আজ মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে প্রচার-প্রচারণা ১৯০টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩২টিই ঝুঁকিপূর্ণ

29

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ বুধবার

ঝুম বৃষ্টির মধ্যেও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে চলছে বিরামহীম প্রচার-প্রচারণা। সমান তালে প্রচারণা চালাচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন সংরক্ষিত নারী প্রার্থীরাও। বৃষ্টিতে প্রচার-প্রচারণায় ব্যাঘাত ঘটলেও বসে নেই কোন প্রার্থী। তবে ভালো নেই আবহাওয়ার পূর্বাভাস। গত কদিন থেকে যেভাবে অঝুর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে ভোটের দিনেও এরকমই বৃষ্টি হওয়ার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে মনোনয়ন দাখিলের পর প্রার্থীদের র্নিঘুম প্রচার-প্রচারণা আজ সোমবার মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে। আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শেষ হলেও প্রার্থীর সমর্থক আর কর্মীরা হয়তো বসে থাকবেন না। ভোটের আগ মুহর্‚ত পর্যন্ত স্যোসাল মিডিয়াকে বেচে নেবেন প্রচার-প্রচারণার বিকল্প মাধ্যম হিসেবে। আগামী বুধবার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এবার নির্বাচনে ৮ মেয়র প্রার্থী থাকলেও মূল আলোচনায় ছিলেন ৩ জন। তবে কেন্দ্রের নির্দেশে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হাফিজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় সিলেটে এখন লড়াই হবে শুধু আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থীর মধ্যে। আর কাউন্সিলর পদে ৩৬০ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। যাদের মধ্যে ২৭৩ জন সাধারণ ওয়ার্ডে এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে (নারী কাউন্সিলর) ৮৭ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। আগে ২৭ ওয়ার্ড নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশন থাকলেও বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ড নেয়ে সিসিকে এখন মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ৪২টি। ৭৯ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই মহানগরীতে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬৩, নারী ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৪ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়া ভোটর রয়েছেন ৬ জন।
এদিকে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের ১৯০টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩২টি ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া ১৮টি ওয়ার্ডের সবগুলো কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। বাকি ৫৮টি কেন্দ্র সাধারণ (ঝুঁকিমুক্ত) বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রস্তুত করা তালিকায় এ তথ্য উঠে এসেছে। রবিবার বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার মোঃ ইলিয়াস শরীফ।
তিনি বলেন, নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ করতে ভোটের দিন এসএমপির পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ভোটের দিন শুধু পুলিশই থাকবে ২ হাজার ৬ শতাধিক। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী পুলিশের সহায়তায় র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন থাকবে। ভোটের মূল নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশ থাকবে জানিয়ে এসএমপি কমিশনার বলেন, অধিক গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্রগুলোর প্রতিটিতে দুজন কর্মকর্তা ও চারজন কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করবেন। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে একজন কর্মকর্তা ও চারজন কনস্টেবল ও সাধারণ কেন্দ্রে গুলোর প্রতিটিতে একজন কর্মকর্তা ও তিনজন কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করবেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, নগরী মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫ জন। মেয়র পদে ৮ জন, সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৭৩ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৮৭ জন প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। ১৯০টি কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষ (বুথ) আছে ১ হাজার ৩৬৪টি।
মহানগর পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ এবং ঝুঁকিমুক্ত কেন্দ্রকে সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ওই গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ কেন্দ্র অনুযায়ী ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কমবেশি নির্ধারণ করা হয়। সে অনুযায়ী কেন্দ্রগুলোর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে নির্বাচন কমিশন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কেন্দ্রে নিরাপত্তাবেষ্টনী না থাকা, কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সহিংসতার শঙ্কা, যোগাযোগ বিড়ম্বিত কেন্দ্র, অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার শঙ্কাসহ নানা দিক বিবেচনা করে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। এবারের তালিকা অনুযায়ী ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ১৫, ২২, ২৪, ২৫, ২৬, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩৬, ৩৮, ৩৯ ও ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের সব ভোটকেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের সবগুলো কেন্দ্র ঝুঁকিমুক্ত।
অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) সুদীপ দাস বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ কেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত হয়েছে। সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের স্বার্থে কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তৎপর থাকবে।
র‌্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসার সিনিয়র এএসপি আফসান-আল-আলম বলেন, নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী র‌্যাবের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হবে। এরই মধ্যে সাদা পোশাকে র‌্যাব সদস্যরা কাজ করছে। নির্বাচনের দিন র‌্যাব সদস্যরা স্ট্রাকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া সাদা পোশাকে গোয়েন্দা দলও মাঠে থাকবে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে সিটি নির্বাচনে সিলেট নগরের ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ এবং নারী ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন। কেন্দ্র ছিল ১৩৪টি, ভোট কক্ষ ছিল ৯২৬টি এবং অস্থায়ী কক্ষ ছিল ৩৪টি। এবার ৪২টি ওয়ার্ডে কেন্দ্র বেড়ে হয়েছে ১৮৫টি এবং ভোট কক্ষ ১ হাজার ৩৯০টি।
২০০২ সালে সিলেট সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সিলেটের সকল ওয়ার্ডে এবারই প্রথম হচ্ছে বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণ।