ফসলি জমি বালিতে ভরাট, মাছের বংশ ধ্বংস হচ্ছে এ-বিপর্যয় ঠেকাবে কে ?

66

॥ নেছার আহমদ নেছার ॥

সুনামগঞ্জ জেলার ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা সমূহের মধ্যে যেমন (হাওর, নদী, খাল, বিল) সেচ যন্ত্র, কারেন্টের জালের অবাধে ব্যবহার এবং কীটনাশক ঔষধের ব্যবহারজনিত কারণে মাছের বংশ ধ্বংস হয়ে  যাচ্ছে। ৮০%  ভাগ মাছের এখন পাওয়া দুষ্কর।
অপরদিকে অতিবৃষ্টিতে ও পাহাড়ি ঢলের কারণে মারাত্মকভাবে বালি ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে এবং পলিমাটির দ্বারা কৃষি  জমি ও হাওর  খাল বিল ভরাটের ফলে  প্রাকৃতিক বিপর্যয় দিন দিন বেড়েই চলছে। ধান মাছের জন্যে একদিনের প্রসিদ্ধ এই অঞ্চলে  এখন ধানের জমি তরিতরকারীর ফসলী জমি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় ধানের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে।
অপরদিকে কীটনাশকের অতি ব্যবহার ও অবাধে কারেন্টের জালের ব্যবহারে মাছের বংশ ধ্বংস হচ্ছে। মাছের বংশ ধ্বংস হওয়ার আরও একটি কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হচ্ছে যে বালি ও পলিতে দিন দিন হাওর, নদী, খাল, বিল, ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে মাছের আবাসন সংকট দেখা দিয়েছে। তাই মাছ আগের মত নেই। অনেক মাছের বংশ  ধ্বংস হয়ে গেছে। আরও অনেক প্রজাতির মাছ ধ্বংস হওয়ার পথে। মাছ খেয়ে অভ্যস্ত অনেক বয়স্ক লোক মাছ খেতে চাইলে-তাকে সেই মাছ খাওয়ানো সম্ভব হয় না। কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না অনেক মাছের  অস্তিত্ব।
দিন দিন প্রাকৃতিক এই বিপর্যয় নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই। অবাধে শুষ্ক মৌসুমে সেচ যন্ত্র চালিয়ে বিল, খাল শুকিয়ে মাছ ধরার ফলে সেখানে মাছ থাকে না। তাই মাছের বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে না। সেচ যন্ত্র বন্ধ করতে কারো উদ্যোগ কখনই চোখে পড়ে না। অপর দিকে অবাধে কারেন্টের জাল ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকরী কোন ভূমিকা নেই বললেই চলে। প্রশাসন অবৈধ অর্থ লোভে এদের ব্যবহার অবাধ করে দিচ্ছে। ফলে কারেন্টের জালের অবাধ ব্যবহারে মাছের বংশ ধ্বংস হচ্ছে সেদিকে কারো খেয়াল নেই। সচেতন মানুষকে এ নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার কথা বলতে শোনা যায়। কিন্তু প্রশাসন বা সচেতন মহলের দ্বারা এর কোন প্রতীকার ও পদক্ষেপ নিতে শুনা যায়নি। হাওরপারের সচেতন মানুষগুলো এক হলে এবং প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সেচ যন্ত্রের ব্যবহার ও কারেন্টের জালের ব্যবহার বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে ঢলের পানিতে আশংকাজনক ভাবে বালি ও পলি দ্বারা ভরাট প্রক্রিয়াটি বন্ধ করতে বা তার প্রতিকার করতে সচেতন নাগরিকের পাশাপাশি সরকারের বিশেষ উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
যেমন যে সকল নালা খাল ও নদী দিয়ে ভারতের পাহাড় থেকে অবাধে বালি আসে সেই বালিগুলি যাতে করে ফসলি জমি ভরাট করে না দিতে পারে তার প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকার প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসাবে অর্থ খরচ করে বালি গুলি যাতে একটি নির্দিষ্ট স্থানে জমায়েত হয়, সে ব্যবস্থা করতে পারে। জমায়েতকৃত বালি বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ টাকা আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় স্থান ভেদে কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে ফসলি জমির বালি ভরাট রোধ করতে পারে। পাহাড় থেকে অতি বৃষ্টিতে ঢলের সাথে বালি আসার খাল নদী গুলি চিহ্নিত করে কি ভাবে পদক্ষেপ নেয়া হলে সরকারের আয় হবে এবং কৃষকদের ফসলি জমি রক্ষা পাবে তার সময় উপযোগী বাস্তব পদক্ষেপ নেয়া অতি আবশ্যক।
নতুবা দিন দিন সুনামগঞ্জ অঞ্চলের অধিকাংশ জমিই বালি দ্বারা ভরাট হয়ে যাবে। ধানের বা ফসলের উৎপাদন শক্তি হারিয়ে যাবে। কৃষকদের মধ্যে হাহাকার যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি জাতীয় উৎপাদন হ্রাস পাবে। জানা গেছে বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার ধর্মপাশা, ছাতক থানার  সীমান্ত পাহাড় থেকে ঢলের পানির সাথে বালি চলে আসার উৎস মুখগুলি চিহ্নিত করা প্রয়োজন। তারপর পদক্ষেপ নিতে হবে।
তাহিরপুর উপজেলার প্রায় ২০টি ছড়ার মাধ্যমে বালি এসে ভরাট করছে ফসলি জমি। তেমনি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলারও প্রায় ১০/১২টি ছড়ার মাধ্যমে পাহাড় থেকে বালি ঢলের পানির সাথে অনাকাক্সিক্ষতভাবে চলে আসে। জিনারপুর ও ডলুড়া এলাকার নদী দিয়ে বেশী করে বালি এসে ফসলি জমি সহ বৃহৎ করছার হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে দিচ্ছে। সাথে করে পলি ও আসছে। পাহাড়ী ছড়ার সাথে সম্পৃক্ত সকল খাল বিল, হাওর গুলি বালিতে ভরাট হয় খুব বেশী। কেননা অতি বৃষ্টিতে পাহাড়ি পানি দ্রুত নেমে আসে বিরাট গর্জন করে ছড়া দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে।
বালিগুলি প্রায়ই ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফসলি জমিতে পড়ে থাকে। কিছু কিছু এলাকায় দেখা গেছে বালির চেয়ে পলি মাটির পরিমাণ বেশী হয়। সেখানে বালি ভরাট অনেক সময় ফসল উৎপাদনে ব্যঘাত সৃষ্টি করতে পারে না। ঠিকই ফসল জন্মে। যেখানে পাহাড়ি ঢলের ফলে শুধু বালির পরিমাণ বেশি এসে ফসলি জমিতে পড়ে, সেখানে ফসল হয়না। কাজেই সুনামগঞ্জে সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাহাড় থেকে যে সকল ছড়া দিয়ে অবাধে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা গুলিতে বালি এসে ফসলি জমি নষ্ট করে দেয় তা চিহ্নিত করা জরুরী। এবং সময় উপযোগী বাস্তব পদক্ষেপ নিতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এগিয়ে আসা অপরিহার্য। নতুবা একদিকে মাছের বংশ অপর দিকে বালি ভরাট কৃষকদের মধ্যে দিন দিন মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসবে। অনাগত কৃষি জীবন হবে ধ্বংস। হারিয়ে যাবে বিপুল পরিমাণ মাছের অস্তিত্ব, সংকটময় হবে কৃষকের জীবন।