ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে

35

 

দেশের এক তৃতীয়াংশের বেশি মানুষ ধূমপানে আসক্ত। এই আসক্তি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরাসরি ধূমপান না করলেও দেশে প্রায় তিন কোটি মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ। তিনি বলেন, দেশের ৩৭ শতাংশ মানুষ ধূমপান করেন। এছাড়া তাদের আশপাশে অবস্থান করা প্রায় তিন কোটি মানুষ পরোক্ষভাবে ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। এ সব জানেনও না যে তারা ধূমপান না করেও ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ই-সিগারেটের ব্যবহার বাড়ছে। যা আরও অধিক ক্ষতিকর। এটি প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন।
এটা সত্য, বাংলাদেশে তরুণসমাজ ই-সিগারেটে আসক্ত হয়ে পড়ছেন। এই সিগারেটের ভেতরে নিকোটিন, প্রোপাইলিন গøাইকল অথবা ভেজিটেবল গিøসারিন এবং সুগন্ধী মিশ্রিত থাকে। যার কারণে তরুণরা এর প্রতি আকৃষ্ট হয়। এ ছাড়াও শুরুর দিকে ই-সিগারেট সেবনের সময় অধিকাংশ লোকই নিশ্চিত ছিলেন না যে, এতে নিকোটিন আছে কিনা। সেবনকারী ৬৫ ভাগই স্বাদের কারণে ই-সিগারেট ব্যবহার করার চেষ্টা করেন। আবার স্টাইলের কারণেও অনেকে ই-সিগারেট ব্যবহার করছেন। ভারতসহ বিশ্বের ৪২টি দেশ এটা নিষিদ্ধ করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এটা নিষিদ্ধে আইন সংশোধন করেছে। ই-সিগারেট ও বিড়ি-সিগারেটের খুচরা বিক্রি নিষিদ্ধকরণ তরুণদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এর আগে বাংলাদেশের ১৫৩ জন সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত একটি চিঠিতে সুপারিশ করেছিলেন, যেন বাংলাদেশে ই-সিগারেট আমদানি, উৎপাদন, বিক্রি, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে তামাকবিরোধী বা জনস্বাস্থ্যের কোনো ইস্যুতে বা কোনো জাতীয় ইস্যুতে একসঙ্গে এত বেশি এমপির চিঠি পাঠানোর মতো কোনো ঘটনার নজির নেই। দেশে প্রতি বছর তামাকজনিত রোগে ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ। প্রকাশ্যে ধূমপান করলে ৩০০ টাকা জরিমানা। তা সত্তে¡ও মানুষ প্রকাশ্যে ধূমপান করছে। বাসের চালক হেলপারও প্রকাশ্যে ধূমপান করছে। যেন দেখার কেউ নেই। প্রতিবাদ করলেও কোনো ফল হয় না।
হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহণে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা (ডিএসএ) থাকলে অধূমপায়ীদের পাশাপাশি সেবাকর্মীরাও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। থাইল্যান্ড, নেপাল, আফগানিস্তানসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কিছু দেশ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ সূচকে ভালো করলেও বাংলাদেশ এক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। তবে ডিএসএ বাতিলের প্রস্তাব সংবলিত খসড়া সংশোধনীটি পাস হলে বাংলাদেশও এসব দেশের কাতারে পৌঁছাবে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, তামাকপণ্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা বন্ধের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে।
মনে রাখতে হবে, তামাক সেবনের ক্ষেত্রে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বাংলাদেশে। এমন পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা করেছেন। আমরা মনে করি, আমাদের সামনে এটি একটি বড় মাইলস্টোন। এই লক্ষ্য অর্জন করতে গেলে ধাপে ধাপে আমাদের কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশকে অবশ্যই তামাকমুক্ত করতে হবে।