দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বাজেট পেশ

24

কাজির বাজার ডেস্ক
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটায় একাদশ জাতীয় সংসদের ২৩তম (বাজেট) অধিবেশন শুরুর পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর অনুমোদনক্রমে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী। এটি দেশের ৫২তম ও আওয়ামী লীগ সরকারের ২৪তম বাজেট। আর অর্থমন্ত্রী হিসেবে মুস্তফা কামালের এটি পঞ্চম বাজেট। এবারের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। গতবছর অর্থমন্ত্রী চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছিলেন। তবে সংশোধিত হয়ে এই বাজেটের আকার কমে দাঁড়ায় ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ। সংশোধিত বাজেটের তুলনায় প্রস্তাবিত বাজেটের আকার বাড়ছে ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা, যা প্রাক্কলিত জিডিপির ১০ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড উৎস হতে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে। এনবিআর বহিভর্‚ত সূত্র থেকে কর রাজস্ব প্রাক্কলন করা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। কর-বহিভর্‚ত খাত থেকে রাজস্ব আহরিত হবে আরো ৫০ হাজার কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে অনুদান ব্যতীত মোট ঘাটতি নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা জিডিপি ৫ দশমিক ২ শতাংশ। ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মোট ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। বৈদেশিক উৎস (অনুদানসহ) থেকে আসবে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা হতে সংগৃহীত হবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য সরকার পরিচালন ব্যয়ের প্রাক্কলন করেছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। এছাড়া, উন্নয়ন ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া, মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে।
ন্যূনতম আয়কর ২ হাজার টাকা : প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেটে গুরুত্ব পায়নি স্বাস্থ্যখাত। করোনা মহামারির কারণে গত দুই অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাত বিশেষ প্রাধান্য পেয়েছিল। যদিও গত বছর এই খাতে বরাদ্দ কমে যায়। এবারও সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। গত অর্থবছরের তুলনায় এবারের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ কমেছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতের প্রস্তাবিত বাজেট ধরা হয়েছে ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। যা মূল বাজেটের ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। অপরদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে বাজেট ছিল ১৫ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা। যা ছিল মূল বাজেটের ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। স্বাস্থ্যখাতকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়ায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ তাদের জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ অর্থের সবটা ব্যবহার করতে না পারায় এই খাত গুরুত্ব কম পেয়েছে। ফলে মোট বাজেট বাড়লেও নতুন বাজেটে চাহিদামত অর্থ পায়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বেশ কিছু পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) ও শুল্ক বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন। এতে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত : প্রস্তাবিত বাজেটে সাড়ে ৩ লাখ ও নারী ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ টাকা হচ্ছে। গতবারের তুলনায় এটি ৫০ হাজার টাকা বেশি। বর্তমান সরকারের শেষ বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের জন্য সুখবর নিয়ে এলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট আজ বৃহস্পতিবার (১ মার্চ) তিনি ঘোষণা করেছেন, তাতে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ বছরে সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর দিতে হবে না। বর্তমানে এই সীমা ছিল ৩ লাখ টাকা। পাশাপাশি ৬৫ বছরের বেশি বয়সী নাগরিক ও নারীর ক্ষেত্রে সাড়ে তিন লাখ টাকা এখন করমুক্ত। নতুন অর্থবছরের বাজেটে এই সীমাও বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। নারী ও ৬৫ বছরে বেশি বয়সী করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, মুদ্রাস্ফীতির কারণে করদাতাদের প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছে বলে কোম্পানি ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ব্যতীত অন্যান্য শ্রেণীর করদাতা, বিশেষ করে স্বাভাবিক ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা কিছুটা বাড়ানোর প্রস্তাব করছি। এতে ব্যক্তি করদাতাদের করভার লাঘব হবে বলে করদাতারা নিয়মিতভাবে কর পরিশোধে উৎসাহিত হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। একই সঙ্গে সর্বনিম্ন করহার ৫ শতাংশ ও সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশে নির্ধারণের প্রস্তাবও করেন অর্থমন্ত্রী। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী আগামী অর্থবছর থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর দিতে হবে না।
বাজেট প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, পরবর্তী ১ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ে কর দিতে হবে ৫ শতাংশ হারে। তার পরবর্তী ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ে কর দিতে হবে ১০ শতাংশ হারে, পরবর্তী ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর দিতে হবে ১৫ শতাংশ হারে, তার পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর দিতে হবে ২০ শতাংশ হারে ও এর চেয়ে বেশি আয়ের জন্য ২৫ শতাংশ হারে কর প্রযোজ্য হবে।
স্মার্ট বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় হবে সাড়ে ১৩ লাখ টাকা : স্মার্ট বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় হবে কমপক্ষে ১২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার আর দারিদ্রসীমার নিচে থাকবে ৩ শতাংশেরও কম মানুষ বলে বাজেট প্রস্তাবনায় জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদ ভবনে বাজেট অধিবেশনে এ তথ্য জানান তিনি। বাজেট অধিবেশন পরিচালনা করছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। অর্থমন্ত্রী বলেন, ৩ শতাংশের কম মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে থাকলে চরম দারিদ্র্য নেমে আসবে শূন্যের কোটায়। মূল্যস্ফীতি সীমিত থাকবে ৪ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে। বাজেটের ঘাটতি থাকবে জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে।
তিনি জানান, এবারের বাজেটে রাজস্ব জিডিপি অনুপাত হবে ২০ শতাংশের ওপর। বিনিয়োগ হবে জিডিপির ৪০ শতাংশ। শতভাগ ডিজিটাল অর্থনীতি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক স্বাক্ষরতা অর্জিত হবে। স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে যাবে মানুষের দোরগোড়ায়।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, স্বয়ংক্রিয় যোগাযোগ ব্যবস্থা, টেকসই নগরায়নসহ নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সব সেবা থাকবে হাতের নাগালে। পেপার ও ক্যাশলেস সমাজ তৈরি হবে। সবচেয়ে বড় কথা, স্মার্ট বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হবে সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা।
এবারের বাজেটের মূল দর্শন হলো- ২০৪১ সালের মধ্যে সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ। স্মার্ট বাংলাদেশ চারটি মূল স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি ও স্মার্ট ইকোনমি।
অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট হবে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে প্রথম বাজেট। এবারের বাজেটে সঙ্গত কারণেই স্বাস্থ্য, কৃষি, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অর্থবছরের পুরো সময়জুড়েই থাকবে সরকারের নানা ধরনের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি এবং বাড়ানো হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য বাজেটের আকার চ‚ড়ান্ত করা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বাড়ছে ১১৮৯ কোটি টাকা : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা শতকরা বিবেচনায় মোট প্রস্তাবিত বাজেটের ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা ছিল। সে হিসাবে এই বাজেটে বরাদ্দ বাড়ছে ১১৮৯ কোটি টাকা।
কোভিড পরিস্থিতি পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ-
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ১৬টি জাতীয় গাইডলাইন, অন্যান্য নির্দেশিকা, ৪টি এসওপি (অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং প্রসিডিউর) এবং ১৩টি গণসচেতনতামূলক উপকরণ তৈরি করা হয়েছে। কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলিতে ১২ হাজার ৮৬০টি শয্যা এবং ১ হাজার ১৮৬টি আইসিইউ’র সংস্থান করা হয়েছে। দেশের সকল জেলা হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সবার জন্য সুলভ ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা : স্বাস্থ্যখাতে সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে সাফল্যের ধারাবাহিকতায় টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ অর্জনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের মূল বৈশিষ্ট্য হল- অগ্রাধিকারভিত্তিক সেবাসমূহ সম্প্রসারণ, অধিক সংখ্যায় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্তকরণ ও সেবাগ্রহীতার ব্যক্তিগত ব্যয় হ্রাসকরণ। এক কথায় আর্থিক কষ্ট ব্যতিরেকেই সকল নাগরিকের জন্য গুণগত স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা চতুর্থ স্বাস্থ্য, ও পুষ্টিখাত কর্মসূচির আওতায় ৩১টি অপারেশনাল প্ল্যানের মাধ্যমে সারাদেশে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছি।
তিনি বলেন, প্রতিরোধযোগ্য রোগসমূহ হতে শিশুদের সুরক্ষা দিতে চলমান রাখা হয়েছে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)। ১৯৮৫ সালে ইপিআই কভারেজ ছিল মাত্র ২ শতাংশ, যা বর্তমানে ৯৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবায় কমিউনিটি ক্লিনিক : মোস্তফা কামাল বলেন, গ্রামীণ জনগণের কাছে সরাসরি স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর কার্যকর মাধ্যম হিসেবে আমরা এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৩৮৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছি। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সরকার ও জনগণের সম্মিলিত অংশীদারিত্বে পরিচালিত হয়। ক্লিনিকের জন্য জমি প্রদানের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারা ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনায়ও ভ‚মিকা রাখেন। ক্লিনিক পরিচালনা ও ওষুধ-চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যয় নির্বাহের দায়িত্ব সরকারের। ক্লিনিকে মা, নবজাতক ও অসুস্থ শিশুর সমন্বিত সেবা (আইএমসিআই), প্রজননস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা, সাধারণ আঘাতের চিকিৎসা ছাড়াও পুষ্টিসেবা প্রদান করা হয়।
তিনি বলেন, ক্লিনিকে ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো অসংক্রামক রোগ শনাক্ত করা হয়। বয়স্ক, কিশোর-কিশোরী ও প্রতিবন্ধীদের লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দেওয়া হয়। ক্লিনিক থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ ছাড়াও শিশুদের অনুপুষ্টিকণার প্যাকেট দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী কমিউনিটি ক্লিনিকে বিনা পয়সায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ইনসুলিন প্রদানের নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে দৈনিক গড়ে ৪০ জন সেবাপ্রার্থী সেবা গ্রহণ করে থাকেন, যার ৮০ শতাংশই নারী ও শিশু। সারাদেশে প্রায় ৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রসবসেবা দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট সংসদে পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থমন্ত্রী যে বাজেট বক্তব্য দিচ্ছেন তার শিরোনাম দেওয়া হয়েছে- ‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে। আগামী এক বছর দেশ পরিচালনার সার্বিক আয়-ব্যয়ের হিসাব রয়েছে এই বাজেটে। এটি আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম ও বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেট ২৬ জুন অনুমোদন হবে আর ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হবে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হচ্ছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বিশাল এ বাজেটের ঘাটতি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা; যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ।
শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়লো সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা : ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষা খাতে টাকার অঙ্কে মোট বরাদ্দ বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের তুলনায় আসন্ন অর্থবছরে মোট ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ দুই মন্ত্রণালয়ের জন্য নতুন অর্থবছরে মোট ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা গত অর্থবছরে ছিল ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য এবার ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা চলতি অর্থবছর ছিল ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যেখানে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা।
৫ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য : আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যা প্রাক্কলিত জিডিপির (৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা) ১০ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনকালে একথা জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এদিন অর্থমন্ত্রী আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন।
অর্থমন্ত্রী জানান, প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) উৎস থেকে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে। এনবিআর বহিভর্‚ত সূত্র থেকে কর রাজস্ব প্রাক্কলন করা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। কর-বহিভর্‚ত খাত থেকে রাজস্ব আহরিত হবে আরও ৫০ হাজার কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটেও অপরিবর্তিত রয়েছে।
বিয়ের উপকরণসহ কসমেটিকস আমদানিতে ১৭ শতাংশ শুল্ক বাড়ছে : বাংলাদেশে দিন দিন বাড়ছে বিদেশি কসমেটিকস পণ্যের ব্যবহার। দেশীয় বাজারে বিদেশি কসমেটিকস জাতীয় পণ্যের দাম তুলনামূলক বেশি। তবে অধিকাংশ সময়ই লাগেজ পার্টির মাধ্যমে কিংবা অবৈধ উপায়ে বিদেশি কসমেটিকস আমদানির অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যেই বিয়ের অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত বিদেশি উপকরণসহ কসমেটিকস আমদানিতে রেগুলেটরি ডিউটি (শুল্ক কর) বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট বক্তব্যে কসমেটিকস আমদানিতে শুল্ক কর আরও ১৭ শতাংশ বাড়িয়ে অর্থাৎ ২০ শতাংশ আরোপ করার প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ফ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, বিদেশি কসমেটিকস আমদানিতে আগে শুল্ক কর ছিল ৩ শতাংশ। এখন থেকে তা হবে ২০ শতাংশ। এতে করে বিদেশি সাবান, অর্গানিক সার্ফেস অ্যাকটিভ উপকরণ, বার কেক ও বিভিন্ন সাবান তৈরির উপকরণ, ওয়াশিং ক্রিম, ডিটারজেন্ট, লিকুইড সাবান, লিকুইড ক্রিম ও বিয়ের উপকরণের দাম বাড়বে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ঠিক করা হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। করবহিভর্‚ত ও অন্যান্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকা। কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।
ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হবে এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে এক লাখ দুই হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ নেওয়া হবে ব্যাংক খাত থেকে। যার পরিমাণ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এছাড়া সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে ৫ হাজার ১ কোটি টাকা নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার।
নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসির বাজেট বাড়ল ৯৮৩ কোটি টাকা : আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য বাজেট আগের বছরের তুলনায় ৯৮৩ কোটি টাকার বেশি প্রস্তাব করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারজাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রস্তাবের কথা জানিয়েছেন। ইসির জন্য পরিচালন খাতে দুই হাজার ১২৪ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন খাতে ২৮২ কোটি টাকাসহ মোট দুই হাজার ৪০৬ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন তিনি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে নির্বাচন কমিশনের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছিল মোট এক হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ৭৮৯ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ৭৪৯ কোটি টাকা। সে হিসাবে এবার ৮৬৮ কোটি টাকা বেশি প্রস্তাব করা হয়েছে।
তবে গত বছর সংশোধিত বাজেটে পরিচালন ব্যয় কমিয়ে রাখা হয়েছিল ৬৭৪ কোটি টাকা। এতে সংশোধিত মোট বাজেট দাঁড়িয়েছিল এক হাজার ৪২৩ কোটি টাকা। এদিক থেকে গত অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৯৮৩ কোটি টাকার মতো এবার বেশি প্রস্তাব করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে নিম্নবর্ণিত উল্লেখযোগ্য কার্যাবলী/প্রকল্প/কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে-
ক) দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন, ৬টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, ৯টি পৌরসভা সাধারণ নির্বাচন, ৪৫৪টি উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন, ১০০টি ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন এবং জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকারের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পাদন।
খ) কেন্দ্রীয় ও মাঠপর্যায়ে জাতীয় ভোটার দিবস উদযাপন।
গ) ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণের কার্যক্রম গ্রহণ।
ঘ) পেপার লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুত, মুদ্রণ ও বিতরণ।
ঙ) উন্নতমানের (স্মার্ট) জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান।
চ) শূন্য থেকে ১৮ বছর বয়সের নিচে নাগরিক নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান।
ছ) এনআইডি সিস্টেমের (সিএমএস, বিভিআরএস, এএফআইএস, স্মার্ট কার্ড প্রিন্টিং সফটওয়্যার) অডিট (আইএসও/সমপর্যায়ের) ও ডকুমেন্টেশন।
জ) প্রবাসে অবস্থিত বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রবাসেই নিবন্ধনকরণ ও স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান।
ঝ) এনআইডি মিনি আর্কাইভ/লাইব্রেরি স্থাপন।
ঞ) বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি, কালিয়াকৈর এ ডিআরএস (ডিজেস্টার রিকোভারি সিস্টেম) স্থাপন।
ট) জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাই/সনাক্তকরণ সংক্রান্ত পার্টনার সার্ভিস অব্যাহত রাখা।
ঠ) নির্বাচন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন, নির্বাচন প্রক্রিয়া ও নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা।
এদিকে পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে মজুরি ও বেতন বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০১ কোটি টাকা। এছাড়া পেশাগত সেবা, সম্মানী ও বিশেষ ব্যয়ের জন্য ধরা হয়েছে ১০৭ কোটি টাকা।
বাজেট প্রস্তাবে রাজস্ব আহরণের খাত হিসেবে এনআইডি ফি থেকে ৮৩ কোটি টাকা, বাজেয়াপ্ত নির্বাচনী জামানত থেকে ১২ কোটি টাকাসহ অন্যান্য খাত থেকে ১০২ কোটি দেখানো হয়েছে।
চালু হচ্ছে সর্বজনীন পেনশন : এবারের অর্থ বাজেটে চালু হচ্ছে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থ্য।
বৃহস্পতিবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এই ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। এবারের বাজেটের সম্ভাব্য আকার হতে যাচ্ছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করার উদ্দেশে জাতীয় সংসদে পৌঁছান অর্থমন্ত্রী। একটার দিকে বাজেট অনুমোদনে মন্ত্রিসভার বৈঠক শুরু হয়।