পর্যটন কেন্দ্র জাফলং এখন ধূলোর রাজ্য !

52

jaflong photo 18-11-2014গোয়ইনঘাট থেকে সংবাদদাতা :
অপার সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি প্রকৃতি কন্যা জাফলংয়ে ভাঙ্গা রাস্তা ও ধূলোয় ধূসরতার কারণে দিনে দিনে পর্যটক বিমুখ হয়ে পড়ছে। ফলে আর্থিক লোকসানের দিকে পতিত হচ্ছে এই এলাকার পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রায় সহস্রাধিক ব্যবসায়ী। বিভিন্ন উৎসব আনন্দ দিনে লাখো পর্যটকের পদচারণায় পর্যটন কেন্দ্র জাফলং মুখরিত থাকলেও রাস্তাঘাটের এমন বেহাল দশার কারণে ভ্রমণ আনন্দ যেন তাদের বিষাদে পরিণত হয়। অথচ সিলেটর সীমান্ত জনপদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম রাস্তা হচ্ছে সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক। সিলেট থেকে জাফলং পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার রাস্তার অধিকাংশই প্রায় খানাখন্দে ভরা। বিশেষ করে জাফলংয়ের বল¬াঘাট থেকে জৈন্তাপুর উপজেলা সদর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দূরত্বের এই রাস্তার অবস্থা খুবই নাজুক। রাস্তার পিচ উঠে অনেক জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। রাস্তাটি এখন অনেকটাই মরণ ফাঁদে পরিণিত হয়েছে। তারপরও এই রাস্তা দিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিনই চলাচল করছে পর্যটক, কয়লা ও পাথরবাহী প্রায় কয়েক সহস্রাধিক গাড়ি। প্রতিনিয়তই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পর্যটক, কয়লা ও পাথরবাহি গাড়িসহ সাধারণ মানুষের চলা ফেরায়। বর্তমানে রাস্তাটির এমন দশা যে যানবাহন চলাচলের জন্য প্রায় অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। অপরদিকে জাফলংয়ের তামাবিল শুল্ক ষ্টেশন এলাকা থেকে শুরু করে মামার বাজার বল্ল¬াঘাট পিকনিক স্পট পর্যন্ত সর্বত্রই যেন ধূলোয় ধূসর। বর্তমান অবস্থায় দিনের বেলাতেই হেড লাইট জালিয়ে যান বাহন চলাচলের উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরদিকে এই এলাকায় চলাচলের ক্ষেত্রে পর্যটকসহ সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের তো শেষই নেই।
সরজমিন পরিদর্শন কালে দেখা গেছে, ভারত থেকে এলসির মাধ্যেমে আমদানীকৃত পাথর রাখার জন্য তামাবিল শুল্ক ষ্টেশনের আশপাশ এলাকায়  মহা সড়কের পাশে ডাম্পিং স্থাপন করা হয়েছে। সেই ডাম্পিং থেকে ট্রাকযোগে বিভিন্ন ক্রাশার মিলে পাথরগুলো সরবরাহ করার সময় ডাস্ট বা ধূলার সৃষ্টি হচ্ছে। অপরদিকে মামার বাজারের মোহাম্মদপুর ও গুচ্ছগ্রাম এলাকায় মহাসড়কের দুপাশে স্থাপিত ছোট ছোট ক্রাশার মেশিন গুলো থেকে পাথর ভাঙ্গার সময় সেখান থেকে নির্গত ডাস্ট ধূলোর সৃষ্টি হয়ে রাস্তায় এসে পড়ছে। মামার বাজার ও বল্লাঘাট এলাকাতে একই অবস্থা বিরাজ করছে। এইসব ক্রাশার মিলের ডাষ্ট ও রাস্তার ধূলোর কারণেই চলাফেরার ক্ষেত্রে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে ক্রমশই ভাটা পড়তে শুরু করেছে জাফলংয়ে পর্যটকের সমাগম। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায় ধস নামতে শুরু করেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের সহকারি পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান জানান, পাথর ভাঙ্গার জন্য ক্রাশর মেশিন স্থাপন করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে তাদের নীতিমালা অনুযায়ী নির্দিষ্ট জোনে ক্রাশার মেশিন স্থাপন করতে হবে। এরপর পাথর ভাঙ্গার সময় পানি ব্যবহার করতে হবে যাতে করে পাথর ভাঙ্গার সময় সেখান থেকে নির্গত ডাস্ট উড়ে পরিবেশের ক্ষতি করতে না পারে। পরিবেশ অধিদপ্তরের নীতিমালায় এমন কিছু বাধ্যবাধকতা থাকলেও জাফলং এলাকার ক্রাশার মেশিন মালিকরা এ নিয়মের কোন পরোয়া করছে না। তারা তাদের ইচ্ছে মতো পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি বিহীন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় রাস্তার পাশ ঘেষে যেখানে সেখানে ক্রাশার মেশিন স্থাপন করে পাথর ভাঙ্গছেন।  ফলে এ থেকে নির্গত ডাস্ট উড়ে এসে রাস্তার উপর পড়ছে। এবং রস্তায় যান বাহন চলার কারণে ও ট্রাকযোগে বিভিন্ন ক্রাশার মিলে পাথর সরবরাহ করার সময় ডাস্ট বা ধূলার সৃষ্টি হচ্ছে। যার দরুণ এই এলাকার পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডাঃ সালেহ আহমদ জানান, ভাঙ্গা পাথরের ডাস্ট বা ধুলো বালি জনস্বাস্থ্যর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পাথর ভাঙ্গার ডাস্ট বা ধূলোবালি নাক মুখ দিয়ে মানুষের দেহে প্রবেশ করে প্রথমে শাস কষ্ট, কাশি, এলার্জি, সিলোকোসি এবং পাকস্থলী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম জানান, জাফলং হচ্ছে দেশের অন্যতম একটি পর্যটন এলাকা সেক্ষেত্রে এই এলাকায় আগত পর্যটকরা যাতে কোন রকম ভোগান্তিতে না পড়েন এদিকটা বিবেচনা করতে হবে। পাশাপাশি জাফলং পাথর কোয়রী এলাকায় অবস্থিত তাই ব্যবসায়ীদের স্বার্থে রাস্তা মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এবং এলাকার সংখ্য গরিষ্ট মানুষ যেহেতু পাথর কোয়ারীর সাথে সম্পৃক্ত থেকে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে তাই তাদেরর উচিত পাথর ভাঙ্গার ক্রাশার মেশিন গুলো মহা সড়ক সংলগ্ন জায়গায় স্থাপন না করে মহাসড়ক থেকে দূরবর্তী নির্দিষ্ট একটি জায়গায় পরিকল্পিত জোন ঘোষণা করে সেখানে মিল স্থাপন করা।