ডেঙ্গু প্রতিরোধে চাই সমন্বিত কর্মকৌশল

7

 

জুনের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া ডেঙ্গুর ব্যাপক বিস্তার জুলাইয়েও অব্যাহত রয়েছে। চলতি মাসের প্রথম ২২ দিনে এডিস মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় ২৩ হাজার রোগী। এ সময়ে ডেঙ্গু প্রাণ কেড়েছে ১২০ জনের। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল-ক্লিনিকে ভর্তি হননি এবং জ্বর শনাক্ত হয়নিÑ এমন লোকজনের হিসাব কোনো সংস্থার কাছে থাকার কথা নয়। যেহেতু বর্ষাকাল এবং এটি ডেঙ্গুজ্বরের মৌসুম, সেহেতু এই জ্বরে আরও বেশিসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হতে পারেÑ এমন আশঙ্কা বাস্তবসম্মত।
এই রোগ সংক্রমণ ও বিস্তারের প্রকৃতি খেয়াল করলে এটি এড়ানোর কিছু উপায় আমরা সহজেই অবলম্বন করতে পারি। সেটি হলো বাসাবাড়ির ভেতর ও এর আশপাশে পানি জমতে না দেওয়াÑ যাতে এডিস মশার বংশবিস্তার ঠেকানো যায়। দ্বিতীয়ত, মশার কামড় এড়ানোর জন্য সতর্ক থাকা, বাসা মশামুক্ত রাখার চেষ্টা করা, ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা। বিশেষভাবে সতর্ক থাকা প্রয়োজন শিশুদের ব্যাপারে। তাদের খালি গায়ে না রাখা। কেননা এডিস মশা সাধারণত শরীরের উন্মুক্ত অংশে বসে। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সতর্কতার পাশাপাশি সামাজিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগও বিশেষভাবে প্রয়োজন। সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় নিয়মিত মশানিধন অভিযান পরিচালনা করা। এডিস মশা নালা-নর্দমার নোংরা পানিতে জন্মায় না, বরং জন্মায় মানুষের গৃহের ভেতরে ও এর আশপাশে জমে থাকা অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার পানিতে। ছাদ ও বারান্দায় জমে থাকা বৃষ্টির পানি, গাছের টব, ডাবের খোসা ইত্যাদি আধারে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা জন্মায়। বর্ষাকালে প্রায়ই থেমে থেমে বৃষ্টি হয় বলে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকে। তাই জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি ঘটে থাকে এবং এটিকেই ডেঙ্গুজ্বরের মৌসুম বলা হয়। প্রাকৃতিকভাবে জুন থেকেই শুরু হয় ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার প্রজনন ঋতু। তবে দেখা যাচ্ছে, বছরের অন্যান্য সময়েও লোকজন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছেÑ সিটি করপোরেশন যে ওষুধ ছিটাচ্ছে, এতে মশা মরে না। যে ওষুধে মশা মরবে, সেটিই ছিটাতে হবে। চলতি বছর রোগী বাড়ছে, মৃত্যু বাড়ছে। ফলে চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রেও সবাইকে সর্বোচ্চ সজাগ থাকতে হবে। অনেকে জ্বর হলে ‘দেখি, দেখছি’ বলে সময়ক্ষেপণ করেনÑ যাতে বড় ধরনের বিপদ হতে পারে। এ সময় জ্বর হলেই ডেঙ্গু পরীক্ষা বাঞ্ছনীয়। সিটি করপোরেশনের উচিত হবে উপদ্রæত এলাকাগুলো চিহ্নিত করে দ্রæত ব্যবস্থা নেওয়া। ঢাকার বাইরে যেসব এলাকায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি, সেখানেও জোরদার কর্মসূচি নিতে হবে। যেহেতু এডিস মশা থেকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব, সেহেতু আমাদের প্রধান কর্তব্য হবে এর প্রজননক্ষেত্রগুলো ধ্বংস করা। এমন পদক্ষেপ নিতে হবেÑ যাতে কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত না হন। আবার আক্রান্ত হলেও দ্রæত সময়ে তাকে যথাযথ চিকিৎসাসেবা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে গাফিলতির কোনো অবকাশ নেই। ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে হলে সমন্বিত জাতীয় কর্মকৌশল নির্ধারণ করা জরুরি।