কঠোরভাবে মাদক চোরাচালান বন্ধ করতে হবে

5

 

সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে সর্বনাশা মাদক। বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা। কিশোর-তরুণদের কাছে মাদক সহজলভ্য। শিক্ষার্থীদের টার্গেট করেছে মাদক কারবারিরা। তরুণী-কিশোরীদের মধ্যেও এই সংখ্যা বাড়ছে। শুধু শহর নয়, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও হাত বাড়ালেই মাদক পাওয়া যায়। মাদকের প্রভাব কমানো যাচ্ছে না, বরং এর প্রভাব সামাজিক বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে মাদকের উপকরণে বদল ঘটছে।
কয়েক বছর আগে আলোচনায় আসে ভয়ংকর মাদক আইস। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, আইস সেবনের পর মানবদেহে অতি অল্প সময়ে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। এই মাদক সেবনে মস্তিষ্কের রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এ থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এটি হৃদযন্ত্র, কিডনি ও লিভারেরও ভয়াবহ ক্ষতি করতে পারে। চিকিৎসকরা বলছেন, ইয়াবার তুলনায় অন্তত চার গুণ বেশি রাসায়নিক উপাদান ম্যাথ-অ্যামফিটামিন থাকায় আইস অনেক বেশি বিষাক্ত।
আগে বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, আমেরিকায় পাচার করার লক্ষ্যে দেশে আইস আনত কারবারিরা। জাতীয় একটি দৈনিকে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে আইস। অনেক শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী বিদেশ থেকে কৌশল রপ্ত করে বাংলাদেশে এই মাদকের কারখানা তৈরি করেছে। লাভের আশায় অন্য মাদক ছেড়ে আইস বিক্রিতে নেমেছে অনেক ডিলার। দেশীয় কারখানা তো আছেই, মিয়ানমার থেকেও ঢুকছে দেদার। অন্যদিকে ভারতের সীমান্তপথে এবং বিমানে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড থেকেও অহরহ নিয়ে আসা হচ্ছে আইসের বড় চালান।
মাত্র চার বছরে আইসের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালের শুরুর দিকেও দেশে এই মাদকের অতটা পরিচিতি ছিল না। সে বছর উদ্ধার করা হয় মাত্র পাঁচ গ্রাম আইস। ২০২০ সালে ৬৫ গ্রাম আইস উদ্ধার করা হয়। ২০২১ সালে উদ্ধার করা হয় প্রায় ৩৮ কেজি। পরের বছর ১১৩ কেজি। ২০২৩ সালে তা গিয়ে ঠেকে প্রায় ১৮৭ কেজিতে। অর্থাৎ মাত্র চার বছরে আইসের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। ডিএনসির তথ্য মতে, চলতি বছরের প্রথম দেড় মাসে দেশে প্রায় সাত কেজি আইস উদ্ধার করা হয়েছে, যেখানে সর্বনিম্ন চালান ছিল এক কেজির বেশি। এসব চালানের বেশির ভাগ ধরা পড়েছে মিয়ানমার সীমান্তসংলগ্ন জেলা কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায়।
মাদকের অপব্যবহার শুধু মাদকেই সীমিত থাকে না, আরো বহু অপরাধের কারণ হয়। মাদকসেবীরা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। দেশে মাদকের প্রায় সবটাই আসে বাইরে থেকে অবৈধ পথে। তাই মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রথমেই কঠোরভাবে মাদক চোরাচালান বন্ধ করতে হবে। কারবারিদের বিরুদ্ধে নতুন করে শুরু করতে হবে অভিযান। সব ধরনের মাদক প্রতিরোধে সরকারকে কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।