শেষ মুহ‚র্তে নির্বাচনী কাজ দ্রæত করছে ইসি

20

কাজির বাজার ডেস্ক
আগামী ৭ জনিুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সব কাজ গুছিয়ে এনেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটের সকল সরঞ্জামাদি কেনাকাটার কাজ শেষ হয়েছে আগেই। এখন চলছে ব্যালট পেপার মুদ্রণের কাজ। সেইসাথে ৯ লাখেরও বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্রশিক্ষণও শুরু হয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এসব কাজ শেষ করে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে সব উপকরণ বুঝিয়ে দিবে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। অবশ্য স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সসহ অনেক উপকরণ এরইমধ্যে তাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। সাধারণত নির্বাচনী কাজের জন্য প্রায় ১১ ধরনের সামগ্রীর প্রয়োজন পড়ে। এর মধ্যে ব্যালট পেপার, স্ট্যাম্প প্যাড, লাল গালা, মনোনয়ন ফরম, অফিসিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাশ সিল, অমোচনীয় কালির কলম, গানি ব্যাগ, হেসিয়ান ব্যাগ (বড়), হেসিয়ান ব্যাগ (ছোট) ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের লক রয়েছে। এরমধ্যে ব্যালট পেপার বাদে বাকি সব উপকরণ আগেই কেনা হয়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে ব্যালট পেপার মুদ্রণের কাজও শুরু হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এ বিষয়ে বলেন, ব্যালট পেপার প্রিন্টিং কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। তিনটি সরকারি ছাপাখানায় এ কাজ চলছে। ২৫ ডিসেম্বরের পর থেকে জেলায় জেলায় পাঠানো শুরু হবে। তিনি বলেন, বিজি প্রেসের তিনটি ছাপাখানায় ব্যালট পেপার প্রিন্টিংয়ের কাজ চলছে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা প্রিন্টিংয়ের কাজ শেষ করতে চাই। যেসব নির্বাচনী এলাকায় কোনো মামলা নেই বা পেন্ডিং নেই, সেগুলো প্রথমে মুদ্রণ করা হবে। মামলা থাকা আসনগুলোর ব্যালট সবার শেষে মুদ্রণ করা হবে। কতটি আসনে এরকম মামলা আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চল্লিশটির বেশি নির্বাচনী এলাকায় মামলা আছে।
কী পরিমাণ অর্থ বাজেট রাখা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যালট মুদ্রণ হচ্ছে সরকারি প্রেস থেকে। সুতরাং সুনির্দিষ্ট কোনো বাজেট নেই। বিজি প্রেসের চাহিদার প্রেক্ষিতে প্রাথমিকভাবে ৩৩ কোটি টাকা তাদের কাগজ ক্রয়ের জন্য দেয়া হয়েছে। এ বরাদ্দই এখন পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। ভোটার সংখ্যা অনুযায়ী ব্যালট পেপার ছাপা হবে। কবে থেকে ব্যালট পেপার জেলায় জেলায় পাঠানো হবে জানতে চাইলে ইসির এ অতিরিক্ত সচিব বলেন, আগামী ২৫ ডিসেম্বরের পর থেকে জেলায় জেলায় ব্যালট পেপার পাঠানো শুরু হবে। যেগুলো আগে কমপ্লিট হবে সেগুলো আগে পাঠানো হবে।
তিনি জানান, ব্যালট পেপার রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে যাবে। এখান থেকে যদি তিনি সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠান তাহলে সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ ভোটের দিন জেলা থেকে সব উপজেলায় পাঠানো সম্ভব হবে না। ভোটের দিন অনেক মালামাল পাঠাতে হয়। কেন্দ্র অনুযায়ী ব্যালট বাছাই করতে হয়, সেট করতে হয়। সেজন্য আগেই সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে পাঠানো হবে। সেক্ষেত্রে ব্যালট পেপারের নিরাপত্তার বিষয়টি কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব তো আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর। তাদেরকে আমরা নিরাপত্তা দিতে বলেছি। নিরাপত্তা সহযোগেই ব্যালট পেপার রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে পাঠানো হবে। নিরাপত্তা কমিশন স্পেসিফিক বলে দেবে না এ বাহিনী নিরাপত্তা দেবে।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের (প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার) প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে।
গত মঙ্গলবার সকাল ১০টায় নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হয়। অঞ্চলভেদে বিভিন্ন স্থানে এ কর্মসূচি চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ সংক্রান্ত চিঠি নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট থেকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলমকে সোমবারই পাঠানো হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সব ধরনের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা হয়েছে। ১৯ ডিসেম্বর থেকে মাঠ পর্যায়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের (প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার) প্রশিক্ষণ শুরু হবে।
প্রশিক্ষণ শুরুর বিষয়টি নিশ্চিত করে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান জানান, প্রশিক্ষণ আজ শুরু হয়েছে। অঞ্চলভেদে একেকদিন একেক এলাকায় প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, ধাপে ধাপে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রিসাইডিং অফিসার চার লাখ ছয় হাজার ৩৬৪ জন, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার দুই লাখ ৮৭ হাজার ৭২২ জন এবং পোলিং অফিসার পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪৩ জনসহ মোট ৯ লাখ ৯ হাজার ৫২৯ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, দেশে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা মিলিয়ে ১০-১২ লাখের মতো জনবল বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। ইসি ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, ভোটের প্রস্তুতি হিসেবে এরই মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। আইনি কাঠামোর সংস্কারও হয়েছে। যদিও এতে ইসির ক্ষমতা বাড়া বা কমা নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সংসদীয় আসনের পুনর্বিন্যাসের কাজ শেষ। নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার ১০টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন এসেছে। নতুন দলের নিবন্ধন এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিরীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। ভোটকেন্দ্রের তালিকাও প্রকাশিত হয়েছে। আসন অনুযায়ী ভোটার তালিকার সিডিও প্রস্তুত হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে পর্যবেক্ষক নিবন্ধনের কাজও শেষ হয়েছে ইতোমধ্যে। চ‚ড়ান্ত হয়েছে বিদেশি পর্যবেক্ষণ নীতিমালাও। একই সঙ্গে সংবাদ সংগ্রহে মোটরসাইকেলের অনুমতি দিয়ে সাংবাদিক নীতিমালাও সংশোধন করা হয়েছে।
এবারের নির্বাচনে বরাদ্দের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। এবার প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং পোলিং কর্মকর্তাদের দুই দিনের সম্মানী ভাতা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগে নির্বাচনে এক দিনের ভাতা দেয়া হতো। পাশাপাশি জ্বালানি খরচও এবার বাড়বে। নির্বাচনী দায়িত্বে থাকবেন ৯ লাখের বেশি সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা। নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটা, নির্বাচনে বিভিন্ন দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের ভাতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ভাতা মিলিয়ে এবার প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা খরচ হবে। এর বাইরে নির্বাচনী প্রশিক্ষণে খরচ হবে ১০০ কোটি টাকার বেশি। যদিও প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা।
এবার প্রার্থীদের মনোয়নপত্র দাখিলে বাধাদান ঠেকাতে অনলাইনে জমা দেয়ার সুযোগ রাখার পাশাপাশি ই-ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অনলাইনে জামানতের টাকাও পরিশোধের সুযোগ দেয়া হয়েছে। ভোটকেন্দ্রের নাম ও ভোটার নম্বর খুঁজে পাওয়ার ভোগান্তি কমাতে নির্বাচনি ব্যবস্থাপনা অ্যাপ তৈরি করেছে কমিশন। এই অ্যাপে ভোটারের তথ্যের পাশাপাশি রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, ডিসি, এসপি, ওসিসহ নির্বাচনের দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তাদের পরিচয়, ফোন নম্বর থাকবে।
ভোটের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ এবং সেটি সন্তোষজনক।