ছাতকে ৩৩টি ও কমলগঞ্জে ১৬৩টি মন্ডপে এবার শারদীয় দুর্গোৎসব # রঙ-তুলিতে শেষ মুহ‚র্তের ব্যস্ততায় মৃৎশিল্পীরা

3

ছাতক ও কমলগঞ্জ সংবাদদাতা

ছাতকে সনাতন সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপনে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এখানের প্রতিটি মন্ডপে প্রতিমা তৈরীর কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে রঙতুলির আঁচড় দিয়ে সাজানো হচ্ছে প্রতিমা। শেষপর্যায়ে মন্ডপে আলোক সজ্জা এবং প্রতিমাকে শাড়ী ও অলংকার পরানো হবে।
ছাতক উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ মনিশংকর ভৌমিক ও সাধারণ সম্পাদক বাবুল রায় জানান, টানা এক সপ্তাহ বৃষ্টির কারণে এবছর প্রতিমা তৈরিতে অনেকটা দেরী হয়েছে। না হয় এরই মধ্যে মন্ডপে-মন্ডপে সাজ-সজ্জার কাজ সমাপ্ত হয়ে যেতো। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ২১টি মন্ডপে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব পালন হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
ছাতক পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অরুণ অধিকারী ও সাধারণ সম্পাদক দুলন তরফদার জানান, ছাতক পৌরসভায় এবং উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে মোট ৩৩টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব পালনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ২১টি এবং পৌর এলেকায় ১২টি মন্ডপ আছে। উপজেলার শারফিননগর সাধক সংঘ, বাউশা, ধনীটিলা গোবিন্দগঞ্জ, দোলারবাজার, জাতুয়া, কালিপুর, জাউয়া বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে ২১টি মন্ডপে পূজা উদযাপন করা হবে। এদিকে কালীবাড়ি, মহামায়া, ত্রিনয়নী, গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর আখড়া, তাতিকোনা, শিববাড়ী, নোয়ারাই নাথপাড়া, কুমনাসহ পৌর শহরের ১২টি মন্ডপে পালিত হচ্ছে দুর্গোৎসব। উপজেলার ভাতগাঁও, চরমহল্লা ও কালারুকা ইউনিয়নে কোনো পূজা মন্ডপ নেই।
আগামী ২০ অক্টোবর বেলষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গোৎসব এবং ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে এ উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।
ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহ আলম জানান, ছাতকে শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় দুর্গাপূজা পালনের লক্ষ্যে প্রতিটি মন্ডপে থাকবে পুলিশের কঠোর নজরদারি। পুলিশের পাশা-পাশি এখানে আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ও সতর্কতামূলক অবস্থায় থাকবে।
ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ ইসলাম উদ্দিন জানান, ছাতকের ৩৩টি মÐপে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূঁজা পালনে ইতিমধ্যে সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে পূজা উদযাপন পরিষদ, মন্ডপ পরিচালনা কমিটি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে পৃথক-পৃথক সভা হয়েছে। আশা করি এখানে অতীত ঐতিহ্য বজায় রেখে শারদীয় দুর্গোৎসব পালন হবে।
কমলগঞ্জ:
দরজায় কড়া নাড়ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। আগামী ২০ অক্টোবর শুক্রবার মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় উৎসব। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় দশভুজা দেবী দুর্গাকে বরণ করতে প্রস্তুত হচ্ছে পূজামÐপগুলো। দুর্গোৎসবকে ঘিরে কমলগঞ্জের সর্বত্র চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি ও মÐপে মÐপে চলছে প্রতিমা তৈরির শেষ মুহ‚র্তের কাজ।
ইতোমধ্যে উপজেলার অধিকাংশ পূজামÐপে শেষ হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাজ। এখন রঙ তুলির আঁচড়ে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ চলছে। মাটির কাজ শেষ করে রঙ-তুলির খেলায় প্রতিমাকে সজ্জিত করতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন মÐপগুলোর মৃৎশিল্পীরা। মৃৎশিল্পীদের রাত দিনের কাজ আর পূজা কমিটির ব্যস্ততা দুর্গোৎসবের জানান দিচ্ছে।
এ বছর কমলগঞ্জ উপজেলায় ১৪৬টি সার্বজনীন ও ১৭টি ব্যক্তিগত মÐপে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজা। উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তার প্রস্তুতি।
উপজেলার বিভিন্ন পূজা মÐপ ঘুরে দেখা যায়, মাটির কাজ শেষ করে প্রতিটি প্রতিমাকে রঙ-তুলির নিপুণ আঁচড়ে রাঙাতে ব্যস্ত শিল্পীরা। চলছে সাজ-সজ্জার কাজও। দেবী দুর্গার সাথে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে কার্তিক, গণেশ, ল²ী আর সরস্বতী দেবীকেও। যেন দম ফেলার ফুরসৎ নেই মৃৎশিল্পীদের।
এবারের পূজার প্রতিমায় ব্যতিক্রম আনার চেষ্টা করেছেন উপজেলার বেশ কয়েকটি পূজামÐপ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বিগত বছরের তুলনায় এ বছর দুর্গোৎসবে দ্বিগুণ ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে আয়োজকদের। এরপরও থেমে নেই কোন আয়োজন। রকমারি আলোক সজ্জার বর্ণালী বাহারে সাজানো হবে মÐপ ও তার আশপাশ। হাতে আর কয়েকদিন বাকি। তাই রাত-দিন চলছে সাজ-সজ্জার কাজ।
উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের কুমারটেকি পালপাড়ার মৃৎশিল্পী অজিত রুদ্রপাল জানান, এ বছর তিনি ৯টি দুর্গা প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। সবকটি প্রতিমার মাটির কাজ প্রায় শেষ। এখন রঙ তুলির কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ২টি প্রতিমার রঙের কাজ শেষ করেছেন। আগামী ৪-৫ দিনের মধ্যেই বাকি প্রতিমাগুলোর রঙের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে তিনি জানান।
মনোরঞ্জন পাল নামে আরেক মৃৎশিল্পী বলেন, বেশিরভাগ প্রতিমার মাটির কাজ শেষ করেছি। এখন রঙের কাজ চলছে। সব মিলিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষ করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
কমলগঞ্জ উপজেলায় ১৪৬টি সার্বজনীন ও ১৭টি ব্যক্তিগত মÐপসহ মোট পূজা মÐপের সংখ্যা ১৬৩টি। এর মধ্যে কমলগঞ্জ পৌরসভায় ৮টি, ১নং রহিমপুর ইউনিয়নে ২০টি, ২ নং পতনউষার ইউনিয়নে ১৪টি, ৩নং মুন্সীবাজার ইউনিয়নে ১৬টি, ৪ নং শমসেরনগর ইউনিয়নে ১৪টি, ৫নং কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নে ৮টি, ৬নং আলীনগর ইউনিয়নে ২২টি, ৭নং আদমপুর ইউনিয়নে ১৩টি, ৮নং মাধবপুর ইউনিয়নে ২১টি ও ৯নং ইসলামপুর ইউনিয়নে ১০টি পূজামÐপ রয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল চন্দ্র দাশ ও সাধারণ সম্পাদক প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা আনন্দঘন ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে আমরা সর্বপ্রকার সর্তকতা অবলম্বন করছি। তাছাড়া ২০২১ সালের কমলগঞ্জে ঘটা অপ্রীতিকর ঘটনা ও আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি অধিকতর নিরাপত্তা জোরদারের জন্য প্রত্যেক মÐপে মÐপ কমিটির নিজ উদ্যোগে অধিক সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, কমলগঞ্জে সার্বজনীন ও ব্যক্তিগতসহ মোট ১৬৩টি পূজামÐপে শান্তিপূর্ণ ভাবে পূজা উদযাপনের লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সবকটি পূজামÐপ এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা জোরদার করা হয়েছে। পূজা মÐপগুলোর নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশের ১০টি মোবাইল টিম ও আনসার বাহিনী পূজা চলাকালীন সার্বক্ষণিক কাজ করবে। তাছাড়া বাড়তি নিরাপত্তায় প্রতিটি মÐপে সিসি ক্যামেরা বসানোর জন্য মÐপ কমিটিগুলোকে বলা হয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব যাতে নির্বিঘেœ সম্পন্ন হয় সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি পূজামÐপে আনসার ও স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পাল করবে। পাশাপাশি পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যরা টহলে থাকবে।