ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন ॥ উলফার কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে ২০ লাখ টাকা দিয়েছে জামায়াত ॥ গোপন বৈঠকে হাজির বিএনপি নেতারাও !

44

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ভারতের আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) কাছ থেকে অস্ত্র কেনার চেষ্টা করছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। এজন্য জামায়াতের একটি প্রতিনিধিদল উলফা নেতাদের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করে অগ্রিম ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। বৈঠকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির কয়েকজন প্রতিনিধিও যোগ দেন।
ভারত সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসতে অনাগ্রহী উলফার পরেশ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন অংশের কাছ থেকে জামায়াত এই অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে।
সম্প্রতি ভারতের একটি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার ভারতের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ার অনলাইন সংস্করণে এ খবর প্রকাশিত হয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, এ তথ্যটি এমন একসময় উদ্ঘাটিত হলো, যখন ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যে ‘ইসলামী’ সন্ত্রাসীদের যোগসূত্র গড়ে ওঠার সন্ধান পেয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, সম্প্রতি আসামের গুয়াহাটি বিএসএফ ফ্রন্টিয়ার সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত যৌথ বাহিনীর একটি সভায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার ওই প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। সভায় বিএসএফ, সিআরপিএফ, সেনাবাহিনী, আসাম পুলিশ অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা ছিলেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের একটি কপি তারা পেয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ‘গত মাসের ১৫ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামী, বিএনপির কয়েকজন নেতা এবং উলফার (পরেশ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন অংশ) দুজন প্রতিনিধির মধ্যে একটি গোপন বৈঠক হয়। অস্ত্রচুক্তির লক্ষ্যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার মধুটিলা ইকোপার্কে। বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিরা উলফার কাছে হালকা আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ ক্রয়ের কথা জানান। বৈঠকে আলোচনা শেষে তারা উলফার দুই প্রতিনিধিকে অস্ত্র কেনার জন্য ২০ লাখ টাকা পরিশোধ করেন।’
টাইমস অব ইন্ডিয়ার মতে, ‘বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য শেখ হাসিনা সরকার দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেন। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত ২৯ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর প্রধান মতিউর রহমান নিজামীকে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে নৃশংস কর্মকাণ্ডের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে। আর জামায়াতের এই নেতা নিজামী ছিলেন ২০০১-০৬ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের একজন মন্ত্রী।
উলফার সঙ্গে জামায়াতের অস্ত্র কেনাবেচার খবরের বিষয়ে জানতে চাইলে আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গাগৈ টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘তারা সবাই মাসতুতো ভাই…। তারা হতে পারে উলফা, হতে পারে এনডিএফবি (ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অব বোড়োল্যান্ড) বা কোনো জেহাদি গোষ্ঠী। তাদের পার্থক্য কেবল সংগঠনের নামেই। কিন্তু তারা সবাই পরস্পরকে সহায়তা করে।’
গোয়েন্দা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ‘ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ তিন বছর ধরে সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা ঠেকাতে প্রাণঘাতী নয়- এমন অস্ত্র ব্যবহারের নীতি মেনে চলছে। দুই দেশের মধ্যে সুদৃঢ় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নের পথে এ কৌশল প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সীমান্তের উভয় অংশে অপরাধীদের কার্যকলাপের কারণে বিএসএফের কর্মীরা এ কৌশলের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।’
গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে অপরাধীদের এ অবৈধ সীমান্ত পারাপার বেশি সংঘটিত হচ্ছে মেঘালয়ের পশ্চিম গারো পাহাড় অঞ্চলের তুরা ও গঙ্গা মন্দির এলাকা দিয়ে।