প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দুর্গোৎসব

4

 

স্টাফ রিপোর্টার

৫দিন ব্যাপী বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। এর আগে মÐপগুলোতে চলে সিঁদুর খেলা আর আনন্দ-উৎসব। হিন্দু সধবা নারীরা প্রতিমায় সিঁদুর পরিয়ে দেন, নিজেরা একে অন্যকে সিঁদুর পরিয়ে দেন। চলে মিষ্টিমুখ, ছবি তোলা আর ঢাকের তালে তালে নাচ-গান। মঙ্গলবার সকাল ৯টার মধ্যে দশমী বিহিত পূজা শেষে দর্পণ-বিসর্জন দেওয়া হয়। এরপর বিজয়া দশমী উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় বিকেলে আয়োজন করা হয় শোভাযাত্রা।
মঙ্গলবার বিকেল থেকে সিলেটে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় প্রতিমা বিসর্জন। মহানগরীর চাঁদনীঘাটে ‘সুবোধ মঞ্চ’ উদ্বোধন করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও নবনির্বাচিত মেয়র মোঃ আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। দুপুর থেকেই পূজামÐপগুলো এক এক করে প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রায় শুরু হয়। শঙ্খ আর উলুধ্বনি, খোল-করতাল-ঢাকঢোলের সনাতনী বাজনার সঙ্গে দেবী-বন্দনার গানের মধ্য দিয়ে হাজারো মানুষ শোভাযাত্রায় অংশ নেন। বিভিন্ন সড়ক ঘুরে চাঁদনীঘাটে তীরে গিয়ে শোভাযাত্রা শেষ হয়। বিকেল পাঁচটার দিকে সুরমা নদীর তীরে চাঁদনীঘাটে প্রতিমা বিসর্জন করেন চলে রাত পর্যন্ত। এসময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়। তবে কোন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
হিন্দু পূরাণমতে, দুর্গাপূজার সঠিক সময় হলো বসন্তকাল। কিন্তু বিপাকে পড়ে রামচন্দ্র, রাজা সুরথ এবং বৈশ্য সমাধি বসন্তকাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শরতেই দেবিকে অসময়ে জাগ্রত করে পূজা করেন। সেই থেকে অকাল বোধন হওয়া সত্তে¡ও শরতকালে দুর্গাপূজা প্রচলিত হয়ে যায়।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দিনপঞ্জিকা অনুসারে এ বছর দুর্গাদেবী স্বামীর ঘর স্বর্গ ছেড়ে মর্ত্যে পিতৃগৃহে পদার্পণ করছেন ঘোটকে চড়ে। মঙ্গলবার দুর্গাদেবী ভক্তদের কাঁদিয়ে দশমীতে মর্ত্যলোক পিত্রালয়ের নইওর শেষ করে ফিরে যান স্বামীগৃহ কৈলাশে।
কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শেষ হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এবার সিলেট জেলার ৬১৭টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। তার মধ্যে সার্বজনীন ৫৬৯টি, পারিবারিক ৪৮টি পূজোর আয়োজন হবে। মহানগরীতে ১৫১টি পূজার মধ্যে সার্বজনীন ১৩৪টি ও পারিবারিক ১৭টি। জেলায় ৪৬৬টি পূজার মধ্যে সার্বজনীন ৪৩৫টি ও পারিবারিক ৩১টি।
সনাতন বিশ্বাস ও পঞ্জিকা মতে, দেবী দুর্গা এবার ঘোড়ায় স্বর্গলোক থেকে মর্ত্যলোকে আসেন। বিদায়ও নেন ঘোড়ায়। যার ফল হচ্ছে ফসল ও শস্যহানি।
প্রতিমা বির্সজনের মধ্য দিয়ে সিলেটে শেষ হলো দুর্গোৎসব
এদিকে, শারদীয় দুর্গা উৎসবের শেষ দিনে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন সিলেট মহানগর শাখা কর্তৃক প্রতিমা বিজর্সন কার্যক্রমের শুভ সূচনা বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি এসময় বলেন, আধ্যাত্মিক নগরী সিলেট। ধর্মীয় সম্প্রতির এক উজ্জ্বল উদাহরণ। সুদীর্ঘকাল থেকে এই নগরী অঞ্চলের মানুষ এক অন্যের ধর্মীয় উৎসবে অংশ গ্রহণ করে আনন্দ ভাগাভাগি করে উৎসবের সর্বাঙ্গীন সৌন্দর্যকে বহুগুনে বাড়িয়ে তুলে। এটি সিলেটকে দেশের অন্যান্য এলাকার থেকে সতন্ত্র মর্যাদা দিয়েছে। আধ্যাধিক নগরী সিলেটসহ এ অঞ্চলের সম্প্রতি রক্ষায় আমরা বদ্ধ পরিকর।
সংগঠনের মহানগর সভাপতি রজত কান্তি গুপ্তের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এপেক্সিয়ান চন্দন দাস, বাবলু দেব এবং এডভোকেট দেবব্রত চৌধুরী লিটনের যৌথ পরিচালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আয়োরুজ্জামান চৌধুরী।
শারীরিক অসুস্থ থাকায় প্রেরিত লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম ও অনুষ্ঠান পালন করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। বর্তমান সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি রক্ষায় অত্যন্ত আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
চাঁদনীঘাটে সম্প্রতির সুবোধ মঞ্চে উপস্থিত হয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য করেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, ড. হিমান্দ্রি শেখর রায়, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো, ইলিয়াস শরীফ, বিপিএম(বার) পিপিএম, মহানগর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালিক, কাউন্সিলর জগদ্বীশ চন্দ্র দাস, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট রনজিত সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা ভবতোষ রায় বর্মন রানা, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আল-আজাদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সহধর্মীনি সেলিনা মোমেন, ড. দিলিপ কুমার দাস চৌধুরী, তপন মিত্র, সুদীপ দেব।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এডভোকেট মৃত্যুঞ্চয় ধর ভোলা, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক রজত কান্তি ভট্টাচার্য্য, ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মলয় পুরকায়স্থ, জেলা সভাপতি এডভোকেট প্রদীপ কুমার ভট্টাচার্য্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোপিকা শ্যাম পুরকায়স্থ, সাধারণ সম্পাদক কৃপেশ পাল, মহানগর সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ দেব, সুব্রত দেব, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রঞ্জন ঘোষ, বিশ্বজিৎ গুন, এডভোকেট অরবিন্দু দাস গুপ্ত, বিরেশ দেবনাথ, নন্দন পাল, মনমোহন দেবনাথ, ভৈরব চন্দ্র নাথ, দিপংকর দাস, ধনঞ্জয় দাস ধনু, মিথিল পাল প্রমুখ।