যত্রতত্র বিদ্যুতের খোলা তারে তাহিরপুরের হাওর যেনো মরণ ফাঁদ

43

বাবরুল হাসান বাবলু, তাহিরপুর থেকে

যত্রতত্র বিদ্যুতের খোলা তারে তাহিরপুরের হাওর যেনো মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। হাওর পথে নৌকায় চলাচল করতে গিয়ে গত দু’বছরে পর্যটক সহ মৃত্যু ৪ আহত অর্ধশতাধিক। সুনামগঞ্জ জেলার হাওড় উপজেলা তাহিরপুর। তাহিরপুরের অধিকাংশ গ্রামই হাওড় কেন্দ্রিক। বর্ষায় এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাতায়াতের একমাত্র বাহন নৌকা। সেই সাথে গত ১০ বছরে টাঙ্গুয়া হাওরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে হাউজবোট কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্প। প্রতিদিনই শত শত হাউজ বোট কিংবা ছোট নৌকা হাজারো পর্যটক দের নিয়ে নদী কিংবা হাওড়পথে ঘুরে বেড়ান উপজেলার টাঙ্গুয়া, বারেক টিলা, জাদুকাটা ও ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্প এলাকা। আর ঘুরতে গিয়ে হাওড় বা নদী পারাপারের বিদ্যুতের খোলা তাড়ে জড়িয়ে ঘটছে মুত্যুর মত ঘটনা। গত বৃহস্পতিবার টাঙ্গুয়া হাওড় ঘুরে রাতে ট্যাকেরঘাট যাওয়ার পথে শ্রীপুর ইউনিয়নের তরং গ্রামের পিছনে পালই হাওরে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে ৩ পর্যটক পানিতে পরে যান। সে সময় স্থানীয় লোকজন রুবেল ও সুমন কে গুরুতর আহত অবস্থায় পানি থেকে উদ্ধার করেন। এর মধ্যে জামরুল হাসান (৫৫) নামে একজন হাওরের পানিতে পরে তলিয়ে যান। শুক্রবার সকালে সুনামগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে বলে জানিয়েছেন তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ ইফতেখার হোসেন।
পর্যটকবাহী নৌকাটি কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল উপজেলা নৌকাঘাট থেকে ছেড়ে আসে বলে জানা যায়। শুধু এখানেই শেষ নয়। গত ৮ জুন বৌলাই নদীতে হাউজবোট ট্রায়াল দেয়ার সময় গোবিন্দশ্রী -রতনশ্রী বিদ্যুতের পারাপার লাইনে জড়িয়ে মারা যান উজান তাহিরপুর গ্রামের রাজমিস্ত্রী জেন্টু মিয়া। একই ঘটনায় আরো দু’জন আহত হন।
তাছাড়া এ বিদ্যুতের লাইনে জড়িয়ে গত বছর বড়দল মেশিন বাড়ির সামনে নদীতে পরে মারা যান এক নারী ও শিশু।
অপরদিকে রতনশ্রী গ্রামের সামনে মাস খানকে পূর্বে বিদ্যুতের লাইনে জড়িয়ে মারাত্মক আহত হন রতনশ্রী গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন। জামলাবাজ বড়দল গ্রামের পাশে টানানো তারে আহত হন রতনশ্রী গ্রামের হেফজুল মিয়া। পাতারগাও বাদাঘাট লাইনে আহত হন উজান তাহিরপুর গ্রামের রাবিয়া বেগম। ট্যাকেরঘাট পাথর কোয়ারীর সামনে হাওরে আহত হন রতনশ্রী গ্রামের নৌকা চালক শিবলী মিয়া, মহবিুর রহমান সহ আরো অনেকেই। শুধু হাওড়ে নয় এ সমস্য রয়েছে বাড়ি ঘরের উপর দিয়ে টানানো বিদ্যুতের খোলা তারেও। গত কয়েক বছর আগে উজান তাহিরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে মারাত্মক আহত হন সাইদুল নামে এক রাজমিস্ত্রি। সরজমিন বিভিন্ন সময়ে হাওড় ঘুরে দেখা গেছে উপজেলায় কমপক্ষে অর্ধ শতাধিক স্থানে যত্রতত্র ভাবে বিদ্যুতের তার গুলো টেনে নেয়া হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে তাহিরপুর সদর উজান তাহিরপুর থেকে লক্ষীপুর, উজান তাহিরপুর থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক, থানার সামনে থেকে সূর্যেরগাও, গোবিন্দশ্রী থেকে রতনশ্রী, শ্রীপুর দক্ষিন ইউনিয়ন সোলেমানপুর থেকে আনন্দ নগর, সাহেবনগর থকে উজ্জলপুর, বড়দল দক্ষিন ইউনিয়ন জামলাবাজ থেকে বড়দল, কামাড়কান্দি থেকে ট্যাকেরঘাট যাওয়ার একাধিক স্থান। শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন, তরং গ্রামের পিছনে, ট্যাকেরঘাট পাথর কোয়ারীর দক্ষিন পাশে হাওরে যত্রতত্র ভাবে বিদ্যুতের তার টানানো রয়েছে। অনেক স্থানে খুব নীচুতে এ তার দেখা গেছে। বর্ষায় হাওড়ে পানি বাড়ার সাথে সাথে এ তার গুলো নৌকা থেকে ইচ্ছে করলেই হাতে ধরা যাচ্ছে। অনেক সময় সাবধানে পারাপার হতে গিয়ে ঘটছে দূর্ঘটনা। ইচ্ছে করলেই ভাসমান পানিতে নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছে না নৌকা। ফলে একরে পর এক দূর্ঘটনা ঘটছে যত্রতত্র বিদ্যুতের তারে।
টাঙ্গুয়া হাওর ঘুরতে আসা পর্যটক, চট্রগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে ইমামুল কবির বলেন, গত দ’ুদিনে হাওর পথে তাহিরপুর উপজেলার অনেক স্থান ঘুরেছি। অধিকাংশ স্থানেই বিদ্যুতের তার গুলো দেখেছি খুব নীচু দিয়ে গেছে। রতনশ্রী গ্রামের নৌকার মাঝি আজমান মিয়া বলেন, অনেকদিন ধরে হাওরে পর্যটকদের নিয়ে নৌকা চালাচ্ছি। চালাতে গিয়ে অনেকবার বিপদ এসেছে। এখন দেখ শুনে নৌকা চালাই।
তাহিরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির সাবেক সভাপতি আমির শাহ বলেন, যে সকল স্থান দিয়ে টাঙ্গুয়া হাওর সহ উপজেলা সদরের সাথে লোকজন নৌ পথে যাতায়ত করে সে স্থানগুলোা চিহ্নিত করে বিদ্যুতের তারগুলো একটু উপরে তোলে দিলে সমস্যা কিছুটা কমবে।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেযারম্যান জুনাব আলী বলেন, গত ১৫ দিনে ব্যাবধানে বিদ্যুতে তারে জড়িয়ে ২ জন লোক মারা গেলো। হাওরের যত্রতত্র বিদ্যুতের লাইনগুলো উঠিয়ে না দিলে দূর্ঘটনা আরো বাড়বে বলেও তিনি জানান।
সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুত সমিতির জেনারেল ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, হাওরে স্পর্শকাতর স্থানগুলোর আশ পাশে লাল পতাকা টাঙ্গানো আছে। একাধিকবার মাইকিং করে এলাকাবসীকে চলাচলে সচেতন করা হয়েছে। কেউ যদি রাতের বেলা চলাচল করে সে ক্ষেত্রে আমরা কি করতে পারি, অন্ধকারে তো কিছুই দেখা যায় না। আমরা এ টুকু করতে পারি লাইন বন্ধ করে দিতে পারি।