের মনোগ্রামসহ ১টি মাইক্রোফোন পাওয়া যায়।