জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সফল হোক

4

রোহিঙ্গা সংকটের যৌক্তিক সমাধানের ব্যাপারে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কেবল আশারবাণী শোনানো হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি- এমন বিষয় বারবার আলোচনায় এসেছে। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করা হবে- এ ধরনের আশ্বাসও বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন ও তাদের পক্ষে ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা নিশ্চিতের মাধ্যমে চলমান সংকটের টেকসই সমাধানের ওপর জোর দিয়ে জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। তথ্য মতে, শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের চলমান ৫৩তম অধিবেশনে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।
আমরা মনে করি, প্রস্তাব পাস হওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক- যা আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা। জানা গেছে, অধিবেশনে বাংলাদেশের উদ্যোগে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) পক্ষ থেকে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয়। যদিও প্রস্তাব উত্থাপনের পর বিভিন্ন ইস্যুতে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। এ সময় মিয়ানমারের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি সামনে আসে। দেশটিতে চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যাবাসন সম্ভব নয় বলে মত দেয় অনেক সদস্য রাষ্ট্র। কিন্তু দ্রæত প্রত্যাবাসন শুরুর পক্ষেও আসে মতামত। পরে দীর্ঘ আলোচনা শেষে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়।
আমরা বলতে চাই, প্রাস্তবটি পাস হয়েছে এটি যেমন ইতিবাচক, তেমনি সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যত দ্রæত সম্ভব কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। লক্ষণীয়, পাস হওয়া প্রস্তাবটিতে দ্রæত সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের প্রতি আহŸান জানানো হয়েছে। ফলে এই আহŸানে মিয়ানমার সাড়া দেবে এমনটিও আমাদের প্রত্যাশা। এছাড়া আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানোর পাশাপাশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সব ধরনের নির্যাতন, মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার কথাও বলা হয়েছে। অন্যদিকে, অধিবেশনে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ভ‚য়সী প্রশংসাও করা হয়।
আমরা বলতে চাই, পাস হওয়া প্রস্তাবটি আমলে নিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সফল করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক। এর আগে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধিদল কক্সবাজার এসে রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে ফিরে যায়। এছাড়া রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধিদলও রাখাইনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে দেশে ফিরে; এরপর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুটি ফের আলোচনায় আসে। এখন যখন জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস হলো, তখন সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রত্যাবাসন সফল করতে সর্বাত্মক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা বলতে চাই, প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নাগরিকদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিতে বাধ্য হয়েছিল বাংলাদেশ। সেই থেকে বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ অনেকটা এককভাবেই মোকাবিলা করছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট। এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাও ঘটছে। নানা ধরনের অপরাধ সংক্রান্ত খবরও পত্রপত্রিকায় বারবার এসেছে। আমরা মনে করি, প্রত্যাবাসন সফল না হলে বাংলাদেশের জন্য স্বাভাবিকভাবেই তা উদ্বেগের। সঙ্গত কারণেই প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, এবারে যখন জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস হলো, তখন তা সামনে রেখে এবং কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রত্যাসান সফল করতে হবে। স্মর্তব্য, প্রায় ১৭ কোটির অধিক বাংলাদেশি নাগরিকের জনবহুল বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের চাপ আর কতদিন সইতে হবে- এই প্রশ্ন কোনোভাবেই অযৌক্তিক নয়। যা আন্তর্জাতিক মহলকেও ভাবতে হবে। মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার অর্থ এই নয় যে, তাদের আজীবন রাখতে হবে। এটা এখন বাংলাদেশের জন্য বিরাট বোঝা। বাংলাদেশ চায় সুষ্ঠু সুন্দর ব্যবস্থাপনায় নাগরিক মর্যাদায় তাদের পূর্ণ অধিকার দিয়ে ফেরত নেওয়া হোক। ফলে বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ানো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সফল করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এবং প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আলোর মুখ দেখুক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।