জেলা প্রশাসক-পুলিশ সুপারদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী খোঁজ নিলেন মৌ’বাজারের চিকিৎসাসেবা, চা শ্রমিকদের সিলেটের কৃষি ও নদী ভাঙ্গনের

49

PM1_bg_166963122কাজিরবাজার ডেস্ক :
ভিডিও কনফারেন্স হলো। প্রধানমন্ত্রী কথা বললেন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে প্রধানমন্ত্রী শুনলেন তাদের সমস্যার কথা, পাশাপাশি সমাধানের পথও দেখালেন তিনি।
ভিডিও কনফারেন্সের একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে শুরু করলাম। সবাই সবসময় তৈরি থাকবেন। আপনারা কে কী কাজ করছেন, সমস্ত ডাটা নিয়ে রেডি থাকবেন। যেকোনো সময় বসব, কথা বলব এবং জিজ্ঞেস করব, যার যার এলাকায় কী কী কাজ হচ্ছে…।’
সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক শেষে হঠাৎ করেই সাংবাদিকদের তলব করে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্স করবেন।
হলভর্তি মন্ত্রিসভার সদস্য এবং সাংবাদিকদের উপস্থিতির মধ্যে আসলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রস্তুত বড় বড় দুটি প্লাজমা টেলিভিশন, প্রজেক্টর আর ভিডিও ক্যামেরা। টেলিভিশন-প্রজেক্টরের পর্দায় সরাসরি যুক্ত রাজশাহী ও সিলেট বিভাগীয় কমিশনার অফিস এবং পাবনা ও মৌলভীবাজার জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা।
শুরুতেই মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করবেন।
দুই বিভাগীয় কমিশনার অফিস ও দুই জেলা প্রশাসন অফিসের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী সূচনা বক্তব্যে বলেন, ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছিলাম। উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডগুলো কোথায় কীভাবে আছে, জনসেবা জনগণের দোরগোড়ায় কতটুকু যাচ্ছে, তা আলোচনা; যে প্রকল্প নিয়েছি তা কী পর্যায়ে আছে, সমস্যা আছে কি-না, প্রতিবন্ধকতা আছে কি-না, সমস্যা থাকলে সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করব।
ভিডিও কনফারেন্সে কমিউনিটি হেলথ সেন্টার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, হাসপাতাল, কৃষি, সেচ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে চাই। আমরা চাই, প্রত্যেকটা মানুষ উন্নতি করুক, ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই।
‘জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব রয়েছে দেশ ও জনগণের প্রতি। সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব কীভাবে পরিকল্পনা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। আজকে এখানে বসে কথা বলতে পারছি, এটাই ডিজিটাল বাংলাদেশের দৃষ্টান্ত।’
জেলা, উপজেলা পর্যায়ে ডিজিটাল সেন্টার করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পোস্ট অফিসগুলোকে ডিজিটাল সেন্টার হিসেবে গড়ে তুলব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা মানুষও গৃহহারা থাকবে না। একটি পরিবারও নিঃস্ব, অসহায় থাকবে না। তাদের পাশে আমরা আছি। একটি শিশুও স্কুলের বাইরে থাকবে না।
এরপর প্লাজমা টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে উঠে মৌলভীবাজার জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা। জেলার সমস্যা, সম্ভাবনা নিয়ে বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক। একে একে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার, জেলা পরিষদ প্রশাসক, পৌর মেয়র, কুলাউড়া পৌরসভা চেয়ারম্যান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মৌলভীবাজারের চিকিৎসা সেবা সম্পর্কে জানতে চাই।’
এজন্য তিনি তলব করেন জেলা সিভিল সার্জনকে। জানতে চান চিকিৎসকরা ঠিকমতো উপস্থিত থাকেন কি-না?
সিভিল সার্জন জেলার স্বাস্থ্যসেবার বিবরণ তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে বলেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রীর তলবে বক্তব্য রাখেন সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক।
সেখানকার একটি নদীর ভাঙন রোধে প্রকল্প গ্রহণে উপস্থিত পানি সম্পদমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা কুলাউড়ার রাস্তাঘাটের ব্যাপারে বলেন, ‘এসব আমরা দেখব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাঝেমধ্যে এভাবে ভিডিও কনফারেন্স করব।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্ত হন পাবনা জেলার ডিসি। জেলার উন্নয়ন ও আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে বক্তব্য রাখেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ জেলায় উন্নয়নের কোনো ঘাটতি নেই। সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী সেখানকার ছিলেন, পাবনার প্রজেক্ট না হলে কোনো বড় প্রজেক্ট আসতো না, আপনারা ভাগ্যবান। এখনও সেখানে মন্ত্রী রয়েছেন।’
এবার ভিডিও কনফারেন্সে আসেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার।
তিনি বলেন, ‘রাজশাহী বিভাগের আট জেলা এখন ধানে পূর্ণ, ঘরে ঘরে নবান্নের উৎসব, রূপপুর পারাণবিক কেন্দ্র বাস্তবে রূপ পাচ্ছে।’
রাজশাহী মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হত্যাকারীদের গ্রেফতারসহ বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন বিভাগীয় কমিশনার।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আনন্দিত প্রশাসনের কর্মকর্তারাও।
২০১০ সাল থেকে রাজশাহীতে ডিসির দায়িত্ব পালনের পর বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে কাজ করে যাওয়ার তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনার সঙ্গে কথা বলে আজকে আমার জীবন ধন্য। এটা ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবরূপ, আপনার মাধ্যমে কথা বলতে পারলাম, এটি জীবনের সবচেয়ে বড় সফলতা।’
এ সময় রাবি শিক্ষক হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
এরপর প্রধানমন্ত্রী যখন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে রাজশাহী পুলিশ কমিশনারের বক্তব্য শুনছিলেন তখন ভিডিও কনফারেন্সে বিচ্যুতি ঘটে।
তাৎক্ষণিকভাবে কনফারেন্সে যোগ দেয় সিলেট বিভাগীয় কমিশনার অফিস। ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার ‘বিরল’ সুযোগ পেয়ে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান সিলেট বিভাগীয় কমিশনার।
‘ব্যস্ততার মধ্যেও ভিডিও কনফারেন্স চালিয়ে যাওয়া হলে অনুপ্রাণিত হবো’, জানান সিলেট বিভাগীয় কমিশনার।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রহত্যার ঘটনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী সিলেট পুলিশ কমিশনারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চান। প্রধানমন্ত্রী কারো মুখ দেখে নয়, বরং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে নিজেও খুশী প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুব ভাল লাগল আপনাদের সঙ্গে কথা বলে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই ভিডিও কনফারেন্স চলমান থাকবে। আগামীতেও করব। মন্ত্রীদের বলব, আপনারাও করেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে এখানে বসে আলাপ-আলোচনা করতে পারছি।
আর্থ-সামাজিক দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আরো এগিয়ে যাবে জানিয়ে শেখ হাসিনা ভিশনারি পুরস্কার পাওয়ার কথা তুলে ধরে বলেন, সবাই একসঙ্গে কাজ করছি। দেশের জনগণ ভোট দিয়েছে বলে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি। এজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা কাজ করছেন তাদের কাছে অনুরোধ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই, বাংলাদেশের মানুষ ভাল থাকুক, সুখে থাকুক উন্নত জীবন পাক, এটাই আমাদের কামনা।’
কনফারেন্স শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী মাসে অন্তত দু’দিন জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি কথা বলার পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ের সমস্যাগুলো জেনে চাইলে তাৎক্ষণিক নির্দেশনাও দিতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই (অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন) প্রকল্প থেকে এই ভিডিও কনফারেন্সে সহায়তা দেওয়া হয়।
বিভাগীয় কমিশনারের অফিস ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ভিডিও কনফারেন্সের ব্যবস্থা আছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ পর্যন্ত ২২৫ বার ভিডিও কনফারেন্স করা হয়েছে।