সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে

44

 

একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। কত পরিবার যে সড়ক দুর্ঘটনার কারণে নিঃস্ব হয়ে গেছে, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। নতুন আইন হয়েছে। মহাসড়কে শ্লথগতির যানবাহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ডিভাইডার বসানো হয়েছে; কিন্তু কোনোভাবেই সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ত্রæটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ ও যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনগণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার ঘাসিরদিয়া এলাকায় মাইক্রোবাস ও পাথরবোঝাই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয়েছে সাতজন। আহত হয়েছে চারজন। হতাহতরা সবাই মাইক্রোবাসটির যাত্রী। ছুটিতে তারা ঢাকার সাভার থেকে সিলেটে ঘুরতে যাচ্ছিল। মাইক্রোবাসটির অতিরিক্ত গতি দুর্ঘটনার মূল কারণ বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। একই দিন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, যশোরের মণিরামপুর, মাদারীপুরের শিবচর, পাবনার ঈশ্বরদীর সাহাপুরে আলাদা দুর্ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে হানিফ ফ্লাইওভারে এক মোটরসাইকেলের ধাক্কায় অন্য মোটরসাইকেলের চালক নিহত হয়েছেন। বনানীতে নৌ সদর দপ্তরের সামনে কাভার্ড ভ্যানের পেছনে রডবোঝাই ট্রাক ধাক্কা দিলে ট্রাকটির চালক নিহত হন।
দেশের সড়ক-মহাসড়কে এমন অনেক দুর্ঘটনা ঘটে, যেগুলোকে দুর্ঘটনা না বলে হত্যাকাÐও বলা যায়। অনেক চালক রাত-দিন গাড়ি চালান। অত্যধিক ক্লান্তি এবং গাড়ি চালাতে চালাতে ঘুমিয়ে যাওয়ার কারণেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে।
আবার বেপরোয়া গতি, প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানো, গাড়ি চালাতে চালাতে মোবাইল ফোনে কথা বলাসহ বহু অনিয়ম ঘটে রাস্তায়; যেসব কারণে রাস্তায় মৃত্যুর মিছিল লেগেই আছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত জুলাই মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫১১টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৫৭৩ জন এবং আহত হয়েছে এক হাজার ২৫৬ জন।
বছর তিনেক আগের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রায় ৪০ শতাংশ চালকেরই বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। আবার বৈধ লাইসেন্স নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন এমন চালকদের ৩১ শতাংশ কোনো অনুমোদিত ইনস্টিটিউট থেকে প্রশিক্ষণ নেননি। ফলে চালকদের বেশির ভাগই ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত নন। আবার দেশের সড়ক-মহাসড়কে যেসব যানবাহন চলছে তার বেশির ভাগেরই ফিটনেস নেই। ফিটনেসবিহীন গাড়িও দুর্ঘটনার কারণ হয়। চালকদের মাদকাসক্তিও সড়ক দুর্ঘটনার বড় কারণ।
আমরা কোনো মতেই এমন অনিরাপদ সড়ক চাই না। প্রতিদিনের এই মৃত্যুও কাম্য নয়। যেকোনো মূল্যে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। চালকদের লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। দক্ষ ও যোগ্য চালক ছাড়া কারো হাতে লাইসেন্স তুলে দেওয়া যাবে না। গাড়ির ফিটনেসের ব্যাপারে কোনো আপস করা যাবে না। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জনের অন্যতম শর্ত সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা। যেকোনো মূল্যে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।