ডিম, আলু ও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে সেই আগের দামেই

3

প্রথমবারের মতো আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে থেকে ভোজ্যতেল ও চিনির দামও নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তবে নির্ধারিত মূল্যে বাজারে এসব পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন করে বেঁধে দেয়া ডিম, আলু ও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে অনেকটা আগের মতোই।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশি দামে কিনে সরকার নির্ধারিত দামে এসব পণ্য বিক্রি সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নতুন তিন ভোগ্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করে নিয়মিত তদারকি না করলে তা চিনি ও ভোজ্যতেলের মতো শুধু ঘোষণায়ই সীমাবদ্ধ থাকবে।
সাবেক খাদ্য সচিব আব্দুল লতিফ মন্ডল বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা কিনছেনই বেশি দামে। তাহলে সরকার নির্ধারিত দামে কীভাবে তারা বিক্রি করবেন? আগেও পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বাজার সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি সরকার। নতুন নির্ধারিত পণ্যের ক্ষেত্রেও সেটা হওয়ার শঙ্কাই বেশি। টাকার অবমূল্যায়নের কারণে বাজারে দাম বাড়ছে। আমদানি ও স্থানীয় পর্যায়ে সিন্ডিকেশন গুরুতর আকার ধারণ করেছে। সব পণ্যেই সিন্ডিকেশনের কারণে দাম অনেক বেশি। আবার উৎপাদনের তথ্যেও সমস্যা রয়েছে। যে কারণে পলিসিও ঠিকভাবে নেয়া যায় না। গত বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি আলুর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩৫-৩৬ টাকা, দেশী পেঁয়াজ ৬৪-৬৫ টাকা এবং প্রতিটি ডিমের মূল্য ১২ টাকা নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া প্যাকেটজাত সয়াবিন ও খোলা সয়াবিনের দাম লিটারে ৫ টাকা কমিয়ে যথাক্রমে ১৬৯ ও ১৪৯ টাকা এবং পাম অয়েলের দাম লিটারে ৪ টাকা কমিয়ে ১২৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
যদিও বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, আলু প্রতি কেজি খুচরায় ৪৮-৫২ টাকা, পাবনার পেঁয়াজ ৮৫-৯০ টাকা, ফরিদপুরের পেঁয়াজ ৭৫-৮৫ টাকা এবং প্রতি পিস ডিম সাড়ে ১২ থেকে ১৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, বেশি দামে ক্রয় করে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়। কারণ পাইকারিতে আগের দামেই কিনতে হচ্ছে তাদের। খুচরা ব্যবসায়ী আলিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা কম দামে কিনতে পারলে কম দামে বিক্রি করতে পারব। তা না হলে লোকসানে তো পণ্য বিক্রি করা সম্ভব নয়।’
এদিকে অপরিবর্তিত রয়েছে নতুন নির্ধারিত পণ্যের পাইকারি বাজারমূল্যও। বাজারে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮৫০ থেকে ৩ হাজার ৯০০ টাকা। আর ফরিদপুরের ৫০ কেজির প্রতি বস্তা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি কেজি পাবনার পেঁয়াজ ৭৭-৭৮ টাকা এবং ফরিদপুরের পেঁয়াজ ৬৮-৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলু বিক্রি হচ্ছে পাঁচ কেজির প্রতি পাল্লা ২২০-২৪০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি কেজি আলুর পাইকারি দাম পড়ছে ৪৪-৪৮ টাকা। ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি হালি ৫০ টাকায়।
পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মো. শামছুল ইসলাম বলেন, ‘পাবনার হাট থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭২ টাকায় কিনতে হয়। সেটা ৭৭-৭৮ টাকায় বিক্রি করছি। কারণ ঢাকায় আনতে খরচ আছে। আর ফরিদপুরের পেঁয়াজ প্রতি কেজি প্রায় ৬৫ টাকার বেশি দিয়ে কিনতে হয়। তাহলে কীভাবে আমরা কম দামে বিক্রি করব?’
এদিকে দেশের বিভিন্ন জেলায় আলু, পেঁয়াজ ও ডিমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্য অভিযান পরিচালনা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ সময় সারা দেশের ৩৯টি জেলার ৯০টি প্রতিষ্ঠানে ২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ভোক্তা অধিকারের ৪১টি টিম সারা দেশের ৫৩টি বাজারে অভিযান পরিচালনা করে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারিত মূল্যেই বিক্রি হচ্ছে। ডিমের দাম মাঝখানে অনেক বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ভোক্তা অধিকারের কঠোর তদারকির কারণে আড়াই টাকা প্রতি পিসের দাম কমানো গেছে। এখন সাড়ে ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খামারগুলো ১১ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ১১ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করছে। খামার পর্যায়ে দাম কমাতে হবে। আলুর ক্ষেত্রেও একই বিষয়। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গতকালও সারা দেশে অভিযান চলেছে। যদিও আমাদের জনবল সংকট। তার পরও বাজার নিয়ন্ত্রণে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
এদিকে বেঁধে দেয়া তিনটি কৃষি পণ্যের দাম শক্তভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ভোক্তা অধিকারের যথেষ্ট লোকবলের অভাব রয়েছে। এর পরও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা শক্ত অবস্থানে রয়েছি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দেয়া দাম ঠিক করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কোনো কারণ ছাড়াই বাজারে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যও রয়েছে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। আমাদের বিশাল বাজার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গোলের কিছুটা ঘাটতি থাকতে পারে। সেটি কাভার করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সব সময় ব্যবসায়ীদের যে চাপে রাখা যায় তা কিন্তু নয়। এর পরও আমরা এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার দিচ্ছি।’