কাজির বাজার ডেস্ক
ইসরায়েলি হামলার প্রথম ৯ মাসে গাজায় নিহতের প্রকৃত সংখ্যা উপত্যকাটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানের চেয়ে প্রায় ৪১ শতাংশ বেশি। গতকাল বৃহস্পতিবার চিকিৎসাবিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই অনুমান করা হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। জবাবে গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েলে। শুরু থেকে এই যুদ্ধে কত ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে।
হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত আগের ৯ মাসে উপত্যকাটিতে যুদ্ধে ৩৭ হাজার ৮৭৭ জন নিহত হয়েছে।
কিন্তু ল্যানসেট গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, একটি অনলাইন জরিপ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত মৃত্যুসংবাদের ভিত্তিতে ‘ক্যাপচার-রিক্যাপচার’ পরিসংখ্যানপদ্ধতি ব্যবহার করে দেখেছে, যুদ্ধের প্রথম ৯ মাসে গাজায় প্রায় ৫৫ হাজার ২৯৮ থেকে ৭৮ হাজার ৫২৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজায় নিহতের বিষয়ে এই গবেষণার সবচেয়ে ভালো অনুমানটি হলো, উপত্যকাটিতে প্রায় ৬৪ হাজার ২৬০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর অর্থ হলো, গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান থেকে প্রায় ৪১ শতাংশ মৃত্যুর হিসাব বাদ পড়েছে।
ল্যানসেটের অনুমান অনুযায়ী, গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬৪ হাজার ২৬০ জন হওয়ার অর্থ হলো উপত্যকাটির যুদ্ধপূর্ব জনসংখ্যার প্রায় ২ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ মারা গেছেন। অন্য কথায়, প্রায় প্রতি ৩৫ জনের একজন মারা গেছেন।
গাজায় নিহতের সংখ্যা নিয়ে এই গবেষণা চালিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষকদের একটি দল। তাঁদের গবেষণায় দেখা গেছে, নিহতদের মধ্যে নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষ ৫৯ শতাংশ।
ল্যানসেটের এই গবেষণায় বিমান হামলা, বিস্ফোরণজনিত আঘাতে নিহত মানুষদের হিসাবই শুধু ধরা হয়েছে। অর্থাৎ গবেষণায় স্বাস্থ্যসেবা বা খাবারের অভাবে মৃত্যু কিংবা নিখোঁজ হাজার হাজার মানুষকে ধরা হয়নি। নিখোঁজ এসব ব্যক্তি ধ্বংসস্ত‚পের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গবেষক দলের প্রধান ও লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের মহামারি-বিশেষজ্ঞ জেইনা জামালউদ্দিন বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘যেসব মৃত্যু আত্মীয়স্বজন অথবা মর্গ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, তথ্য বিশ্লেষণে আমরা কেবল সেগুলোই ব্যবহার করেছি।’
গাজা যুদ্ধ এরই মধ্যে ১৫ মাস পূর্ণ হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গতকাল বৃহস্পতিবার গাজায় নিহত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৬ জনে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হন ১ হাজার ২০৮ জন। এটা ইসরায়েলের সরকারি হিসাব।
ফিলিস্তিনে নিহতের সংখ্যা নিয়ে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করছে, সেটির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলেছে ইসরায়েল; কিন্তু জাতিসংঘ এই পরিসংখ্যান বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করে।