দোয়ারাবাজারে তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ‘ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন’

22

শাহ্ মাশুক নাঈম, দোয়ারাবাজার

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্থাপিত হলো প্রযুক্তিনির্ভর স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন (ঠযধহফরহম গধপযরহব), যা ঋওঠউই ্ অঈঋ কর্তৃক বাস্তবায়িত প্রকল্প কর্তৃক অর্থায়িত প্রকল্পের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে।
সামাজিক ট্যাবুর কারণে ঋতুস্রাবের দিনগুলোতে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে গিয়ে সংকোচে ভোগেন নারীরা। শুধু তাই নয়, চাইলেও হাতের নাগালে মেলে না স্যানিটারি ন্যাপকিন। মুহিবুর রহমান মানিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মিতালি পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়, হাজ্বী নুরউল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীদেরও এমন অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে দিন কাটাতে হত।
তবে বর্তমানে ফান্স ভিত্তিক দাতা সংস্থা (অঈঋ) এর অর্থায়নে ‘এফআইভিডিবি’ এর (গঁষঃর ঝবপঃড়ৎধষ জবপড়াবৎু জবংঢ়ড়হংব ঞড় ঋখড়ড়ফ অভভবপঃবফ ঈড়সসঁহরঃরবং ওহ ঝুষযবঃ উরারংরড়হ, ইধহমষধফবংয) প্রজেক্টের আওতায় উক্ত প্রতিষ্ঠান গুলোতে স্যানিটারি ভেন্ডিং মেশিনের প্রতিস্থাপনের ফলে পরিবর্তন এসেছে এমন অভিজ্ঞতার। যেখানে স্পান্স কার্ডের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে মিলছে একটি স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাড। ভেন্ডিং মেশিনের মাধ্যমে এই তিন প্রতিষ্ঠানে মোট ১ হাজার ৪০ জন ছাত্রী সেবাটি নিতে পারবেন। এপর্যন্ত এই তিন প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা মেশিন থেকে ৯৮৬ টি প্যাড সংগ্রহ করেছেন।
সিলেটের বিভাগের মধ্যে প্রথমবারের মতো দোয়ারাবাজার উপজেলার তিনটি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করা হয়েছে বলে জানাযায়। ছাত্রীরা যাতে সহজেই হাতের নাগালে স্যানিটারি প্যাড পেতে পারেন এজন্য দোয়ারাবাজারের আরও তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভেন্ডিং মেশিন বসানো পরিকল্পনা রয়েছে তাদের বলে জানিয়েছেন প্রজেক্ট সংশ্লিষ্টরা।
এফআইভিডিবি প্রকল্প ম্যানেজার ‘সুশান্ত কুমার দাস’ বলেন, দোয়ারাবাজারের এই বিদ্যালয় গুলোর আশপাশে স্যানিটারি ন্যাপকিন চাইলে সহজেই পাওয়া যায় না। ফলে ঋতুস্রাবের দিনগুলোতে ছাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। যা তাদের জন্য অস্বস্তিদায়কও। তাই কীভাবে এ সমস্যা লাগব করা যায় এমন চিন্তা থেকেই এ উদ্যোগ। ফান্স ভিত্তিক দাতা সংস্থা (অঈঋ) অর্থায়নে ‘এফআইভিডিবি’ এর প্রজেক্টের মাধ্যমে আমারা এটি বাস্তবায়ন করেছি। আশা করছি আগামীতে আমাদের চলমান প্রজেক্টের মাধ্যমে আরও তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এটি স্থাপন করবো।
এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ছাত্রীরা যোগ উপযোগী স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিজেদের কে বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম হবে এবং অন্যদেরকে উৎসাহিত করে জটিল রোগ থেকে মা- বোনদের কে রক্ষা করতে সমাজকে সাহায্য করবে।
তিনি আরও জানান, স্থাপন করা প্রতিটি ভেন্ডিং মেশিনে ১৬ বক্স প্যাড রাখা থাকে এক-একটি বক্সে ৫ টি করে প্যাড রয়েছে। ছাত্রীদের মধ্যে এটি ব্যবহারের প্রবণতা বাড়াতে উদ্বোধনের প্রথম তিন মাস বিনামূল্যে ভেন্ডিং মেশিন থেকে প্যাড সংগ্রহ করা যাবে প্রথম তিনমাস আমরা প্যাড সরবরাহ করবো। এরপর থেকে ভেন্ডিং মেশিনগুলোতে স্কুল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে প্যাড সরবরাহ করবে। এ জন্য কর্তৃপক্ষ প্রতিটি প্যাড এর একটি সহজলভ্য মূল্য নির্ধারণ করে দেবে। প্রতিটি মেশিনের সাথে মোবাইল ব্যাংকিং এর কিউআর কোড স্কেন করে নিদিষ্ট পেমেন্ট এর মাধ্যমে কিংবা মেশিনের নির্দিষ্ট স্থানে টাকা ফেললেই বেরিয়ে আসবে একটি প্যাড। সহজেই ছাত্রীরা এটি ব্যবহার করতে পারবেন। বর্তমানে ‘ইনভেশন বাংলাদেশ’ ভেন্ডিং মেশিনের ওঞ সাপোর্ট দিচ্ছে এবং মেশিন রক্ষণাবেক্ষণ জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের মনোনীত একজনকে তারা প্রতিমাসে ৫ শত টাকা করে দিচ্ছে।
মুহিবুর রহমান মানিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিমালা দাশ জানান, ঋওঠউই প্রজেক্টের মাধ্যমে এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ছাত্রীরা। ঋতুস্রাব ছাত্রীদের জন্য এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। ভেন্ডিং মেশিন স্থাপনের ফলে স্যানিটারি ন্যাপকিনের কঠিন বিষয়টি সহজলভ্য হয়েছে। বিনামূল্যে প্যাড পাওয়াতে অর্থেরও সাশ্রয় হচ্ছে। আর ভেন্ডিং মেশিনে সরবরাহকৃত প্যাডগুলো অত্যন্ত উন্নতমানের। যা সেনোরা ব্র্যন্ডের আল্ট্রা থিন প্যাড। তবে ছাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী পরবর্তীতে অন্য প্যাডও রাখা যাবে বলে জানান। এতে করে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের মাধ্যমে মেয়েদের নানাবিধ শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি কমে আসবে বলে মনে করি।
তিনি আরও জানান, ভেন্ডিং মেশিন স্থাপনের প্রথম তিনমাস এটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা তাদের অর্থায়নে বিনামূল্যে প্যাড সরবরাহ করবে জানিয়েছেন। পরবর্তীতে আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষের তত্ত¡াবধানে এটি পরিচালিত হবে। এজন্য এটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে একটি স্বেচ্ছাসেবী দল তৈরি করে দেয়া হবে। যারা প্যাড রিফিলের কাজটি করবে এবং কোনো ধরনের যান্ত্রিক ত্রæটি হলে অবহিত করবে।