রাজনীতি সহিংসতা মুক্ত হোক

20

 

দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জন ও অগ্রগতির প্রশ্নে সহিংস পরিস্থিতি কতটা প্রতিবন্ধক এবং উদ্বেগের তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সঙ্গতকারণেই যে কোনো ধরনের সহিংসতা বন্ধে উদ্যোগী হওয়া জরুরি। অন্যদিকে, রাজনৈতিক সহিংসতা একটি দেশের জন্য সামগ্রিকভাবে ভীতিপ্রদ বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করে- যা আমলে নেওয়ার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না।
প্রসঙ্গত বলা দরকার, দেশের বিভিন্ন স্থানে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, ব্যাপক নাশকতা ও সহিংসতার মধ্য দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা টানা দুই দিনের অবরোধের প্রথম ২৪ ঘণ্টা পার হয়েছে। এ সময় একডজন বাস-পিকআপে অগ্নিসংযোগসহ শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর, পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ ও আওয়ামী লীগের অফিসে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দেশজুড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা চালায় রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা- এমনটি প্রকাশিত খবরে ওঠে এসেছে। অন্যদিকে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এতে বগুড়াসহ বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৬ জন গুলিবিদ্ধ হন, আহত হন বিএনপি-জামায়াতের দুই শতাধিক নেতাকর্মী।
আমরা বলতে চাই, রাজনৈতিক সংঘাত-সহিংসতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এর আগেও বিভিন্ন ইস্যুতে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, জ্বালাও-পোড়াও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। যা অত্যন্ত উৎকণ্ঠাজনক বলেই প্রতীয়মান হয়। আমরা মনে করি, যে কোনো সংকট নিরসনে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে উদ্যোগী হওয়া জরুরি। কিন্তু কোনোভাবেই সহিংস পরিস্থিতি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ফলে সামগ্রিক বিষয় আমলে নিয়ে দেশের প্রত্যেক রাজনৈতিক দল দায়িত্বশীল আচরণ করবে এমনটি প্রত্যাশিত। এছাড়া এটাও আমলে নিতে হবে যে, বাংলাদেশ বিভিন্ন খাতে এগিয়ে যাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সফলতা দেখিয়েছে। শিক্ষার হার বাড়ছে, প্রযুক্তি খাত থেকে শুরু করে বিভিন্ন সূচকেও অগ্রগতি হয়েছে। ফলে যদি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটতে থাকে, তবে তা আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকেই স্পষ্ট করবে- যা এড়ানোর সুযোগ নেই। সঙ্গত কারণেই পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি উন্নত করতে হবে। মনে রাখা দরকার, সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই দেশকে সমৃদ্ধির ধারায় এগিয়ে নিতে হবে, আর সে জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন অপরিহার্য।
জানা যায়, অবরোধের প্রথম দিনেই রোববার ভোর ৪টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সারাদেশে ১৩টি গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শুধু রাজধানী ঢাকাতেই ৮টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। এছাড়া গাজীপুর, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট ও খাগড়াছড়ি- এই পাঁচ জেলায়ও গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যানবাহনে আগুন দেওয়ার বেশির ভাগ ঘটনা ঘটেছে সন্ধ্যার পর এবং ভোরে। আমরা বলতে চাই, সার্বিকভাবে এই পরিস্থিতি কতটা আশঙ্কাজনক সেটা এড়ানোর সুযোগ নেই। একদিকে আতঙ্ক, অন্যদিকে জনজীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। নগর-মহানগরের বিপণিবিতান, মার্কেট ও শপিং মলসহ সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও বেচা-বিক্রি হয়নি বললেই চলে- এমনটিও জানা গেছে। অবরোধে অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এমনটিও এর আগে ওঠে এসেছিল। ফলে সামগ্রিক এ পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য।
আমরা বলতে চাই, যে কোনো সংকট মোকাবিলায় দেশের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল সহনশীলতার পরিচয় দিক। আলাপ-আলোচনা কিংবা শান্তিপূর্ণ উপায়ে যে কোনো সংকট নিরসনে সচেষ্ট হোক। এটাও আমলে নেওয়া জরুরি, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাংলাদেশে এবারের নির্বাচন নিয়ে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে দেশি-বিদেশি শক্তিগুলো অনেক সক্রিয়। সব মিলিয়ে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিদেশিদের তৎপরতা বাড়তে শুরু করেছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই।
সর্বোপরি বলতে চাই, সহিংসতার ঘটনা আমলে নিন। অগ্নিংসযোগ ভাঙচুরসহ অপরাধের সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। একইসঙ্গে সহিংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রত্যেক রাজনৈতিক দল সচেতন হবে এমনটিও কাম্য। যে কোনো সংকট সমাধান হোক আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে। সহিংস পরিস্থিতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।