পিরিয়ডকালীন সহজেই স্যানিটারি পণ্যের যোগান দিবে ‘প্রীতিলতা’

7

শাদমান শাবাব, শাবি থেকে

নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এবং জটিলতা এড়াতে পিরিয়ডকালীন সচেতনতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা জরুরি। কিন্তু পিরিয়ডকালীন স্বাস্থ্যবিধি কিংবা মাসিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নারীদের নানান প্রতিক‚লতার সম্মুখীন হতে হয়। এ বিষয়টি বিবেচনা করে পিরিয়ডকালীন সময়ে সহজে নারীদের স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি পণ্যের যোগান নিশ্চিত করতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) একদল শিক্ষার্থী নিয়ে এসেছেন একটি উদ্ভাবনী সমাধান। সম্প্রতি তাদের উদ্ভাবিত এই আইডিয়া বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে ১০ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছে।
শিক্ষার্থীরা এই স্টার্টআপের নাম দিয়েছেন ‘প্রীতিলতা’। এর ফলে একটি অ্যাপের মাধ্যমে ক্যাশলেস লেনদেনে স্যানিটারি ন্যাপকিনসহ অন্যান্য মেনস্ট্রুয়াল পণ্য গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যাবে। প্রাথমিক ধাপে শাবিসহ সিলেটের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনার কথা জানান এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চার শিক্ষার্থী। চার সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত এই দলটির নামও ‘প্রীতিলতা’। এই দলের সদস্যরা হলেন – আবু নাসের শাহ মো. মারুফ আহমেদ, মাহবুব আহমেদ চৌধুরী, সুরাইয়া তাসনুর তানহা এবং আয়শা আহমেদ ইফফাত। তারা সবাই শাবির গণিত বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
প্রীতিলতার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আবু নাসের শাহ মো. মারুফ আহমেদ বলেন, প্রীতিলতা শাবি শিক্ষার্থীদের একটি প্ল্যাটফর্ম। এখানে মাসিক-স্বাস্থ্য ও সচেতনতা নিয়ে কাজ করা হয়। মারুফ জানান, একদিন এক আড্ডায় তিনিসহ দলের অন্য সদস্যরা দেশে প্রচলিত ট্যাবুগুলো নিয়ে আলোচনা করছিলেন। এসময় তারা বুঝতে পারেন ‘পিরিয়ড দারিদ্র্য’ এমন একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা, যা বছরের পর বছর ধরে লুকানো এবং অস্পৃশ্য ছিলো। এরপরে যখন একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরির সুযোগ আসে, তখন তারা আন্তরিকভাবে এই বিষয়টিকে গ্রহণ করেন। তাদের লক্ষ্য ছিলো শুধু সফলতা অর্জন নয়, পিরিয়ড দারিদ্র্যের অবসানের ক্ষেত্রে একটি পার্থক্য গড়ে দেওয়া।
দলের আরেক সদস্য সুরাইয়া তাসনুর তানহা জানান, গতবছর তাদের এ উদ্যোগের যাত্রা শুরু হয়। ওই বছর ক্যাম্পাসে হাল্ট প্রাইজ আইডিয়া প্রতিযোগিতা উপলক্ষে চার সদস্যের দল গঠন করেন তারা। ওই প্রতিযোগিতায় রানার্স আপ হয় প্রীতিলতা দল। এরপরে ‘রবি-বিডিঅ্যাপস ন্যাশনাল হ্যাকাথন-২০২২’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ষষ্ঠ স্থান অর্জন করেন তারা। এছাড়াও আরও বেশকিছু প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পায় দল প্রীতিলতা। এ বছরের ৫ জানুয়ারি তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) ডিভিশনের ‘আইডিয়া’ প্রজেক্টে নিজেদের আইডিয়া জমা দেন প্রীতিলতা দলের সদস্যরা। মোট তিনটি ধাপে আইসিটি বিভাগের সামনে নিজেদের উদ্যোগ উপস্থাপন করেন তারা। সবশেষ গত ১৭ মে আইসিটি ডিভিশন তাদের আইডিয়াটি মঞ্জুর করে ১০ লাখ টাকা অনুদান দেয়।
প্রীতিলতা দলের অন্যতম সদস্য মাহবুব আহমেদ চৌধুরী বলেন, ২০২২ সালে সিলেট-সুনামগঞ্জের ভয়াবহ বন্যার সময় আমরা ৬০ হাজার টাকার তহবিল জোগাড় করে নারীদের মাঝে ছয় হাজার স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করি। এখন যেহেতু নারী স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার জন্য আইসিটি বিভাগ থেকে ফান্ডিং পেয়েছি, আমাদের পরিকল্পনা হলো প্রথম ধাপে শাবিসহ সিলেটের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওয়াশরুমে ক্যাশলেস ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করা। প্রাথমিক সাফল্য পেলে এই বিষয়ে আরও বিস্তৃত পরিসরে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করেন প্রীতিলতা দলের সদস্য আয়শা আহমেদ ইফফাত। তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে মেয়েদের ওয়াশরুমে ইন্টারনেটভিত্তিক ক্যাশলেস ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করবো। ভেন্ডিং মেশিন থেকে প্রীতিলতা অ্যাপের মাধ্যমে কিউআর কোড স্ক্যান করে ক্যাশলেস লেনদেনে গ্রাহক স্যানিটারি ন্যাপকিনসহ অন্যান্য মেনস্ট্রুয়াল পণ্য ক্রয় করতে পারবেন। এ কাজে সফল হলে পরবর্তীতে হোম ডেলিভারি সুবিধা রাখার এবং মা ও শিশুদের পণ্য কেনার সুবিধাও যুক্ত করার কথা জানান তিনি।