৫২ লাখ শিক্ষার্থীর ইউনিক নিয়ে জটিলতা

7

শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি পাওয়া নিয়ে জটিলতা কাটছেই না। সমন্বিত শিক্ষা তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি (আইইআইএমএস) প্রতিষ্ঠা প্রকল্পের আওতায় এ বছর ৩৫ লাখ শিক্ষার্থীর ইউনিক আইডি পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। আর ১৮ বছর উত্তীর্ণ হওয়ায় ১৭ লাখ শিক্ষার্থীকে ইউনিক আইডি দেওয়া সম্ভব হবে না। ৫২ লাখ শিক্ষার্থীর কেউই পায়নি ইউনিক আইডি।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অনলাইনে জন্মনিবন্ধন সনদে শিক্ষার্থীর নাম উভয় ভাষায় (বাংলা ও ইংরেজি) না থাকায় ২৬ লাখ শিক্ষার্থীর আইডি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। আর ৯ লাখ শিক্ষার্থীর সব তথ্য সার্ভারে থাকলেও আইডি তৈরি হচ্ছে না নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন কার্যালয়ের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায়। এ ছাড়া ১৭ লাখ শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ বছর উত্তীর্ণ হওয়ায় তাদের ইউনিক আইডি দেওয়া সম্ভব হবে না।
ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর জন্য একটি ইউনিক আইডি তৈরি এবং সমন্বিত শিক্ষাতথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রণয়ন করতে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে এস্টাবলিশমেন্ট অব ‘ইন্টিগ্রেটেড এডুকেশন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ (আইইআইএমএস) প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এতে ব্যয় ধরা হয় ৩৫৩ কোটি ২১ লাখ ৪২ হাজার টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছে বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)। মেয়াদ ধরা হয়েছিল তিন বছর। সে অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হয় ২০২১ সালের ৩০ জুন। পরে প্রকল্পের মেয়াদ তিন দফা বাড়িয়ে ২০২৪ সালের বছরের জুন পর্যন্ত করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মৌলিক ও শিক্ষাসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য এক জায়গায় রাখার উদ্দেশ্যেই ইউনিক আইডি তৈরি করার কথা। পরিকল্পনা অনুযায়ী, শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলে এই আইডিই জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) রূপান্তরিত হবে। মূলত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী, অর্থাৎ যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে, তাদের তথ্য সিস্টেমের আওতায় আনাই ইউনিক আইডির মুখ্য উদ্দেশ্য। আর শিক্ষাতথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রণয়নের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সব দপ্তরকে একই সফটওয়্যারে আনার মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করাও অন্যতম উদ্দেশ্য।
ঘোষণা ছিল, মুজিব বর্ষেই (২০২২ সালের মার্চ) মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের ১ কোটি ৬০ লাখ শিক্ষার্থীর হাতে ইউনিক আইডি কার্ড তুলে দেওয়া হবে। যদিও সে ঘোষণার বাস্তবায়ন হয়নি। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এর জন্য কোভিড মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা এবং জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন কার্যালয়ের কারিগরি সমস্যাকে দায়ী করছেন।
প্রকল্পের সর্বশেষ (১ নভেম্বর) অগ্রগতি প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ১ কোটি ৬০ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১ কোটি ১২ লাখ ৯১ হাজার শিক্ষার্থীর ডেটা এন্ট্রি শেষ। এর মধ্যে ৬০ লাখ ৮৯ হাজার ৮৫৯ শিক্ষার্থীর ইউনিক আইডি সিস্টেমে তৈরি হয়েছে। আর বাকিগুলোর ডেটা এন্ট্রির কাজ চলছে।
এ বিষয়ে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, নানা জটিলতায় নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এর মধ্যে জন্মনিবন্ধন সনদে শিক্ষার্থীর নাম অনলাইনে উভয় ভাষায় না থাকা এবং ইসির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া অন্যতম। এ দুই সমস্যার কারণে প্রায় ৩৫ লাখ শিক্ষার্থীর ইউনিক আইডি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। আর ১৭ লাখ শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ বছরের বেশি হওয়ায় তাদের ইউনিক আইডি দেওয়া সম্ভব হবে না। তিনি আরও বলেন, বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে এসব শিক্ষার্থীকে এডু আইডি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যাতে প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত না হয়।
ইউনিক আইডি তৈরির অন্যতম দায়িত্ব পালনকারী সংস্থা জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন কার্যালয়। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যালয়ের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. রাশেদুল হাসান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে ওই কার্যালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘২৬ লাখ শিক্ষার্থীর জন্মনিবন্ধন সনদ সংশোধনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ, জন্মনিবন্ধনে সব তথ্য পরিপূর্ণভাবে না থাকলে ইউনিক আইডি তৈরি সম্ভব নয়। আর ইসির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় ৯ লাখ শিক্ষার্থীর ইউনিক আইডি তৈরি করা যাচ্ছে না। আশা করি, শিগগির এ সমস্যার সমাধান হবে।’
কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক মো. শামছুল আলম বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইউনিক আইডি কার্ডের ডিজাইন অনুমোদন দিয়েছে। চলতি মাসেই ইউনিক আইডি কার্ড ছাপার কাজের দরপত্র আহŸান করা হবে। আশা করছি, আগামী জানুয়ারি থেকে পর্যায়ক্রমে কার্ড বিতরণ করা সম্ভব হবে।’