নির্বাচিত হলে নিয়মিত নাগরিক সংলাপের আয়োজন করবো

4
‘কেমন সিলেট চাই’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী

আধ্যাত্মিক পর্যটন নগরী সিলেটকে নিয়ে তাদের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা অনেক। তার সবই একটি বাসযোগ্য স্মার্ট ও আধুনিক নগরীর সাথে সম্পর্কযুক্ত। আগামীর সিলেট নিয়ে স্থানীয় তরুণ পেশাজীবী ও উদ্যোক্তাদের প্রত্যাশা এবং চিন্তাভাবনার কথা জানলেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তার কাছেই নিজেদের প্রত্যাশার ফানুস উড়ালেন তরুণরা।
মঙ্গলবার দুপুরে সিলেট মহানগরীর একটি অভিজাত হোটেলের কনফারেন্স হলে আগামীর সিলেট নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো এক মতবিনিময় সভা। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সাথে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছিল সিলেটের তরুণ পেশাজীবী ও উদ্যোক্তারা।
সভায় উদ্যোক্তারা আগামীর সিলেট নিয়ে তাদের বিভিন্ন প্রত্যাশার কথা ব্যাক্ত করেন। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী তা গভীর মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং প্রতিটি বিষয়ে আলাদা আলাদাভাবে তার বা সিটি করপোরেশনের করনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
তরুণ পেশাজীবী ও উদ্যোক্তারা শুরুতেই নগরভবন নিয়ে তাদের প্রত্যাশা ও প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড নগরভবন, জনশক্তিকে আরও দক্ষ করা, গ্রীন ও স্মার্ট নগরী গড়ে তুলতে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, কর্মীদের সেবা প্রদানের মানসিকতা বৃদ্ধি ও উদ্বুদ্ধ করার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, একটি স্মার্ট সিটির জন্য অবশ্যই স্মার্ট নগরভবন জরুরী।
নগরীর পয়োঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা ও জলাবদ্ধতা দূর করার প্রস্তাবের ব্যাপারে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, পয়োঃনিষ্কারশন ব্যবস্থা আরও মজবুত করতে পূর্বগবেষণামূলক স্যানিটেশন সলিউশনের পরিকল্পনাগ্রহণ ও বাস্তবায়ন জরুরী। আর জলাবদ্ধতা দূর করতে দখল হওয়া ছড়াগুলো উদ্ধার করে বৃষ্টির পানিপ্রবাহ অবাধ করতে হবে।
এসময আনায়ারুজ্জামান চৌধুরী নগরবাসীর দুঃখদর্দশা লাঘবে এবং তাদের সমস্যা সম্পর্কে জানতে ওপেন হাউস ডে’ একটি চমৎকার উদ্যোগ হতে পারে। এটি খুবই কার্যকর বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এছাড়া আধুনিক বর্জ্যব্যবস্থাপনা, পরিচ্ছন্ন নগরী ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের ব্যাপারে বিজ্ঞানসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ, পরিকল্পিত গণপরিবহণ ব্যবস্থা চালু ও যানজট নিরসনে কার্য্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, সুরমার নাব্যতাবৃদ্ধি ও অকাল বন্যা প্রতিরোধ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, পুরানো কারগারের জায়গায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় উদ্যান ও একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ, কর্মমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন, পরিবেশ বান্ধব উন্নয়ন ও সবুজায়ন, নিরাপদ ও শান্তির নগরী গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ, দুর্যোগ মোকাবেলায় সচেতনতাবৃদ্ধি, প্রস্তুতি ও তদারকি, বিকল্প বিদ্যুতের জন্য সোলার প্ল্যান্ট স্থাপন বা পৃথক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট, মিউজিয়াম স্থাপন ও সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ, সুরমার তলদেশ দিয়ে ট্যানেল নির্মাণ, রাজধানীমুখী দ্রæতগামী ট্রেনের ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট ও খেলার মাঠের ব্যবস্থা, উদ্যোক্তা ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, নগরীর তারের জঞ্জাল পরিস্কার- ইত্যাদি দাবি উঠে তরুণ সমাজের পক্ষ থেকে।
প্রতিটি বিষয় নিয়ে আলাদা আলাদাভাবে প্রশ্ন রাখেন তরুণ সমাজের প্রতিনিধি ও উদ্যোক্তারা। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও আলাদা আলাদাভাবে উত্তর দেয়ার পাশাপাশি নিজের চিন্তাভাবনাগুলোও তাদের জানিয়ে দেন।
প্রায় সবগুলো বিষয়েই তিনি তাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, একটি বাসযোগ্য স্মার্ট ও আধুনিক নগরের জন্য উল্লিখিত প্রতিটি প্রস্তাব বাস্তবায়ন জরুরী। তবে উত্থাপিত প্রসঙ্গের দু’একটা বিষয় আছে যা সিটি করপোরেশনের আওতায় পড়েনা। কিন্তু তবু আমি মেয়র নির্বাচিত হলে সিলেটের মন্ত্রী এমপিদের সহযোগীতা নিয়ে ওই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবো।
আর সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর সাথে একমত প্রকাশ করে তিনি বলেন, এগুলোতো অবশ্যকরণীয় এবং তা বাস্তবায়নযোগ্যও। তার সাথে আরও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার চিন্তাভাবনা বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় থেকে আশ্বাসও পেয়েছি। সুরমার দুই তীরে প্রচুর ইকোপার্ক তৈরির সুযোগ আছে। পর্যটকদের জন্য এটি করতে পারলে এই মহানগরী আরও দৃষ্টিনন্দন এবং আকর্ষনীয় হবে।
সবশেষে মেযর প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমাদের সবার ভালোবাসার নগরী এই সিলেট। আপনাদের প্রায় সবগুলো প্রস্তাব কেবল আপনাদেরই নয়, আমারও। আমি নির্বাচিত হলে এগুলো অবশ্যই বাস্তবায়ন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো এবং একটি স্মার্ট সিটির জন্য এর বাইরে আরও যা যা জরুরী তার সবকিছুই করা হবে ইনশাল্লাহ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আল আজাদ, সিনিয়র সাংবাদিক ইকরামুল কবির, চেম্বারের সভাপতি তাহমিন আহমদ, উইমেন চেম্বারের সভাপতি স্বর্ণলতা রায়, লিডিং ইউনিভার্সিটির শিক্ষক স্থপতি রাজন দাশ, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কৌশিক সাহা, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা ইমরান আহমদ, ব্যবসায়ী ও ক্রীড়া সংগঠক ফরহাদ কোরেশি, ব্যাংকার রেজাউর রহমান, তারেক আহমদ চৌধুরী, কামরান আহমদ, ব্যবসায়ী সুমন ভট্টাচার্য্য, ক্যাটারিং ব্যবসায়ী শান্ত দেব, নির্মাতা উত্তম কুমার সিংহ।
এছাড়া তরুণ পেশাজীবীদের মধ্যে চিকিৎসক, স্থপতি, আইনজীবী, শিক্ষক, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ, নারী উদ্যোক্তা, এসএমই, জেসিআই, ব্যাংক বীমা প্রতিষ্ঠানের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, উইমেন চেম্বারের সদস্যবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ, ব্যবসায়ীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি