শাবিতে সংঘর্ষের ঘটনা ॥ আরো ৪ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী গ্রেফতার, ৩টি মামলায় আসামী ৬২০

55

স্টাফ রিপোর্টার :
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্দুক যুদ্ধের ঘটনায় আরো চার ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে এ ঘটনায় ৩১ জনকে গ্রেফতার করা হলো।
গ্রেফতারকৃতরা হলো-গণেন্দ্র চন্দ্র দাস, বিদ্যুৎ দাস, নারায়ণ চন্দ্র দাস ও সুমন মিয়া। তারা সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র বলে জানিয়েছেন জালালাবাদ থানার ওসি আখতার হোসেন। তিনি জানান, গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে নগরীর বাগবাড়ি এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
আরো দু‘টি মামলা দায়ের : বন্দুক যুদ্ধের ঘটনায় গতকাল শনিবার আরো দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জালালাবাদ থানায় এ মামলা দু’টির একটি করা হয়েছে নিহত সুমন চন্দ্র দাসের পরিবারের পক্ষ থেকে এবং অপরটি করেছেন শাবিপ্রবি প্রশাসন। এর আগে শুক্রবার ছাত্রলীগের ২৫০ নেতাকর্মীকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন জালালাবাদ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শফিক। শাবিপ্রবির সংঘর্ষের ওই ঘটনায় এ নিয়ে তিনটি মামলা দায়ের করা হলো। গত শনিবার নিহত সুমনের পরিবারের পক্ষ থেকে তার মা প্রতীমা দাস ১২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামলা দায়ের করেন। এছাড়া, শাবিপ্রবির রেজিষ্ট্রার ইশফাকুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা ২৫০ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন। গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় মামলা দুটি রেকর্ড করে জালালাবাদ থানা পুলিশ। জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন মামলা দুটি দায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কেন্দ্রীয় সভাপতির বক্তব্য প্রত্যাখ্যান উত্তমের : সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগের দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শাবি ছাত্রলীগ নেতা উত্তম কুমার দাশ। সংঘর্ষে নিহত ছাত্রলীগ কর্মী সুমন চন্দ্র দাশ ও সংঘর্ষ নিয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতির দেয়া বক্তব্য বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক বলে উল্লেখ করে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছেন উত্তম।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বৃহস্পতিবার সংঘটিত অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মেধাবী ছাত্র ও ছাত্রলীগকর্মী আমার রাজনৈতিক অনুজ সুমন চন্দ্র দাসের মৃত্যুতে সিলেটসহ সারাদেশ যখন শোকাহত তখন আমার প্রাণের সংগঠনের অন্যতম অভিভাবক বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ তার আত্মার মাগফেরাত কামনার পরিবর্তে, তার পরিবারের প্রতি সমবেদনার পরিবর্তে তার সমালোচনা করেছেন যা ছাত্রলীগের জন্য অত্যন্ত বেদনার। এমনকি গত ২৪ সেপ্টেম্বর জামায়াত-শিবির কর্তৃক আমার এক পা কর্তন হওয়ার পর কোন প্রকার সমবেদনা না জানিয়ে আমাকে অন্যদের কুমন্ত্রণায় দোষারোপ করছেন ।’
তিনি বলেন, গত বছরের ৮ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পর সামসুজ্জামান চৌধুরীর উপর হামলার মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাকে ১ বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। যার মেয়াদ গত ২৩ জুন শেষ হয়েছে। এখন আমি মাস্টার্স ২য় সেমিস্টারের নিয়মিত ছাত্র। আমি নেতৃবৃন্দের কাছে জানতে চাই, যেখানে সামসুজ্জামান চৌধুরীর উপর হামলার কারণে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হল সেখানে গত ২০ নভেম্বর আমার ভাই সুমন চন্দ্র দাসের হত্যার ঘটনায় কেন কাউকে বিশ্ববিদ্যালয় বা সংগঠন থেকে এখন পর্যন্ত বহিষ্কার করা হলো না? বরং ওই খুনী কমিটির সকল ঘাতকদের বাঁচাতে আমার প্রিয় সংগঠনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিপদগামী শিক্ষক মরিয়া হয়ে ওঠেছেন।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার শাবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্র“পে বন্দুক যুদ্ধে বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতা সুমন চন্দ্র দাস নিহত ও অন্তত ১৫ জন আহত হন। এ ঘটনায় শুক্রবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন,‘শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) বৃহস্পতিবার দুইপক্ষের মধ্যে যে সংঘর্ষ হয়েছে তাতে ছাত্রলীগ জড়িত নয়। ছাত্রলীগের কেউ এ সংঘর্ষে জড়িত ছিল না। সুমন দাস নামের যে ছাত্র মারা গেছে সেও ছাত্রলীগের কেউ নয়। কিছু গণমাধ্যম সংঘর্ষের ঘটনার সাথে ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্রলীগকে জড়ানোর চেষ্টা করছে।’
প্রকাশ্যে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনাকে ধাপাচাপা দিতে গণমাধ্যমের উপর দায় চাপানো ও নিহত হওয়ার পর দলের কর্মীকে স্বীকৃতি না দেওয়ার ঘটনায় সিলেট ছাত্রলীগে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। কিন্তু দলীয় শাসনের কঠোরতায় কেউই মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।