নগরীতে ড্রেন উপচে বাসা-বাড়িতে ঢুকছে পানি সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে

21

স্টাফ রিপোর্টার

ঢানা কয়েকদিনের ভারীবর্ষণে সিলেটের নদী-নালা-খাল-বিল টইটুম্বর হয়ে গেছে। এছাড়া সিলেটের সুরমা নদীর পানি কিছু কিছু জায়গায় বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর পানি নগরীর বিভিন্ন ড্রেন দিয়ে উপচে শহরে প্রবেশ করছে। এতে মহানগরীতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বন্যার আশঙ্খা করছেন নগরবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানা বর্ষণে নগরীর বিভিন্ন রাস্তাঘাট প্লাবিত হচ্ছে। জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে বাসা বাড়িতে পানি উঠে ভোগান্তিতে পড়ছেন নগরবাসী। নগরীর তালতলা, আখালিয়া, পাঠানটুলা, মদীনা মার্কেট, বাগবাড়ি, কানিশাইল, শেখঘাট, ঘাসিটুলা, বেতবাজার, লালাদিঘীরপাড়, কুয়ারপাড়, হাওয়াপাড়া, সুবিদবাজার, জালালাবাদ, নগরীর দক্ষিণ সুরমা লাউয়াই, রেলগেইট, মুন্সিপাড়া, কেওয়াপাড়া, কাজলশাহ, পশ্চিম কাজলশাহ, মিরের ময়দানের বিভিন্ন এলাকা, শিবগঞ্জ, লামাপাড়া, পায়রা ও রাজারগলি, শাহজালাল উপশহর, যতরপুর, তের রতনসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক তলিয়ে বাসাবাড়িতে পানি উঠছে। ড্রেন উপচে পানি উঠে গেছে বাসা-বাড়িতে।
এদিকে টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ জেলার সুরমা, যাদুকাটা, কুশিয়ারা, ভোলাই, পাকলিসহ সব নদনদীর পানি বাড়ছে। রবিবার দুপুর পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জের ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৪১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে ছাতক, দোয়ারাবাজার উপজেলার নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করছে। রবিবার দুপুরে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাত ৯টা থেকে রবিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীতে এখনও পানি বাড়ছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জের বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১০০ মিলিমিটার।
প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা জানান, ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সুনামগঞ্জের নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। রবিবার সকালে ছাতক পয়েন্ট দিয়ে বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ভারতের টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে সুনামগঞ্জে বন্যা হতে পারে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে অনেক এলাকায় নদীর পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। জেলার তাহিরপুর উপজেলার শক্তিয়ার খোলা এলাকার এক কিলোমিটার সড়ক যাদুকাটা নদীর পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বর্তমানে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড আরও জানিয়েছে, শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এই নদীর পানি ছাতক উপজেলায় বিপৎসীমার মাত্র ৭০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এদিকে, তাহিরপুর সংবাদদাতা বাবরুল হাসান বাবলু জানান, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে তাহিরপুরে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। পাহাড়ি ঢলের পানি যাদুকাটা নদীর দু’তীর উপচে তাহিরপুর বাদাঘাট সড়ক ও তাহিরপুর সুনামগঞ্জ সড়কের কয়েকটি স্থানের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তাহিরপুর বাদাঘাট সড়ক ও তাহিরপুর সুনামগঞ্জ সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে গত দুই দিন থেকে। হঠাৎ করে বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের পানি সড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে বিপদে পড়েছেন তাহিরপুর সদরে গাড়ি নিয়ে আসা লোকজন। তাহিরপুর সুনামগঞ্জ সড়কে শক্তিয়ার খলা ১শ মিটার সড়কে ও দুর্গাপুর গ্রামের পশ্চিমের সড়কে পানি থাকার কারণে প্রাইভেটকার ও সিএনজি নৌকায় করে পারাপার করতে অনেককে দেখা গেছে। জরুরী প্রয়োজনে অনেকেই পথ ভেঙ্গে ভেঙ্গে জেলা সদর সুনামগঞ্জ যাতায়াত করছেন। হাঠাৎ করে বন্যা সৃষ্টি হওয়ায় নি¤œ আয়ের লোকজন পড়েছেন নানা বিপাকে। যাদুকাটা নদীতে বালি পাথর আহরন বন্ধ রয়েছে গত এক সপ্তাহ ধরে। লাগাতার বৃষ্টি অব্যাহত থাকালে নদ নদী ও হাওরের পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
যাদুকাটা নদীর বালি পাথর ব্যাবসায়ী লাউড়েরগড় গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পাহাড়ি ঢলের কারনে যাদুকাটা নদীতে শ্রমিকরা কাজ কর্ম করতে না পেরে কর্মহীন হয়ে পরেছেন।
তাহিরপুর টাঙ্গুয়া হাওরে ঘুরতে আসা পর্যটক আদনান জুবায়েদ বলেন, সুনামগঞ্জ শহরে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু পথে দু’তিন স্থানে পানি থাকার কারনে তাহিরপুর ফেরৎ চলে আসছি।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও উপজেলা সহকারী কমিশনার ভ‚মি আসাদুজ্জামন রনি বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তাহিরপুরের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সেই সাথে তাহিরপুর সুনামগঞ্জ সড়কের একাধিক স্থান দিয়ে ঢলের পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে গত ৩ দিনের টানা বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানিতে ধলাই নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। পানি বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ১০ স্থান ঝুঁকিপ‚র্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার আশঙ্কায় করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলাকাবাসী।
ধলাই নদীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, টানা বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানিতে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখন পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করেনি। পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাকিব হোসেন ধলাই নদীতে পানি বৃদ্ধির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ভানুগাছ রেলওয়ে সেতু এলাকায় পরিমাপ করে দেখা গেছে ধলাই নদীর পানি বিপদ সীমার ১০২ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ইসলামপুর, কুরমা এলাকা দিয়ে মাধবপুর, আদমপুর, সদর, পৌরসভা, মুন্সিবাজার ও রহিমপুর ইউনিয়নের উপর দিয়ে দীর্ঘ ৫৭ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে মনু নদী মিলিত হয়েছে ধলাই নদী। এর মাঝে অসংখ্য স্থানে আকা বাঁকা হয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ৮ থেকে ১০ স্থানে প্রতিরক্ষা বাঁধ ঝুঁকিপ‚র্ণ রয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্বক্ষণিক নজদারি রয়েছে। ভারতীয় পাহাড়ি এলাকায় ভারী বৃষ্টি হলে ধলাই নদীর পানি আরও বেড়ে বিপদ সীমা অতিক্রম বন্যার আশঙ্কা থাকবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন বলেন, ধলাই নদীতে পানি বাড়লেও এখনও বিপদ সীমা অতিক্রম করেনি। ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়ন কাজ হওয়ায় আপাতত ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে। তারপরও উপজেলা প্রশাসন ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের দিকে সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে।