সহিংসতা রোধে উদ্যোগ নিতে হবে

30

 

একটি দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জন ও অগ্রগতির প্রশ্নে সহিংস পরিস্থিতি কতটা প্রতিবন্ধক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সঙ্গত কারণেই যে কোনো ধরনের সহিংসতা বন্ধে উদ্যোগী হতে হবে। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে যে, নভেম্বরের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে- যেটি জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বিএনপি চাইছে তফসিল ঘোষণার আগেই আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার হটানোর এক দফা দাবিতে সাফল্য পেতে। আর আওয়ামী লীগ চাইছে যে কোনোভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করতে। আর সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক সংঘাত-সহিংসতা ভয়াবহ রূপ নেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। সঙ্গত কারণেই আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সহিংসতা রোধে উদ্যোগ নিতে হবে।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, সহিংস পরিস্থিতি কোনোভাবেই ভালো কিছু বয়ে আনে না। ফলে প্রত্যেক রাজনৈতিক দল সহনশীলভাবে যে কোনো সংকট আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মোকাবিলা করুক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিভিন্ন সময়েই দেশে রাজনৈতিক সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এমনকি রাজনৈতিক সহিংসতা মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর আগে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গিয়েছিল, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এই ৩ মাসে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় মোট ৪০ জন নিহত হয়েছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য দিয়েছিল।
আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ বিভিন্ন খাতে এগিয়ে যাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সফলতা দেখিয়েছে। শিক্ষার হার বাড়ছে, প্রযুক্তি খাত থেকে শুরু করে বিভিন্ন সূচকে অগ্রগতি বিদ্যমান। ফলে যখন সম্প্রতি সহিংসতার আশঙ্কা উঠে আসছে তখন সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি এড়ানো যাবে না। কেননা যদি রাজনৈতিক সহিংসতা রোধ না হয়- তবে তা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। ফলে পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি উন্নত করতে হবে। মনে রাখা দরকার, সম্মীলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই দেশকে সমৃদ্ধির ধারায় এগিয়ে নিতে হবে, আর সে জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন অপরিহার্য।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রও সহিংসতার আশঙ্কা করছে। বৈশ্বিক বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে এই আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, ২০২৩-এর শেষ বা ২০২৪ সালের শুরুতে জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতা বাড়তে পারে। জানা যাচ্ছে, উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে রাজপথের সহিংসতা রুখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এছাড়া নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতা ঠেকানোর আগাম প্রস্তুতি হিসেবে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদার করা হয়েছে। চোরাপথ দিয়ে অবৈধ গোলা-বারুদ যাতে দেশে ঢুকতে না পারে এজন্য বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) সীমান্ত এলাকায় সব ধরনের টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করেছে।
সংশ্লিষ্টদের এটাও আমলে নেওয়া দরকার, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাংলাদেশে এবারের নির্বাচন নিয়ে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে দেশি-বিদেশি শক্তিগুলো অনেক বেশি সক্রিয়। সব মিলিয়ে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিদেশিদের তৎপরতা বাড়তে শুরু করেছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। আমরা বলতে চাই, যে কোনো ধরনের অগ্রগতি, উন্নয়ন, অর্জন- দেশ ও মানুষের কল্যাণের জন্য। সমৃদ্ধির জন্য। বাংলাদেশ নানা দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, নানাভাবে অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছে, কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে সাফল্যের সঙ্গে। ফলে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা রোধে উদ্যোগ জরুরি। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কোনোভাবেই সহিংসতা কাম্য হতে পারে না।
সর্বোপরি বলতে চাই, সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক সংঘাত-সহিংসতা ভয়াবহ রূপ নেওয়ার যে আশঙ্কা রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে তা আমলে নিতে হবে। এছাড়া দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে যেন কোনো সহিংস বা অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। আমরা মনে করি, যে কোনো সংকট সমাধান হোক আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে। সহিংস পরিস্থিতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক- এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।