ছাতকে কিশোরী ধর্ষণ মামলায় ২৫ বছর পর হাইকোর্টে আসামির যাবজ্জীবন সাজা বহাল

9

 

কাজির বাজার ডেস্ক

১৯৯৬ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছিল সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার এক কিশোরী। এ ঘটনায় করা মামলায় ১৯৯৮ সালে আসামি রফিক মিয়াকে যাবজ্জীবন সাজা দেন বিচারিক (নিম্ম) আদালত। তবে সাজা হওয়ার মাত্র দেড় বছর পর ২০০০ সালে জামিনে গিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান তিনি। দীর্ঘ ২৩ বছর পর ওই মামলার আপিল নিষ্পত্তি করে সাজা বহাল রেখেছেন উচ্চ আদালত হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে আসামিকে দ্রæত আত্মসমর্পণ করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি হাইকোর্টের বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লা ও বিচারপতি খোন্দকার দিলিরুজ্জমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন। বৃহস্পতিবার ওই বেঞ্চের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভ‚ঁইয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জানা গেছে, ওই কিশোরীর বাবা-মা দুজনই দিনমজুর ছিলেন। কাজ করতেন পাথর শ্রমিক হিসেবে। কার্গোতে পাথর বোঝাই করতে প্রায় সময়ই রাত হয়ে যেত তাদের। ১৯৯৬ সালের ১৪ ফেব্রæয়ারি রাতে বাবা-মা দুজনেই কাজে ছিলেন। তাদের জন্য রাতের খাবার নিয়ে যায় ছোট ভাই। ঘরে একা রয়েছে জেনে মধ্যরাতে কিশোরীর ঘরে হানা দেয় স্থানীয় বাসিন্দা রফিক মিয়া।
বাশের দরজার রশি কেটে ঘরে প্রবেশ করে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে রফিক। ঘটনার পর কিশোরী কান্নাকাটি করলে তাকে বিয়ের প্রতিশ্রæতি দিয়ে কাউকে না জানানোর কথা বলে সে।
লজ্জায় ওই কিশোরী এ ঘটনা কাউকে না জানালেও কিছুদিন পর তার শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন দেখা দেয়। বিষয়টি জানতে চাইলে কিশোরী তার মাকে সবকিছু খুলে বলে। এরপর ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ের চেষ্টা করে কিশোরীর পরিবার। তবে ধর্ষকের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
সমাধান না হওয়ায় ওই বছরের ২ জুন কিশোরীর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয় আদালতে। বিচার শেষে ১৯৯৮ সালের ২৬ নভেম্বর রায় দেন বিচারিক আদালত। রায়ে আসামি রফিক মিয়াকে যাবজ্জীবন কারাদÐ ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আর তাকে পাঠানো হয় কারাগারে। এরপর রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে জামিন চাইলে ২০০০ সালের ১৪ এপ্রিল আসামিকে জামিন দেন হাইকোর্ট।
এদিকে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে লাপাত্তা হন আসামি রফিক। মামলাটির আপিলও নিষ্পত্তির চেষ্টা করা হয়নি তার পক্ষ থেকে। সম্প্রতি পুরনো মামলা নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিলে এটি শুনানির জন্য উঠে উচ্চ আদালতে। বৃহস্পতিবার আসামির করা আপিল খারিজ করে যাবজ্জীবন কারাদÐ বহাল রাখেন হাইকোর্ট। এখন আসামিকে তার বাকি সাজা খাটতে হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভ‚ঁইয়া বলেন, অনেক মামলাতেই দেখা যায় আসামি পক্ষ জামিন পেয়ে মামলা নিষ্পত্তি করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এতে আসামিরা যে খুব বেশি লাভবান হয় তা নয়। কেন না এ মামলাটি যদি ২০ বছর আগে নিষ্পত্তি হতো তাহলে হয়তোবা এত দিনে তিনি মুক্তিও পেয়ে যেতে পারতেন। সাময়িকভাবে জামিনে মুক্তি পেলেও অপরাধীর অপরাধের শাস্তি থেকে যে রেহায় নেই-তাই এ মামলার রায়ে প্রমাণ করে। ধর্ষণের মত নিকৃষ্টতর অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী হিসেবে এটাই আমাদের কাজ।