নভেম্বরে তফসিল জানুয়ারির শুরুতে ভোট

66

কাজির বাজার ডেস্ক
রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে মতানৈক্যের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এগুচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনে কোন দল অংশ নেবে, কে নেবে না- সে বিতর্ক আমলে না নিয়ে আগামী ডিসেম্বর বা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়ে ঘোষিত রোডম্যাপ বাস্তবায়নে ইসি সচিবালয় ও মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনাও দিয়েছে কমিশন।
ইভিএম কেনা ও মেরামতের অর্থ না পেয়ে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পনা থেকে সরে এসে সব আসনে (৩০০) ব্যালটে ভোট নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ নিয়ে ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ উন্নয়ন সহযোগীদের চাপ আছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই এবারের সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তারা বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
ইসি কর্মকর্তারা বলেছেন, এবার ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৩২ লাখ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটিতে। আড়াই হাজার বেড়েছে ভোটকেন্দ্র। যার জন্য বাজেট ৭৫০ কোটি থেকে হাজার কোটি টাকায় পৌঁছে যেতে পারে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। ১ নভেম্বর শুরু হবে সেই নির্বাচনের ক্ষণগণনা। সে কারণে আগামী নভেম্বর মাসের প্রথমার্র্ধে তফসিল দিয়ে ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাতে ভোট নিতে চায় ইসি। ইতোমধ্যে এ ধরনের একটা আভাষ মিলেছে সিইসিসহ অন্য কমিশনারদের বক্তব্যে।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ভোটের জন্য ১১ ধরনের মালামাল কেনাকাটা শুরু করেছে ইসি। প্রায়৭০ শতাংশই শেষ, আমরা অন ট্রাকে আছি। যার জন্য প্রায় ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কেনাকাটার জন্য সর্বনিম্ন দরদাতা ও কোয়ালিটি দেখা হয়েছে। যেমন ৮০ হাজার স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স লাগছে, এ বাক্সের টেন্ডার পেয়েছে আরএফএল। স্টাম্প-প্যাডের জন্য নতুন করে টেন্ডার আহŸান করা হয়েছে। কেনাকাটার মধ্যে রয়েছে অফিসিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাস সিল, লাল গালা, প্যাকিং বাক্স, অমোচনীয় কালি, বিভিন্ন ফরম, প্যাকেট, সুই-সুতা, খাম, মোমবাতি সরবরাহ হয়েছে, যা পাঠানো হচ্ছে জেলায় জেলায়। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহের মধ্যে সবকিছু গুছিয়ে নেয়া হবে।
অশোক কুমার দেবনাথ জানান, ব্যালট পেপারের জন্য নির্ধারিত প্রেস যথাসময়ে কাগজ সংগ্রহ ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়ের পর মুদ্রণের কাজ করবে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল প্রস্তুত ও ভোটকেন্দ্র চ‚ড়ান্ত হবে, প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রস্তুতি চলবে। নানা ধরনের আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক, আইন শৃঙ্খলবাহিনী, পর্যবেক্ষক সংস্থার বিষয়গুলো নিয়ে ধাপে ধাপে কাজ থাকবে। তবে এবার মোট ভোটকেন্দ্র হয়েছে ৪২ হাজার ৩৮০টি। গতবারের চেয়ে বেড়েছে প্রায় আড়াই হাজার। যার জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ ভোট কর্মী বাড়বে। এবার প্রায় সাড়ে ৯ লাখ কর্মী জাতীয় নির্বাচনে কাজ করবে।
বাজেটের বিষয়ে অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, চলতি অর্থ বছর ইসির সব ধরনের নির্বাচনের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ২ হাজার একশ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৭৫০ কোটি থেকে ৮০০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে জাতীয় নির্বাচনে, এটা বাড়তেও পারে। যদিও আগামী ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির শুরুতে সংসদ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র বাড়ায় এবং জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে কম বেশি হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে বলে ইসির নির্বাচনী বাজেট শাখা জানিয়েছে। যার অধিকাংশ টাকাই যাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খাতে। পরবর্তী সময় ব্যয় ধরা হয়েছে প্রশিক্ষণ, ব্যালট ছাপা, নির্বাচন সামগ্রী কেনাকাটা, যাতায়াত প্রভৃতি খাতে। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যয় হয় প্রায় সাড়ে ৮শ কোটি টাকা।
এদিকে জাতীয় নির্বাচনের কয়েক মাস আগে দুই প্রধান রাজনৈতিক শিবির নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকায়; বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর নির্বাচনে না আসার ঘোষনায় ইসি ব্রিবত অবস্থায় আছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেছেন, নির্বাচনের কয়েক মাস বাকি থাকায় এর মধ্যেই রাজনৈতিক কোনো সমাধান আসবে বলে আশা করি আমরা। এটা রাজনৈতিক বিষয়, রাজনৈতিকভাবে সমাধান হতে দেন, এক সময় না এক সময় সমাধান হয়ে যাবে। ইসি চাপে আছে কিনা- এ বিষয়ে তিনি বলেন, যত সময় কমে আসবে, ততই প্রত্যেকে চাপের মধ্যে থাকবে। তারাও থাকবে, আমরাও চাপের মধ্যে থাকব। সময়ই বলে দেবে কখন কী হবে। তবে আমরা রোডম্যাপ অনুযায়ী প্রস্তুত আছি।
এদিকে হাবিবুল আউয়াল কমিশন শপথ নেয়ার পরই গত বছরের ১৭ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোসহ নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, সুশীল সমাজ, বিভিন্ন মিডিয়ার সম্পাদক, সাংবাদিক নেতাসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি। গত মার্চে নতুন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়। এরপর আইনি কাঠামো সংস্কারে হাত দেয় কমিশন। তাতে ইসি নির্বাচনের গেজেট প্রকাশের পরও ফলাফল বাতিলের ক্ষমতাসহ বেশকিছু আইন পরিবর্তনের সুপারিশ ও প্রস্তাবনা পাঠায়, যা জাতীয় সংসদে পাস হয়ে আইন পরিণত হয়েছে। সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তনের বিষয়টিও সুচারুভাবে শেষ করেছে ইসি। সম্প্রতি দুটি নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দিয়েছে তারা। এ নিয়ে দলের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪৬।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর বা আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথমার্ধে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ লক্ষ্যে আমরা একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছি। এ রোডম্যাপ অনুযায়ী আমরা কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, এর আগে আমরা ৫টি সিটি করপোরেশনের ভোটসহ সংসদীয় উপনির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ করেছি। আগামীতেও আমরা সব দলের সমন্বয়ে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে চাই। নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরুর পরপরই আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করার পর প্রথা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে ইসি। তারপর কমিশন সভায় বসে ভোটের দিনক্ষণ চ‚ড়ান্ত করা হবে বলে জানান তিনি।
প্রথা অনুযায়ী, ভোটের তারিখের আগে ৪০-৪৫ দিন সময় রেখে তফসিল ঘোষণা হয়। এক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমা, বাছাই, প্রত্যাহারের সময় ও প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারের জন্য সময় রাখা হয়।
যদিও জাতীয় নির্বাচনে বৃহৎ পরিসরে ইভিএম ও সিসি ক্যামেরা থাকছে না। যা ভোট সুষ্ঠু করতে ইসির জন্য চ্যালেঞ্জ স্বরূপ। তবে প্রযুক্তিনির্ভর ভোট ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে নভেম্বরেই নির্বাচনী অ্যাপ চালুর প্রস্তুতি চলছে ইসিতে। নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন ব্যালট পেপারে হলেও প্রার্থীদের সুবিধা এবং ভোটারদের ভোগান্তি কমাতে আমাদের এ উদ্যোগ।
সবশেষ নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয় ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর, ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর ও ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর।