হজের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু কাবা ঘিরে বিশাল জনসমাগম

23

 

কাজির বাজর ডেস্ক

সৌদি আরবের গ্রীষ্মের প্রখর গরম আবহাওয়া উপেক্ষা করে বিগত বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হজের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম রোববার শুরু হয়েছে। ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ পবিত্র হজ পালনে মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদের বৃহৎ কালো ঘনক কাবা ঘর প্রদক্ষিণে পোশাকধারী হজ যাত্রীদের ভিড় তাই সেখানে এক ভাব গম্ভীর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। ইসলামের পবিত্রতম স্থানটিতে শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে বার্ষিক হজ পালনে ১৬০টি দেশ থেকে ১৬ লাখের বেশি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের উপস্থিতি সাম্প্রতিক বছরগুলোর উপস্থিতির রেকর্ড ভাঙতে পারে। খবর এএফপি’র। রোববার সকালে কাবা ঘরে ‘তাওয়াফ’ (কাবার চারপাশ প্রদক্ষিণ) করার ভেতর দিয়ে হজ শুরু হয়। সোনার ছাঁট দিয়ে কালো কাপড়ে মোড়া বিশাল ঘন কাঠামো কাবা ঘরের কাছে লাখো লাখো মুসলমান প্রতিদিন প্রার্থনা করে।
৬৫ বছর বয়সী মিশরীয় আবদেল-আজিম তাওয়াফ সম্পাদনকালে বলেন ‘আমি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দিনগুলি যাপন করছি।’ হজে অংশ নিতে ৬, ০০০ডলার ফি যোগার করতে ২০ বছর ধরে সঞ্চয় করেছে উল্লেখ করে অবসরপ্রাপ্ত ওই ব্যক্তি বলেন, ‘স্বপ্ন সত্য হয়েছে’। তেলসমৃদ্ধ সৌদি আরবের পশ্চিমে মক্কা এবং এর আশেপাশে চার দিনের ধারাবাহিক আচার পালনের মধ্যে দিয়ে হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। সব মুসলমান জীবনে একবার মক্কায় হজ পালনের আকাঙ্খাা লালন করেন এবং সামর্থবানদের জীবনে একবার এই হজ পালনের বিধান রয়েছে। তবে অমুসলিমদের এই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
হজের খুতবা বাংলায় অনুবাদ করবেন যাঁরা
এ বছর হজের খুতবা ২০টির বেশি ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদ সম্প্রচারিত হবে। এবার খুতবার বাংলা অনুবাদ করবেন ড. খলীলুর রহমান, আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান মাক্কী, মুবিনুর রহমান ফারুক ও নাজমুস সাকিব। তাঁরা সবাই মক্কার বিখ্যাত উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। আগামী ২৭ জুন হাজিদের সবাই আরাফা প্রাঙ্গণে অবস্থান করবেন।
সেদিন ২০ লাখের বেশি হাজির উদ্দেশে মসজিদে নামিরা থেকে খুতবা দেবেন সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য শায়খ ড. ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সায়িদ। বিশ্বের ৩০ কোটির বেশি মানুষের কাছে ইসলামের শান্তিপূর্ণ বাণী পৌঁছে দিতে ২০টির বেশি ভাষায় খুতবা সম্প্রচার করা হবে। এসব কাজের তত্ত¡াবধান করছে মক্কা ও মদিনার পবিত্র দুই মসজিদের জেনারেল প্রেসিডেন্সি বিভাগ।
যেকোনো ডিভাইস থেকে মানারাতুল হারামাইন (সধহধৎধঃধষযধৎধসধরহ) ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে একটি ভাষা নির্বাচন করলে খুতবার অনুবাদ শোনা যাবে।
তা ছাড়া মানারাতুল হারামাইন মোবাইল অ্যাপ, আল কোরআন চ্যানেল ও আস সুন্নাহ চ্যানেলসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ইউটিউব, ফেসবুক ও টুইটারে তা শোনা যাবে। ওয়েবসাইটে বিগত বছরের খুতবা ও এর অনুবাদও পাওয়া যাবে।
২০২০ ও ২০২১ সালে হজের খুতবার বাংলা অনুবাদ করেছেন মাওলানা আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান মাক্কী। মূলত তাঁর মাধ্যমেই খুতবার বাংলা অনুবাদ কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রায়ই তিনি পবিত্র মসজিদুল হারামের জুমার খুতবার অনুবাদ করে থাকেন। তাঁর বাড়ি কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনীয়া পূর্ব বোমাংখিল গ্রামে। বর্তমানে তিনি উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষক হিসেবে অধ্যয়নরত। ১৯৯৮ সালে তিনি তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা থেকে হাদিস বিভাগে কামিল ও মাদরাসা-ই-আলিয়া থেকে তাফসির বিভাগে কামিল ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এরপর ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অবস্থিত গাউছিয়া ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আরবি প্রভাষক ছিলেন।
গত বছর খুতবার অনুবাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন ড. খলীলুর রহমান। খলীলুর রহমানের বাড়ি কুমিল্লার শাসনগাছায়। সম্প্র্রতি তিনি পিএইচডি গবেষণা সম্পন্ন করেছেন। ১৯৯২ সালে তিনি ধামতী ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা থেকে কামিল বিভাগে দেশে প্রথম স্থান অধিকার করেন। পরবর্তী সময়ে নওগাঁ কামিল মাদরাসার প্রধান মুহাদ্দিস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
অপর অনুবাদক মুবিনুর রহমান ফারুকের বাড়ি কক্সবাজারের রামু উপজেলায়। চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স সম্পন্ন করেন তিনি। বর্তমানে তিনি উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল গবেষক হিসেবে অধ্যয়নরত আছেন। অপর অনুবাদক নাজমুস সাকিব একই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। তিনি রাজধানী ঢাকার জামিয়া শরইয়্যাহ মালিবাগ মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৪৩৯ হিজরি মোতাবেক ২০১৮ সালে জেনারেল প্রেসিডেন্সি বিভাগের তত্ত¡াবধানে পাঁচটি ভাষায় আরাফার খুতবা অনুবাদ প্রকল্প যাত্রা শুরু করে। ২০২০ সালে বাংলাসহ মোট ১০টি ভাষায় খুতবার অনুবাদ করা হয়। পরের বছর ১৪টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়। এ বছর ২০টি ভাষায় অনুবাদের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। মূলত সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছতে প্রতিবছর অনুবাদ কার্যক্রমে নতুন ভাষা যুক্ত করা হচ্ছে।