বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তরের কর্মকর্তাদের তথ্য চলে যাচ্ছে প্রতারকদের কাছে

2

কাজির বাজার ডেস্ক

বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ, সেমিনারে অংশগ্রহণকারীদের নামের তালিকাসহ সরকারি-বেসরকারি সহায়তার জন্য আবেদনকারীর তথ্য চলে যাচ্ছে অপরাধীদের নাগালে। একটি চক্র ছদ্মবেশে মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোতে ঘুরে এসব তথ্য সংগ্রহ করছে। পরে তারা সংশ্লিষ্টদের ফোন করে কৌশলে অ্যাকাউন্ট নম্বর, ক্রেডিট কার্ড নম্বর, পাসওয়ার্ড নিয়ে গোপনে টাকা তুলে নিচ্ছে। পুলিশ বলছে, চক্রটির সদস্যরা রাজনৈতিক দল বা মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীসহ বিভিন্ন পরিচয়ে মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোতে যায়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থেকে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী বা সহায়তার জন্য আবেদনকারীদের নামের তালিকা সংগ্রহ করে। পরে সংশ্লিষ্ট ওই অফিসের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে শুরু হয় প্রতারণা। এমন সময় প্রতারকরা ভুক্তভোগীদের কাছে ফোন করে, যখন সংশ্লিষ্ট অফিসে ফোন করেও তার নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয় না। গত বছর এক সাংবাদিক এই চক্রের কবলে পড়ে ১ লাখ ১৯ হাজার টাকা খোয়ান। ভুক্তভোগী জানান, গত বছর সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টে তিনি একটি সহযোগিতার আবেদন করেছিলেন। ওই বছরের ৩ নভেম্বর একটি অপরিচিত নম্বর থেকে এক ব্যক্তি ফোন করে নিজেকে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট কর্মকর্তা মনির বলে পরিচয় দেন। ওই ব্যক্তি বলেন, আপনার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে টাকা বরাদ্দ আসছে। টাকা পাঠাতে ওই ব্যক্তি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর, ক্রেডিট কার্ড নম্বর ও গোপন (সিসি) নম্বর জানতে চান। পরে ওই সাংবাদিক তাঁর ভাই মনিরুজ্জামানের মতিঝিল শাখার ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য দেন। কিছুক্ষণ পরেই মনিরুজ্জামানের ফোনে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলনের এসএমএস আসে। ব্যাংক শাখায় গিয়ে দেখা যায়, প্রতারকরা অ্যাকাউন্ট থেকে চারটি নগদ নম্বরের মাধ্যমে ১ লাখ ১৯ হাজার টাকা সরিয়ে নিয়েছে। এ ঘটনায় গত ১১ নভেম্বর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন মনিরুজ্জামান। মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় সিটি সাইবার অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন টিম। আসামিদের গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।
যাদের গ্রেপ্তার করা হয় তারা হলেন- জুয়েল মাতুব্বর, রিপন শেখ, শরীফুল ইসলাম, ইব্রাহিম শেখ অরফে সাগর শেখ ও শরিফুল ইসলাম। এর মধ্যে শরিফুল ও ইব্রাহিম সাগর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।
একইভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন সরকারি অটিজম প্রজেক্টের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। এ ঘটনায় গত ৩০ এপ্রিল রমনা থানায় জিডি করেন তিনি। জিডিতে উল্লেখ করা হয়, গত ২৯ এপ্রিল রাতে অপরিচিত এক ব্যক্তি ফোন করে অটিজম প্রজেক্টের অ্যাকাউন্টস অফিসার পরিচয় দেয়। ওই ব্যক্তি জানায়, আপনি এক বছর আগে অটিজম প্রজেক্টের প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছিলেন। সেই প্রশিক্ষণের সম্মানী ভাতা পাঠাতে ব্যাংক হিসাব নম্বর ও ক্রেডিট নম্বর দিতে হবে। সব দেওয়ার পর ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন অ্যাপে একটি ওটিপি নম্বর আসে। এরপর সেই ওটিপি নম্বর ফোন করে চাওয়া হয়। নম্বর দেওয়ার পরের দিন দুপুরে দেখা যায়, ওই কর্মকর্তার ইসলামী ব্যাংক হিসাব নম্বর থেকে ৩০ হাজার টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে প্রতারকরা। রাজধানীর বঙ্গবাজারে গত ৪ এপ্রিল অগ্নিকাÐে ক্ষতিগ্রস্ত এক ব্যবসায়ীকে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সহায়তার টাকা দেওয়ার কথা বলেও প্রতারণা করা হয়েছে।
মনিরুজ্জামানের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম বলেন, আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে এই চক্রের প্রধান সবুজ নামে একজনের কথা জানিয়েছে। চক্রটির সদস্যরা আইনি ঝামেলায় পড়লে তদবিরসহ মামলা নিয়ে কাজ করে নজরুল ইসলাম নামের তিতুমীর কলেজের এক ছাত্র সংগঠনের নেতা। যে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষের নম্বর সংগ্রহ করতে পারে, সেই এই চক্রের প্রধান হয়। তার নিয়ন্ত্রণে পাঁচ-সাতজনের একেকটি টিম কাজ করে। সবুজের নামে বেশ কয়েকটি প্রতারণার মামলা আছে।