সাইবার অপরাধ রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক

30

 

বিভিন্ন সময়ে এই বিষয়টি আলোচনায় এসেছে যে, অপরাধের ধরন যেমন বদলাচ্ছে- তেমনি তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে সাইবার অপরাধ। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, সাইবার অপরাধীরা নিত্যনতুন কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। তথ্য মতে, বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও অক্টোবরকে ‘জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস’ ঘোষণা করতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বিষয়ক জাতীয় কমিটি (এনসিসিএ)। আর সংগঠনটি বলছে, নিত্যনতুন ও অভিনব কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে সাইবার দুর্বৃত্তরা। মূলত শনিবার সকালে অক্টোবর মাসব্যাপী সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা কর্মসূচি ঘোষণা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বিষয়ক জাতীয় কমিটির (এনসিসিএ) নেতারা।
আমরা মনে করি, দাবির বিষয়টি আমলে নেওয়া এবং সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত সামগ্রিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। প্রসঙ্গত, ‘আমাদের বিশ্বকে সুরক্ষিত করি’- এই প্রতিপাদ্যে মাসজুড়ে সারাদেশে শুরু হতে যাচ্ছে অষ্টম সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস (ক্যাম) অক্টোবরের কর্মসূচি। আমরা বলতে চাই, এটা এড়ানোর সুযোগ নেই যে- শাস্তির বিধান সত্তে¡ও দিন দিন বেড়েই চলেছে সাইবার অপরাধ প্রবণতা। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতায় বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণির মানুষের মধ্যে ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোনের ব্যবহার যত বাড়ছে, তার সঙ্গে পালস্না দিয়ে বাড়ছে সাইবার অপরাধও। তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মানুষ প্রতিদিনই সাইবার অপরাধে আক্রান্ত হচ্ছেন বলেও আলোচনা উঠে এসেছে নানা সময়ে। সঙ্গত কারণেই সংশ্লিষ্টদের অনুধাবন করা দরকার, এমন পরিস্থিতি কতটা ভয়ানক হতে পারে!
এবারেও সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের গবেষণার বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, দেশে ২০২২ সালে সংঘটিত নতুন ধরনের অপরাধের মাত্রা বেড়েছে ২৮১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। নিত্যনতুন ও অভিনব কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে সাইবার দুর্বৃত্তরা। এসব অপরাধের মধ্যে রয়েছে নানা মাত্রিক প্রতারণা। এর মধ্যে রয়েছে চাকরি দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস, ভুয়া অ্যাপসে ঋণ দেওয়ার ফাঁদ, সেবা বা পণ্য বিক্রির নামে প্রতারণা। এছাড়া সাইবার অপরাধে শিশু ভুক্তভোগীদের হারও বেড়েছে ১৪০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
এটাও উল্লেখ্য, জেন্ডারভিত্তিক তুলনামূলক পরিসংখ্যানে সাইবার অপরাধের ভুক্তভোগীদের মধ্যে নারীদের হার বেশি (৫৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ)। অন্যদিকে, জানা যাচ্ছে, ভুক্তভোগীদের মধ্যে আইনের আশ্রয় নেওয়ার সংখ্যা দিন দিন কমছে। ২০১৮ সালের জরিপে যেখানে অভিযোগকারীর শতকরা হার ছিল ৬১ শতাংশ, ২০২৩ এ গিয়ে তা কমে ২০ দশমিক ৮৩ শতাংশে নেমেছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত বিষয় যেমন আমলে নিতে হবে; তেমনিভাবে এর পরিপ্রেক্ষিতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। লক্ষণীয়, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইডিতে বহুস্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা, শক্তিশালী পাসওয়ার্ড, ফিশিং চেনার উপায় এবং নিয়মিত সফটওয়্যার হালনাগাদ- এই চারটি বিষয় মেনে চললে অনলাইন ব্যবহারকারী নিজেই অনলাইনে নিজের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে পারবেন। ফলে এটিসহ সার্বিকভাবে জনসচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, সাইবার অপরাধ বাড়তে থাকলে তা কতটা ভীতিপ্রদ! অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাইবারকেন্দ্রিক অপরাধ চক্রগুলো দ্রম্নত শনাক্ত করতে না পারলে তারা একই ধরনের অপরাধ বারবার করতে থাকে। এক্ষেত্রে শাস্তি থেকে পার পেয়ে যাওয়া অপরাধীদের দেখে অন্যরাও এসব অপরাধে উৎসাহিত হয়। ফলে এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখেও সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, নিত্যনতুন ও অভিনব কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে সাইবার দুর্বৃত্তরা- এটি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। অন্যদিকে, দিন দিন বেড়ে চলেছে সাইবার অপরাধ প্রবণতা। ফলে সাইবার অপরাধকেন্দ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। একইসঙ্গে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হতে হবে। প্রয়োজনীয় প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে। মনে রাখা দরকার, এর আগে এমনটি উঠে এসেছিল, সাইবার ক্রাইমের সঙ্গে জড়িত অপরাধীর মধ্যে তরুণদের সংখ্যাই বেশি- ফলে তরুণরা বিপথগামী হলে তা অত্যন্ত শঙ্কাজনক। সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সাইবার অপরাধ রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।