হবিগঞ্জজুড়ে স্প্রে পার্টির আতঙ্ক, রাত জেগে পাহারা

11

 

হবিগঞ্জ সংবাদদাতা

হবিগঞ্জে এক অভিনব পন্থায় মালামাল লুটপাটের ঘটনা ঘটাচ্ছে স্প্রে পার্টির সদস্যরা। ঘুমের মধ্যে অথবা কৌশলে খাবারের সাথে চেতনানাশক স্প্রে করে বাসা-বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকার এবং নগদ টাকাসহ যাবতীয় মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে চক্রটি।
জেলার শায়েস্তাগঞ্জ ও চুনারুঘাট উপজেলায় ওই পার্টির সদস্যদের সবচেয়ে বেশি উপদ্রব থাকলেও হবিগঞ্জ জুড়েই স্প্রে পার্টি আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। চক্রের সদস্যদের হাত থেকে রেহাই পেতে রাত জেগে অনেক এলাকায় পাহারা দিতেও দেখা গেছে স্থানীয়দের। ইতোমধ্যে ওই পার্টির সদস্যরা ডজন খানেক লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়েছে।
সাধারণ মানুষের অভিযোগ- একের পর এক চেতনানাশক স্প্রে প্রয়োগ করে মালামাল লুটপাটের ঘটনা ঘটলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না পুলিশ। আর এর থেকে বাদ যাচ্ছে না পুলিশ ব্যবসায়ীসহ কেউই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২০ জুলাই জেলার শায়েস্তাগঞ্জ পৌর এলাকার লেঞ্জাপাড়া গ্রামে প্রথমবার এক সাথে ৪টি বাসায় পরিবারের সদস্যদের চেতনানাশক স্প্রে প্রয়োগ করে মালামাল লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এরপর ২৮ জুলাই সদর উপজেলার লস্করপুর ইউনিয়নের বনদক্ষিণ গ্রাম, ৩ আগস্ট শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভাস্থ দক্ষিণ লেঞ্জাপাড়া সাকিনের সাবাসপুর সংলগ্ন মরহুম ডাক্তার এম এ আব্দুর রউফ এর বাসার জানালার গ্রিল কেঁটে ৬ জনের মুখমন্ডলে স্প্রে করে অজ্ঞান করে অনুমান ৪ ভরি স্বর্ণালংকারসহ মালামাল লুট, ১২ আগস্ট শুক্রবার দিবাগত রাতে একই উপজেলায় হবিগঞ্জ ডিবি পুলিশের এএসআই জুয়েল মিয়ার ভাড়াটিয়া বাসায় চেতনানাশক স্প্রে করে পরিবারের লোকজনকে অজ্ঞান করে মোবাইল, নগদ টাকা মালামাল লুট করে নিয়ে যায় চক্রের সদস্যরা।
এছাড়াও ১৭ আগস্ট দিবাগত রাতে ব্যবসায়ী কামরুল হক চৌধুরীরর পরিবারের সদস্যরা রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়েন। পরে ঘুমের মধ্যে তারা অচেতন হয়ে পড়লে বাসার রান্নার ঘরের পেছন দিয়ে স্প্রে পার্টি চক্রের সদস্যরা ঘরে প্রবেশ করে। পরে তারা বাসায় থাকা নগদ ৫ লাখ টাকা ও ৫ ভরি স্বর্ণালংকারসহ যাবতীয় মালামাল লুট করে নিয়ে চলে যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, একের পর এক স্প্রে পার্টির সদস্যরা এমন কর্মকান্ড চালিয়ে আসলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। আইনশৃঙ্খলা বাহীনির তৎপরতা না থাকায় প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। স্থাীয়রা বলেন, পুলিশ সদস্যরা স্প্রে পার্টির কাউকে গ্রেফতার করতে না পারলেও রাত জেগে পাহারার সময় শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় চেতনানাশক স্প্রে ও উপকরণসহ হাতেনাতে একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে।
ব্যবসায়ী কামরুল হক চৌধুরী জানান, ধারণা করা হচ্ছে আমার বাসায় মালামাল লুটের আগে জানালা দিয়ে রান্না ঘরের খাবারের মধ্যে আগেই স্প্রের মাধ্যমে কোন কিছু দিয়ে রেখেছিল চক্রটি। পরে খাওয়া দাওয়া শেষ হলে সকলেই অচেতন হয়ে পড়ে। আর এ সুযোগে তারা বাসায় থাকা নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকারসহ মালামাল লুট করে নিয়ে চলে যায়।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলি জানান, স্প্রে পার্টি চক্রের সদস্যদের ধরতে আইন-শৃঙ্খলা বাহীনির সদস্যরা তৎপর রয়েছে। ইতোমধ্যে একজনকে আটক করে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এসপি বলেন, আশাকরি দ্রæত স্প্রে পার্টির মূলহোতাসহ সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে।