জলবায়ু সংকট : শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রতিশ্রæত তহবিল পাচ্ছে না

4

কাজির বাজার ডেস্ক
জলবায়ু সংকটের কারণে শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তারা প্রতিশ্রæত জলবায়ু তহবিল পাচ্ছে না। চিলড্রেনস এনভায়রনমেন্টাল রাইটস ইনিশিয়েটিভ (সিইআরআই) জোটের সদস্য প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল, সেভ দ্য চিলড্রেন ও ইউনিসেফ প্রকাশিত নতুন এক প্রতিবেদন এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মূল বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিলের মাত্র ২.৪ শতাংশ শিশুদের জন্য শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে। ইউনিসেফের শিশুদের জলবায়ু ঝুঁকি সূচক অনুসারে ১০০ কোটির বেশি শিশু জলবায়ু সংকটজনিত প্রভাবের অত্যন্ত উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে। ইউনিসেফের শিশু অ্যাডভোকেট বার্বাডোসের জলবায়ুকর্মী ১৩ বছর বয়সী মারিয়া মার্শালের মতে, শিশুরাই ভবিষ্যৎ। কিন্তু আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হচ্ছে বর্তমান সময়ে যারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তাদের কার্যক্রমের ওপর। আমাদের কথা শোনা হচ্ছে না। এ প্রতিবেদন যেমন বলছে, জলবায়ুজনিত সংকট সমাধানের জন্য অর্থায়ন একটি বাধ্যবাধকতা। কিন্তু সেই অর্থ কীভাবে ব্যয় করা হয় সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের প্রয়োজন ও দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
ইউএনএফসিসিসি এবং প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ বহুপাক্ষিক জলবায়ু তহবিলগুলো (এমসিএফএস) থেকে জলবায়ু অর্থায়ন করা হয়েছে কি না তা মূল্যায়ন করার জন্য ‘তহবিল কমছে: শিশুদের জন্য জলবায়ু অর্থায়নের ঘাটতি মোকাবিলা’ শীর্ষক সমীক্ষায় তিনটি মানদÐের একটি সেট ব্যবহার করা হয়। এগুলো হলো- জলবায়ুজনিত সংকটের কারণে শিশুরা যে ঝুঁকিগুলোর সম্মুখীন হয় তা মোকাবিলা করা, শিশুদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সেবাগুলো শক্তিশালী করা এবং পরিবর্তনের দূত হিসেবে শিশুদের ক্ষমতায়ন করা।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বসু বলেন, সমীক্ষায় উঠে আসা বিষয়গুলো বেশ অপ্রীতিকর। জরুরি ও কার্যকর বিনিয়োগ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চাবিকাঠি এবং শিশুদের জন্য, বিশেষ করে মেয়ে শিশুদের জন্য, যারা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের ঝুঁকিতে আছে তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা সত্তে¡ও বর্তমানে যে তহবিল ব্যয়করা হয় সেখানে শিশুদের প্রায় সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হয়। এর পরিবর্তন দরকার।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত ১৭ বছর ধরে জলবায়ু-সম্পর্কিত প্রকল্পগুলোর জন্য এমসিএফএসের মাধ্যমে প্রদত্ত সমস্ত অর্থের শুধু একটি ছোট অংশ (২.৪ শতাংশ) তিনটি প্রয়োজনীয়তার সবগুলোই পূরণ করেছে, যার পরিমাণ মাত্র ১২০ কোটি ডলার। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ সংখ্যা সম্ভবত একটি অত্যাধিক মূল্যায়ন প্রতিফলিত করে। যার অর্থ তিনটি প্রয়োজনীয়তার সবগুলো পূরণে এমনকি আরও কম পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়েছে।
সেভ দ্য চিলড্রেনের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক গেøাবাল হেড কেলি টুলি বলেন, শিশুরা বিশেষ করে যারা এরই মধ্যেই অসমতা ও বৈষম্যের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত, তারা জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে কম ভ‚মিকা রেখেছে। কিন্তু তারাই এর কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জলবায়ু অর্থায়ন শিশুদের প্রয়োজন ও দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনা করে এ অবিচারগুলো মোকাবিলা করার একটি সুযোগ তৈরি করে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটি আজ অবধি অপর্যাপ্ত রয়ে গেছে। তবে এটি পরিবর্তন হতে পারে এবং অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। সত্যিকার অর্থেই জলবায়ু সংকট মোকাবিলার জন্য শিশুদের অধিকার আমাদের প্রাধান্য দিতে হবে এবং শিশুদের কথা যাতে শোনা হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
যদিও এমসিএফগুলো সামগ্রিক জলবায়ু অর্থায়নের একটি অপেক্ষাকৃত ছোট অংশের জোগান দেয়। তবে এ তহবিলগুলো যে মাত্রায় শিশুদের কথা বিবেচনা করে তা অপরিসীম ভ‚মিকা রাখে। আলোচনার বিষয়বস্তু নির্ধারণে এবং জাতীয় পর্যায়সহ অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগকে অনুঘটক ও সমন্বয় করতে এমসিএফগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রয়েছে, যা পরিবর্তনন আনার জন্য প্রয়োজনীয়।
শিশুরা পানি ও খাদ্যের অভাব, পানিবাহিত রোগ এবং শারীরিক ও মানসিক আঘাতের ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ঝুঁকিতে রয়েছে, যার সবগুলোই চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনা এবং ধীর গতিতে শুরু হওয়া জলবায়ু প্রভাব-উভয়ের সঙ্গেই সংযুক্ত। এমনও প্রমাণ রয়েছে যে, আবহাওয়ার ধরনে পরিবর্তন শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং বিশুদ্ধ খাবার পানির মতো মৌলিক পরিষেবাগুলো প্রাপ্তির সুযোগ ব্যাহত করছে। ইউনিসেফের জলবায়ু অ্যাডভোকেসির বিশেষ উপদেষ্টা পালোমা এসকুদেরো বলেন, প্রতিটি শিশুই অন্তত একটি এবং অনেক ক্ষেত্রে একাধিক জলবায়ুজনিত বিপত্তির সম্মুখীন হয়। জলবায়ুজনিত বিপত্তির সঙ্গে স্বাস্থ্য ও পানির মতো গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক পরিষেবাগুলোকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য যে অর্থায়ন ও বিনিয়োগের খুবই প্রয়োজন তা অপ্রতুল এবং যা দিয়ে শিশুদের জরুরি ও অনন্য প্রয়োজনগুলোর বেশিরভাগই পূরণ করা সম্ভব হয় না। এটি অবশ্যই বদলাতে হবে। জলবায়ু সংকট একটি শিশু অধিকারসংকট, এবং জলবায়ু অর্থায়নে অবশ্যই এটি প্রতিফলিত হতে হবে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, যখন শিশুদের কথা আসে, তখন তাদের সক্রিয় অংশীজন বা পরিবর্তনের দূত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বদলে প্রায়ই একটি অরক্ষিত গোষ্ঠী হিসেবে দেখা হয়। ৪ শতাংশেরও কম প্রকল্প, যার পরিমাণ এমসিএফ বিনিয়োগের মাত্র ৭ শতাংশ (২৫৮ কোটি ডলার), মেয়েদের প্রয়োজন ও সম্পৃক্ততাকে সুনির্দিষ্ট ও অর্থপূর্ণভাবে বিবেচনা করে।
সিইআরআই জোট বহুপাক্ষিক জলবায়ু তহবিলের পাশপাশি আন্তর্জাতিক ও জাতীয় উভয় পর্যায়ে জলবায়ু অর্থায়ন প্রদানে অন্যান্য জলবায়ু অর্থায়নকারীদের দ্রæত পদক্ষেপ নেওয়ার এবং মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে যে ঘাটতি তা মোকাবিলায় কাজ করার আহŸান জানাচ্ছে। তারা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি পূরণে তহবিল বরাদ্দের জন্য বিশেষভাবে আহŸান জানাচ্ছে।