যতদিন আছি, একতা নিয়েই থাকব

9

কাজির বাজার ডেস্ক

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ঐক্যের মধ্যদিয়ে এই সরকারের জন্ম। ছাত্ররা জুলাই ঘোষণাপত্র দেয়ার দাবি তুলেছে। ঐক্যবদ্ধভাবে এটা করতে না পারলে এর উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। এমন হলে এটার দরকারও নেই। এজন্যই আজ সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসা। সবাইকে দেখে সাহস পাচ্ছি। আমি যতদিন আছি, এই একতা নিয়েই থাকব।
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সর্বদলীয় বৈঠকের শুরুতে এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। বিকেল ৪টায় এই বৈঠক শুরু হয়।
বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় নাগরিক কমিটি, গণ অধিকার পরিষদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, গণতন্ত্রের মঞ্চ, জাতীয় গণফ্রন্ট, খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন অংশগ্রহণ করেছে।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনাদের সবার সঙ্গে দেখা হলে, বসতে পারলে আমার খুব ভালো লাগে। সাহস পাই। কারণ এই সরকারের জন্ম হয়েছে ঐক্যের মধ্যদিয়ে। যখন আশপাশে আপনাদের দেখি না তখন নিজেকে দুর্বল মনে হয়। যখন আবার আপনাদের দেখি তখন মনে হয় সবাই এক আছি। একতাতেই আমাদের জন্ম, একতাতেই আমাদের শক্তি।
তিনি বলেন, মাঝখানে একদিন ছাত্ররা এসে বলল তারা একটি ঘোষণাপত্র দেবে। প্রোক্লামেশন দেবে। আমি বুঝতে চাইলাম কি প্রোক্লামেশন। তারা বলল। আমি বললাম এটা হবে না। আমার চাওয়াটাও ঠিক হবে না, তোমাদের করাটাও ঠিক হবে না। তোমরা যদি আবার ৫ আগস্টে ফেরত যেতে চাও, তাহলে ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে হবে। ৫ আগস্টের অনুভ‚তি ছিল একতার অনুভ‚তি। তোমরা যদি করতে চাও সবাইকে নিয়ে করতে হবে। যেভাবে একতাবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করেছিলে, সেভাবেই একতাবদ্ধ হয়ে এটা করতে হবে। তারা আমার কথায় খুব একটা খুশি হয়নি। পরে অবশ্য তারা বুঝতে পারলো একতাবদ্ধ হয়েই ঘোষণাপত্র দিতে হবে। সেখান থেকেই এই আলাপ শুরু।
ঘোষণাপত্রের যা আছে খসড়ায়
জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায় এই ভ‚খÐের মানুষের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যুগের পর যুগ সংগ্রামের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়। পাকিস্তান আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা অর্জন, ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার কথা তুলে ধরা হয়।
এরপরের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে কীভাবে ছাত্র-জনতার উত্তাল গণবিক্ষোভ গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয় এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান সে প্রসঙ্গও রয়েছে জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায়।
খসড়ায় বলা হয়, ‘…আমরা, ছাত্র-জনতা সেই অভিপ্রায় বলে আত্মমর্যাদা, সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারের যে আদর্শ মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে সেই আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য সার্বভৌম জনগোষ্ঠী হিসেবে নিজেদের সংগঠিত করিলাম। আমরা, প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ ভেঙে দেওয়ার আহবান জানাচ্ছি এবং ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও অখÐতা রক্ষার্থে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠনের আহŸান জানালাম। আমরা সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি রোধ নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্র্বতী সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করবে এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করলাম।’
খসড়ায় আরও বলা হয়, ‘আমরা ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারকে লালন করার দলিল ১৯৭২ সালের সংবিধান সংশোধন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করিলাম। আমরা জুলাই গণ অভ্যুত্থানকালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সংগঠিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুটপাটের অপরাধগুলোর উপযুক্ত বিচার করা হবে, এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করিলাম।’
এতে আরও বলা হয়, ‘আমরা এই ঘোষণা প্রদান করলাম যে ১৯৭২ এবং ১/১১ কালের রাজনৈতিক বন্দোবস্তের পরিবর্তন ঘটানোর আমাদের একটি নতুন জনতন্ত্র (রিপাবলিক) প্রয়োজন, যা রাষ্ট্রে সকল ধরনের নিপীড়ন, শোষণ ও বৈষম্যর অবসান ঘটাবে এবং এ দেশের তরুণ সমাজের প্রত্যাশাকে ধারণ করতে পারবে। আমার এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করিলাম যে, এই ঘোষণাপত্রকে উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি গত ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে চেয়েছিল। এ ঘোষণাপত্র নিয়ে তখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা তৈরি হয়। হঠাৎ ঘোষণাপত্রের বিষয়টি কেন সামনে আনা হলো, এর প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠে। অন্তর্র্বতী সরকারের প্রেস উইং তখন এ উদ্যোগের সঙ্গে সরকার সম্পৃক্ত নয় বলে উল্লেখ করেছিল।
অবশ্য পরে ৩০ ডিসেম্বর রাতে জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানিয়েছিলেন, অন্তর্র্বতী সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ওই রাতে বৈঠক করে ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ (ঐক্যের জন্য যাত্রা) কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। ওই কর্মসূচি থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের জন্য অন্তর্র্বতী সরকারকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
ওই সময়সীমা শেষ হওয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চ‚ড়ান্ত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।