সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আরও সক্রিয় হতে হবে

42

 

আইন করাসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পরও দেশে সাইবার অপরাধ বাড়ছে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম, স্কাইপে ভুয়া আইডি খুলে জালিয়াতি ও প্রতারণা, বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে মিথ্যা ও মানহানিকর তথ্য প্রচার, আইডি হ্যাক, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি, অনলাইনে প্রশ্নপত্র ফাঁস, জুয়া খেলাসহ অন্তত ১৩ ধরনের সাইবার অপরাধ ঘটছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সাইবার পরিসরে রাষ্ট্রবিরোধী নানা অপপ্রচার, অনলাইন জুয়াসহ বিভিন্ন প্রতারণা এবং ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানহানিকর কর্মকাÐ বন্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) সক্ষমতার ঘাটতি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রামের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার সঙ্গে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো চুক্তি (মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স ট্রিটিÑএমলেট) করতে পারেনি।
অন্যদিকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের হিসাবে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৬১ লাখের বেশি। এর মধ্যে মুঠোফোনে ইন্টারনেট গ্রাহক ১১ কোটি ৪০ লাখের বেশি এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গ্রাহক এক কোটি ২০ লাখের বেশি। গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত গ্রাহক বেড়েছে ২০ লাখ।
শহরের সীমা ছাড়িয়ে তথ্য-প্রযুক্তির সেবা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ তার সুফলও পাচ্ছে। ঘরে বসেই ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছে। দেশে-বিদেশে নানা রকম যোগাযোগ হচ্ছে। বহু তরুণ-তরুণীর আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে তারা বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। ই-কমার্সের সুবিধা ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। এত বিপুল সুবিধার পাশাপাশি কিছু সমস্যাও তৈরি হচ্ছে। ক্রমেই সাইবার ক্রাইম বা তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ বেড়ে চলেছে।
সাধারণ মানুষ নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীরা অপরাধ ও অন্যায়ের শিকার হচ্ছে। যে হারে সাইবার অপরাধ বাড়ছে সে অনুযায়ী যথাযথ উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ। অনলাইন জুয়ার সাইটগুলো বন্ধ করা যাচ্ছে না। ফেসবুক ও ইউটিউবে দেশবিরোধী প্রপাগান্ডা, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বিরুদ্ধে মানহানিকর কনটেন্ট বেশি প্রচারিত হচ্ছে। ইন্টারনেটে আপত্তিকর ছবি প্রচার, বø্যাকমেইল ও প্রতারণার ফাঁদ পাতার মতো সামাজিক অপরাধ থেকে শুরু করে মানবপাচার, মাদক বেচাকেনা, উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গি কর্মকাÐের মতো অনেক অপরাধই ঘটে থাকে তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে।
সাইবার অপরাধ দমন এখন একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। এজাতীয় অপরাধ দমনে আমাদের দুর্বলতা রয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তি যত এগোবে, এর অপব্যবহার কিংবা প্রযুক্তিকেন্দ্রিক অপরাধ ততই বাড়বে। তাই তথ্য-প্রযুক্তির সুবিধা সম্প্রসারণের পাশাপাশি সাইবার অপরাধ দমনে আমাদের আরো বেশি সক্রিয় হতে হবে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী সাইবার স্কোয়াড গড়ে তুলতে হবে। সারা দেশের থানা পর্যায়ে প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ দমনের সক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে।