প্রচার-প্রচারণা শেষ হচ্ছে আজ

9

সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হচ্ছে আজ শুক্রবার সকাল ৮টায়। ফলে বৃহস্পতিবার প্রচারের শেষ সুযোগ কাজে লাগাতে মরিয়া ছিলেন বিভিন্ন আসনের প্রার্থী ও সমর্থকরা। বিএনপি ও তাদের মিত্রদের ভোট বর্জনের পরও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কারণে প্রায় ১০০ আসনে জমজমাট লড়াইয়ের আভাস মিলেছে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তাদের সহায়তা দিতে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবি। এত আয়োজনের পরও বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী উত্তাপ রয়েই গেছে। গত বুধবারও কয়েকটি স্থানে আওয়ামী লীগ দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। নানামুখী হিসাব-নিকাশে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণাও দিয়েছেন কোনো কোনো প্রার্থী। তবে প্রায় ২০০ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো প্রতিদ্ব›িদ্বতা নেই। যেখানে অনিয়ম, সেখানেই অ্যাকশন নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা। তিনি বলেছেন, ‘প্রয়োজনে প্রার্থিতা বাতিল করা হবে। ইসি এমন কোনো নির্বাচন করতে চায় না, যেটা আবার নতুন করে দেশকে সংকটের মধ্যে ফেলে। একটা নির্বাচন হবে; যে সরকারই হোক না কেন, যেন সরকার স্থায়ী রূপ নেয়।’
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২৯৯ আসনে ১ হাজার ৯৭০ প্রার্থী নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে প্রচারণায় রয়েছেন। ২৮ রাজনৈতিক দলের হয়ে লড়াই করছেন ১ হাজার ৫৩৪ প্রার্থী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন ৪৩৬ জন। তবে নওগাঁ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল ইসলাম মারা যাওয়ায় ওই আসনের নির্বাচন স্থগিত করেছে ইসি। বিএনপিসহ নিবন্ধিত ১৬ রাজনৈতিক দল ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে ভোট ঠেকানোর আন্দোলনে রয়েছে।
গত ১৮ ডিসেম্বর শুরু হওয়া নির্বাচনী প্রচারণার পর্দা নামবে শুক্রবার সকাল ৮টায়। আর রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সারাদেশে একযোগে ভোট গ্রহণ চলবে। এরই মধ্যে ভোটের দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এবারের নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক শোকজ, তলব, সতর্ক ও জরিমানার পরও প্রার্থীদের বাগে আনতে পারছে না ইসি। কমিশনের রক্তচক্ষুর আড়ালে সারাদেশে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীদের হুমকি-ধমকি, হামলা, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলাসহ নানা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন অনেক প্রার্থী। এসব অভিযোগে কয়েকজন প্রার্থী ও তাদের সমর্থককে শোকজ করেছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি।
নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ তাদের সমর্থকদের এ পর্যন্ত ৫৮৯টি শোকজ ও তলব নোটিশ দিয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। এর মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে সর্বোচ্চ ১৩১টি এবং সিলেট অঞ্চলে সর্বনিম্ন ২১টি নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশের জবাবে এ পর্যন্ত ৩৮৪ প্রার্থী ও তাদের সমর্থক অনুসন্ধান কমিটির কাছে সরাসরি অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কমিশনার রাশেদা : নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছেন, দেশ সংকটে পড়ুক এমন নির্বাচন ইসি করতে চায় না। আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ভোটে যদি ভোটার না থাকে, নির্বাচন নিষ্প্রাণ হয়ে যাবে। প্রার্থীদের এ জায়গাগুলো খেয়াল রাখতে হবে। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তাদের ভোটকেন্দ্রে আসার দিকে আকৃষ্ট করতে হবে। ভোটার আনার দায়িত্ব প্রার্থীদের। যদি ভোটার কেন্দ্রে কম হয়ে যায়, তবে তা উৎসবমুখর হবে না, একটু তো নিষ্প্রাণ হবেই।
বিদেশি ১৮৬ পর্যবেক্ষক-সাংবাদিককে ইসির অনুমোদন : নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ১৮৬ বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিককে অনুমোদন দিয়েছে ইসি। এর মধ্যে ১২৭ জন পর্যবেক্ষক আর ৫৯ জন গণমাধ্যমকর্মী। ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, আরও কিছু বিদেশি পর্যবেক্ষকের আবেদন প্রক্রিয়াধীন। সব মিলিয়ে দুই শতাধিক অনুমোদন পাবে বলে জানান তিনি।
মহিলা পরিষদের স্মারকলিপি : নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক সহিংসতা থেকে প্রান্তিক পর্যায়ের নারী ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে জোর দাবি জানিয়েছে মহিলা পরিষদ। প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে দেওয়া এক স্মারকলিপিতে এ দাবি জানায় সংস্থাটি। নির্বাচনে নারী-পুরুষ, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সাধারণ জনগণ যাতে স্বেচ্ছায়, সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সে জন্য নির্বাচনকালীন এবং নির্বাচন-পরবর্তী যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও আহŸান জানায় সংস্থাটি।
আজ-কাল ব্যাংক খোলা রাখতে নির্দেশ : শুক্র ও শনিবার তপশিলি ব্যাংক খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের অর্থ উত্তোলনের স্বার্থে এ দু’দিন সীমিত জনবলে তপশিলি ব্যাংকগুলোর ঢাকা-চট্টগ্রামসহ অন্য মহানগরী, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শাখা খোলা রাখতে বলা হয়েছে। ইসি সচিবালয়ের উপসচিব আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে পাঠানো হয়।