ফুটবল একাডেমী ও ক্রীড়া কমপ্লেক্স উদ্বোধনকালে অর্থমন্ত্রী ॥ ‘জাম্বুরা’ দিয়ে ফুটবল খেলার এ দেশ আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছবে ॥ সকল ক্ষেত্রে দেশ এগিয়ে চলেছে-বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমদ

43

স্টাফ রিপোর্টার :
দেশের ফুটবলের উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে সবধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট শহরতলীর শাহপরান বাইপাসস্থ বিকেএসপিতে বাংলাদেশ প্রথম ফুটবল একাডেমির উদ্বোধন করেন।21
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ। আমরা যা করতে চাই, তা-ই পারি। এদেশে দক্ষ জনশক্তি রয়েছে। এই জনশক্তিকে কাজে লাগাতে সরকার বদ্ধপরিকর।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের গ্রামে-শহরে ফুটবল খেলা হয়। এককালে জাম্মুরা দিয়ে ছোটরা ফুটবল খেলতো। সুতরাং, এদেশের ফুটবল একদিন আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাবে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আজ দেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য একটি মাইলফলক, এক ঐতিহাসিক দিন। জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পাশাপাশি সরকার দেশের খেলাধূলাকে এগিয়ে নিতে অত্যন্ত তৎপর। তারই ধারাবাহিকতায় ফিফা’র সার্বিক সহযোগিতা আর বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টায় দেশের প্রথম ফুটবল একাডেমি গড়ে উঠেছে। এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘এই একাডেমি শুধু সিলেটের নয়, এটা সারা বাংলাদেশের। এখন দেশের ফুটবলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। আর এগিয়ে নিতে যা যা প্রয়োজন, তার সবই করবে সরকার।’
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ বলেন, ‘আমরা দেশের হাজার হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে পারি। আমাদের মাথাপিছু আয় ১২শ’ মার্কিন ডলার। তাহলে আমদের ফুটবলের জন্য কেন আমরা কয়েক কোটি টাকা খরচ করতে পারবো না?’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছে। মানুষ ভাবতে শুরু করেছে- বাংলাদেশ এখন আর স্বল্পউন্নত দেশ নয়, এখন উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হচ্ছে। ৯৬-এর পর থেকে প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্রীড়া জগতে বিপ্লব শুরু হয়েছে।’ ক্রিকেটের মতো ফুটবলকেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
বাফুফে সভাপতি সালাউদ্দিনের কথা উলে¬খ করে মন্ত্রী বলেন, ‘২০ কোটি টাকা হলে দেশের ফুটবলে ব্যাপক উন্নতি সম্ভব হবে। আমি অর্থমন্ত্রীকে এই টাকা বাফুফেকে দিতে অনুরোধ করবো।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার বলেন, ‘ফুটবল হচ্ছে আমাদের প্রাণের খেলা। আমরা ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, এগিয়ে নেব। ক্রীড়াক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের নামও আমরা উজ্জ্বল করবো।’
ফিফা’র রিজিওন্যাল ডেভলাপমেন্ট অফিসার ড. শাজি প্রভাকরণ বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের জন্য একটি ‘আশ্চর্য্যময় ঐতিহাসিক’ দিন। বাংলাদেশ সরকার ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে সহযোগিতা করছে। ফুটবল একাডেমির যাত্রা শুরু হয়েছে এটি একটি ভাল পদক্ষেপ।’
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আওয়ামীলীগ সরকার সব ক্ষেত্রে কাজ করছে। যোগ্য লোকদের কাজে লাগানো হচ্ছে। ফলে দেশ অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে।’ দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে এই অগ্রগতির ধারা কেউ যাতে নস্যাৎ করতে না পারে সেজন্য সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
দেশের গ্রামে-গঞ্জে সর্বত্র এধরণের সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দিতে সরকারকে আরো সহযোগিতার আহ্বান জানান প্রভাকরণ। তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে ভাল খেলোয়াড় উঠে আসবে। যুবকরা আলোর পথ দেখবে। ভালো খেলোয়াড় তৈরি হলে দেশের ফুটবল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এগিয়ে যাবে।’ এক্ষেত্রে ফিফা’র সবধরণের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান এই কর্মকর্তা। তিনি এই ফুটবল একাডেমিতে ‘আর্টিফিসিয়াল টার্ফ’ বসানোর জন্য বাফুফেকে সহায়তা করার ঘোষণা দেন।
অনুষ্ঠানে ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, বাফুফে’র সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদি, বাদল খান এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার সাজ্জাদুল হাসান, জিআইজি মিজানুর রহমান  প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে মন্ত্রী সিলেট নগরীর মেন্দিবাগস্থ জেলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স এর উদ্বোধন করেন। একই সাথে জেলা ক্রীড়া সংস্থার ব্যবস্থাপনা ও রূপালী ব্যাংক লিমিটেড এর আর্থিক সহযোগিতায় ৩৩তম জাতীয় ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন। ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় দেশের সবক’টি জেলা থেকে প্রায় ৬৯টি দল অংশ গ্রহণ করছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জাতীয় ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সভাপতি রুবাবা দৌলা। উপস্থিত ছিলেন প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি, বীরেন শিকদার, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া, রূপালি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহমদ আল-কবির, বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, বিসিবি পরিচালক শফিউল আলম নাদেল, সাবেক সদস্য সদস্য জেবুন্নেছা হক, মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল (সুনু মিয়া) প্রমুখ।n-1 (2)
দীর্ঘ দেড় বছরে নির্মিত সিলেট ক্রীড়া কমপ্লেক্সে তৈরী হয়েছে খেলোয়াড়দের জন্য আন্তর্জাতিক মানের সুইমিং পুল। রয়েছে জিমনেসিয়া, লংটেনিস- ব্যাডমিন্টন কোড, কাবাডি মাঠ, হোস্টেল ও অভ্যন্তরীণ সড়ক।
জাতীয় ক্রীড়া প্রকৌশলী হেদায়েতুল ইসলাম মির্জা বলেন- প্রায় দেড় বছর আগে শুরু হওয়া সিলেট ক্রীড়া কমপ্লেক্সের কাজ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে সম্পন্ন হয়। চার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরে কাজ করে। আর শেষ হতে লাগে ২৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। পরবর্তীতে সর্বমোট খরচ দাঁড়ায় ২৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
প্রথম কর্মসূচিতে- জিমনেসিয়া, হোস্টেল, লং-টেনিস, কাবাডি মাঠ, অভ্যন্তরীণ সড়কের জন্য ১২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা অনমোদিত ব্যয় ধরলেও কাজ শেষ হয় ১২কোটি ৬০ লাখ টাকায়। আর দ্বিতীয় কর্মসূচিতে সুইমিং পুল, সীমানা প্রাচীর ও জমি অধিগ্রহণে ১২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা অনুমোদিত ব্যয় ধরা হলেও কাজ শেষ হতে লাগে ১২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। তবে ভূমির মালিক সরকার থাকায় অধিগ্রহণে অর্থ খরচ করতে হয়নি।