বন্যার আশঙ্কা কার্যকর পদক্ষেপ নিন

49

 

উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে ভারতের উত্তর সিকিমের লোনাক হ্রদ পানিতে উপচে পড়ছে। তিস্তা নদীতে দেখা দিয়েছে আকস্মিক বন্যা। প্রচন্ড পানির তোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর ওপর দেওয়া চুংথাং ড্যাম। আর এতে অতিরিক্ত পানি তিস্তা নদীতে চলে আসায় পানির স্তর হঠাৎ বেড়ে গেছে। সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী বাংলাদেশ অঞ্চলেও ফুলেফেঁপে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বন্যার আশঙ্কায় ঘর ছাড়ছে তিস্তা তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষ। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড তিস্তা ব্যারাজের ৪৪ জলকপাট খুলে দিয়েও পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।
আমরা মনে করি, সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। কেননা, এমন পরিস্থিতিতে মানুষ কতটা দিশেহারা হতে পারে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এছাড়া লক্ষণীয়, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, পানির চাপ সামাল দিতে না পেরে তিস্তার গজলডোবা ব্যারাজ থেকে বুধবার সকালে রেকর্ড পরিমাণ পানি বাংলাদেশের দিকে ছাড়ে ভারত। সকাল ৭টায় ২ লাখ ৪৮ হাজার ১২০ কিউসেক পানি ছাড়ার পর সকাল ৯টার দিকে পানি ছাড়ার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৫২ হাজার ৫৩৫ কিউসেক। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সকাল ১০টায় গজলডোবার সবক’টি গেট খুলে দিয়ে ঘণ্টায় ২ লাখ ৯১ হাজার ৪৮৭ কিউসেক পানি ছাড়তে থাকে ভারত। ভারত নজিরবিহীন পানি ছাড়ায় তিস্তা নদীর পানি দ্রম্নত বৃদ্ধি পেয়ে লালমনিরহাটের দোয়ানী ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রেড অ্যালার্ট জারি করেছে সংশ্লিষ্টরা।
আমরা বলতে চাই, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন সময়ের বন্যা পরিস্থিতি কিংবা পানিবন্দি দশায় মানুষ কতটা দুর্ভোগে পড়ে তা অজানা নয়। পানিবন্দি মানুষ কেউ পাশের নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেয়, কেউ আবার রাস্তা বা বাঁধের উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়। কেউ ঘরে খাট চৌকি দিয়ে মাচাং বানিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে। এছাড়া নানা ধরনের ফসল ডুবে যায়। শুকনো খাবার ও শিশু খাদ্যের তীব্র সংকটের বিষয়টিও অজানা নয়। ফলে এখন যখন জানা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী বাংলাদেশ অঞ্চলেও ফুলেফেঁপে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বন্যার আশঙ্কায় ঘর ছাড়ছে তিস্তা তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষ। তখন সার্বিক পরিস্থিতি এড়ানো যাবে না। বন্যার আশঙ্কাকে আমলে নিয়ে কার্যকর ও জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। আমলে নেওয়া দরকার, দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার- যা বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদৌলা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া এটাও সংশ্লিষ্টদের এড়ানোর সুযোগ নেই যে, তিস্তার পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার তিস্তা চরাঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি উঠতে শুরু করেছে। চরের রাস্তাঘাট ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধির ফলে নতুন নতুন এলাকা পস্নাবিত হচ্ছে। ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গিয়ে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। বন্যার আশঙ্কায় অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। ফলে সার্বিক বিষয় আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করা অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এমনিতেই বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। প্রতি বছরই বন্যাসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়। ফলে মনে রাখা দরকার, এখন যখন বন্যার আশঙ্কায় ঘর ছাড়ছে তিস্তা তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষ। পানি বৃদ্ধির ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গিয়ে দুর্ভোগ- তখন সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। এমন প্রেক্ষাপটে মানুষের দুর্ভোগ যেন কমানো যায় সেই লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। মানুষকে সচেতন করা থেকে শুরু করে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত হবে এমনটি কাম্য।