জগন্নাথপুরে শেষ সময়ে জমে উঠেছে নির্বাচনী লড়াই

10

মো.শাহজাহান মিয়া, জগন্নাথপুর থেকে

আগামী ২৫ মে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেই কাঙ্খিত জগন্নাথপুর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন। নির্বাচনটি শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্নের লক্ষে নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মোট ৫ জন প্রার্থী অংশ নিয়েছেন। প্রার্থীরা হলেন, আ.লীগ মনোনীত নুরুল ইসলাম (নৌকা), বাংলাদেশ জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম মনোনীত আবদুল কাইয়ূম কামালী সিতু (খেজুর গাছ), জাতীয় পার্টি মনোনীত আতাউর রহমান (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ তালহা আলম (কাপ পিরিছ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হারুন রাশীদ (আনারস)।
যদিও প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দের পর রীতিমতো আমেজহীন ছিল নির্বাচনী অঞ্চল। অন্য নির্বাচনের মতো জমে উঠেনি নির্বাচনী মাঠ। তবে শেষ সময়ে এসে সরগরম হয়ে উঠেছে নির্বাচনী এলাকা। চারদিকে শুরু হয়েছে, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা, গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ। নিজেদের বিজয় নিশ্চিতের লক্ষে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন প্রার্থীরা। ভোটাররাও কষতে শুরু করেছেন ভোটের হিসাব-নিকাশ। কাকে ভোট দেয়া উচিত ও কে নির্বাচিত হলে কাঙ্খিত উন্নয়ন হবে। এসব আলোচনা এখন ভোটারদের মুখে মুখে।
২৩ মে মঙ্গলবার নির্বাচনী বিষয় নিয়ে প্রবীণ মুরব্বি আবদুল আলী, ছমির উদ্দিন, কনা মিয়া, রহমত আলী, রঘু নাথ, শৈলেন দাস, ফিরোজ মিয়া, আলী আকবর, মাহমদ আলী, নিপেশ গোপ সহ অসংখ্য ভোটারদের সাথে কথা হয়। তাদের মন্তব্য থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। তারা জানান, এবারের নির্বাচনে চতুর্থমুখী লড়াই হতে পারে। এর মধ্যে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী নুরুল ইসলাম। কারণ হিসেবে ভোটাররা বলেন, নুরুল ইসলাম এমনিতেই ব্যক্তি ও রাজনৈতিক ইমেজে এগিয়ে আছেন। তিনি একজন সজ্জন ও পরিছন্ন মানুষ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। তার উপর পেয়েছেন সরকার দলীয় প্রতীক নৌকা। এছাড়া দলীয় নেতাকর্মীরাও নৌকার বিজয় নিশ্চিতের লক্ষে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। ফলে নৌকার সহজ বিজয় হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
সাথে রয়েছেন জমিয়ত প্রার্থী আবদুল কাইয়ূম কামালী সিতু। তিনি ব্যক্তি হিসেবে নতুনমুখ হলেও তাঁর পক্ষে খেজুর গাছ প্রতীকের বিজয় নিশ্চিতের লক্ষে সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী সহ জমিয়তের আলেম-উলামাগণ মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। বিগত নির্বাচনে জমিয়তের প্রার্থী সৈয়দ তালহা আলমকে নিয়ে নৌকার বিজয়ী প্রার্থী প্রয়াত আকমল হোসেনের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছেন তাঁরা। যদিও এবার সৈয়দ তালহা আলম জমিয়ত ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে তাঁর কাপ পিরিছ প্রতীক নিয়ে লড়াই করছেন। তিনি নির্বাচনী কৌশলে এগিয়ে আছেন। এবার নির্বাচন হবে সৈয়দ তালহা আলমের জন্য অগ্নি পরীক্ষা। বিগত নির্বাচনে তিনি জমিয়তের ভোটে নাকি নিজ ইমেজে লড়াই করেছিলেন। তা প্রমাণ হয়ে যাবে এবারের নির্বাচনী ফলাফলে। সেই সাথে জমিয়তের শক্তিরও প্রমাণ হবে। এছাড়া আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী হারুন রাশীদও মরণকামড় দিতে পারেন। তিনি এর আগেও উপজেলা নির্বাচনে লড়াই করেছিলেন ও চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের দুই বারের চেয়ারম্যান ছিলেন। সেই পরিচিত ও অবস্থান থেকে তিনি এগিয়ে আছেন। তাঁর আনারস প্রতীকের বিজয় নিশ্চিতের জন্য নীরব ভাবে কাজ করছেন কর্মী-সমর্থকরা। সব মিলিয়ে এবারের নির্বাচনে চতুর্থমুখী লড়াই হতে পারে। তবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচনে সাড়াই জাগাতে পারেননি। এভাবেই পৃথক পৃথক ভাবে আলাপকালে দলীয় নেতাকর্মী, প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থক ও ভোটাররা তাঁদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। যদিও নির্বাচনে বিএনপির কোন প্রার্থী অংশ নেননি। তবে কোন দিকে যাচ্ছে তাদের সমর্থন। এ নিয়েও আলোচনার শেষ নেই। কারণ এর আগে বিএনপির প্রার্থী আলহাজ আতাউর রহমান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তাই বিএনপির শক্তিকেও খাঁটো করে দেখার সুযোগ নেই। নির্বাচনী আলোচনায় ঘুরেফিরে চলে আসছে বিএনপির নাম। যদিও বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি।
এদিকে-সাধারণ ভোটারদের একটাই প্রত্যাশা নির্বাচন যেন স্বচ্ছ হয়। জনতার ভোটে নির্বাচিত প্রার্থী চেয়ারম্যান হয়ে যেন সাধারণ মানুষের কল্যাণে ও এলাকার উন্নয়নে কাজ করেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, তিনি যেন গরীব মানুষের সাখে ভালো আচরণ করেন। কাঙ্খিত প্রত্যাশা পূরণ না হলেও যেন চেয়ারম্যানের ব্যবহারে মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করেন। তাই জনরায়ে কে হচ্ছেন আগামী উপজেলা চেয়ারম্যান। কার গলায় পড়ছে বিজয়ের মালা। তা নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন জগন্নাথপুর উপজেলাবাসী সহ দেশ/বিদেশে থাকা ভোটার ও স্বজনরা।