তৃণমূল বিএনপিতে আসছে চমক, যোগ দিচ্ছেন শমসের মবিন ও তৈমুর আলম

29

কাজির বাজার ডেস্ক

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শুরু হয়েছে নানা হিসাব-নিকাশ। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া বিএনপিকে কোণঠাসা করতে নেওয়া হয়েছে নতুন আরেকটি উদ্যোগ। তারই অংশ হিসেবে সাবেক বিএনপি নেতা প্রয়াত নাজমুল হুদার প্রতিষ্ঠিত দল তৃণমূল বিএনপিতে আনা হচ্ছে নতুন চকম। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর প্রথম কাউন্সিলে আনুষ্ঠানিকভাবে দলটিতে যোগ দেবেন রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিত ও আলোচিত মুখ শমসের মবিন ও অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, একটি রাজনৈতিক মহলের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতায় আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তৃণমূল বিএনপির প্রথম কাউন্সিল। আর এই কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী বিএনপির নামের সঙ্গে মিল থাকা তৃণমূল বিএনপিতে নতুন চমক থাকছে। দলটির শীর্ষ দুই পদে (চেয়ারম্যান ও মহাসচিব) আসতে যাচ্ছেন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ও চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য (বহিষ্কৃত) এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহŸায়ক তৈমুর আলম খন্দকার। শুধু তারা নয়, পর্যায়ক্রমে বিএনপি থেকে বিভিন্ন সময় বাদ পড়া এবং ছেড়ে দেওয়া নেতারা এ দলে যোগ দেবেন। সেই তালিকায় বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তারও আছেন।
এ প্রসঙ্গে তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ‘আমি তো আর আওয়ামী লীগে যোগ দেব না। সারা বছর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রাজনীতি করে আসছি। আর বিএনপি আমাকে গত দেড় বছর ধরে বহিষ্কার করে রেখেছে। আমি তো আর দল ছাড়িনি। একজন বহিষ্কৃত লোক কত বছর একটা পতাকা টেনে নিতে পারে? এখন আমার পরিচয় কী? মারা গেলে আমার পরিচয় কী হবে? কোন ব্যানারে আমি বক্তব্য দেব। আমার জন্ম তো রাজপথে। যেহেতু বিএনপি আমাকে বহিষ্কার করেছে, সেহেতু আমাকে এখন তৃণমূল বিএনপিকে আখড়ে ধরে থাকতে হবে। আমি সেখানেই যাচ্ছি।
তৃণমূল বিএনপির শীর্ষ দুই পদের একটিতে আপনি থাকছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আশা করি, শীর্ষ পদেই থাকব। তিনি আরও বলেন, আমাদের রাজনীতি হবে ধর্মীয় মূল্যবোধ, জাতীয়তাবাদী ধারা ও খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে।
বিএনপির আরেক নেতা শমসের মবিন চৌধুরী কি তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, তিনিও আমাদের সঙ্গে থাকছেন। কথা হয়েছে। ১৯ তারিখ তৃণমূল বিএনপির সম্মেলন আছে।
দলে যোগ দেওয়ার জন্য বিএনপির আরও অনেক নেতা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে শমসের মবিন চৌধুরীর কাছে ফোন দেওয়া হলে তিনি একটা মিটিং আছেন বলে ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে তিনি আর ফোন ধরেননি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে পররাষ্ট্র-সচিব ছিলেন শমসের মবিন। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। ২০০৭ সালে তিনি অবসরে যান। ২০০৮ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন এবং ২০০৯ সালে দলের ভাইস চেয়ারম্যান হন। ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগ দেন ও প্রেসিডেন্ট সদস্য হন। যদিও এখন তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিকল্পধারা থেকে পদত্যাগ করেননি।
গত ১৬ ফেব্রæয়ারি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব জাহাংগীর আলমের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। দলটির নিবন্ধন নম্বর ৪৫। নির্বাচনী প্রতীক ‘সোনালী আঁশ’। নাজমুল হুদার মৃত্যুর পর দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন তার মেয়ে অন্তরা হুদা।
তৃণমূল বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিতব্য দলটির প্রথম সম্মেলন উপলক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সম্মেলন উপলক্ষ্যে ব্যাপক শো-ডাউন করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সম্মেলন শেষে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মাঠে থাকার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তৃণমূল বিএনপির একজন নেতা বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল বিএনপির নেতৃত্বে নতুন মুখ আনা হচ্ছে। যারা এক সময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও তৃণমূল বিএনপি অংশ নেবে। তখন বিএনপিতে যারা নির্বাচন করতে আগ্রহী থাকবেন তারা এ দলে যোগ দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন।
এ বিষয়ে তৃণমূল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অন্তরা হুদা বলেন, শমসের মুবিন চৌধুরী ও তৈমুর আলম খন্দকার আমাদের দলে যোগ দিচ্ছেন। তারা একটা ভালো পদে থাকবেন বলে আশা করি। আমরা এমন একটা সময় দলের নিবন্ধন পেয়েছি, সেখানে কারও ইন্টারেস্ট ছিল কিনা সেটা আমি জানি না।
এক প্রশ্নের জবাবে অন্তরা হুদা বলেন, বিএনপিকে ভাঙার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই। আবার তাদের কর্মকাÐকে সমর্থন করি সেটাও কিন্তু না। বিএনপি হয়ত নির্বাচন আসবে। একটা গণতান্ত্রিক দেশে সব দলের নির্বাচন অংশ নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে অংশ নিলেই আমরা সরকারের দালাল হয়ে গেছি, এটাও তো ঠিক না। তবে, আমরা কোনো জোটে যাব কিনা, সেটা এখনও ঠিক করিনি।