মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি

4

 

দ্রব্যমূল্য কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। হঠাৎ করে এক একটি পণ্য এত বেশি মূল্য নিয়ে হাজির হয় যে পরিস্থিতি রোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে। বাজারে কোন জিনিস কখন বাড়বে তা কেউ জানে না। ইতিপূর্বে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সময়ে দেখা গেল বোরোর দাম বাড়তি। কৃষক কিন্তু বাড়তি মূল্য পায় না। তারপরও দ্রব্যমূল্য কেন বাড়ে? এ প্রশ্নের উত্তর জানা নেই কারো। এবারও পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। আমদানি হয়েছে কয়েক লাখ টন। মজুত আছে পর্যাপ্ত। তবু মসলাজাতীয় পণ্যটির বাজারে চলছে অস্থিরতা। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষকের কাছ থেকে বেশিরভাগ পেঁয়াজ চলে গেছে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে। ভারত থেকে আমদানি বন্ধের অজুহাতে মূলত তারা বাজারকে নিজেদের কব্জায় নিয়ে গেছেন। সরকারের উল্লেখযোগ্য তদারকি না থাকার সুযোগও কাজে লাগিয়েছেন তারা। এ কারণে পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও দাম নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। ফলে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারসাজির মূল নায়ক আড়তদার বা মজুতদাররা।
যদিও সরকার বলছে, আমদানির ব্যাপারে শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। ওই বছর দাম বাড়তে বাড়তে কেজি ৩০০ টাকার কাছাকাছি হয়। এর পরের বছরও ২০০ টাকা ছাড়ায়। এভাবে গত তিন বছর পেঁয়াজের বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা ছিল। তবে উৎপাদন বাড়াতে সরকার কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়াসহ নানা পদক্ষেপ নিলে এর সুফলও মেলে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছিল ১৭ লাখ ১ হাজার টন। এই অর্থবছরে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ লাখ ১৭ হাজার টনে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে ২৬ থেকে ২৮ লাখ টন। সে হিসাবে ২ থেকে ৪ লাখ টনের ঘাটতি থাকে। তবে বর্তমানে ১৮ লাখ ৩১ হাজার ১৭০ টন পেঁয়াজ মজুত রয়েছে। একথা গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। পেঁয়াজের বাজারে যে অস্থিরতা চলছে তা একদম অনাকাক্সিক্ষত। বর্তমানে খুচরায় দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। মাসখানেক আগে ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম এই পরিমাণ বাড়ার কারণ কি তা জানে না কেউ। গত ১৬ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে আমদানি। এরপর কিছুদিন দাম নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে রোজার ঈদের পর থেকেই লাফিয়ে বাড়তে থাকে দাম।
গত রবিবার রাজধানীর বাড্ডার এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, বেশি মুনাফা লাভের আশায় অনেকে পেঁয়াজ মজুত রেখে সংকট তৈরি করে বাজার অস্থিতিশীল করছে। বাণিজ্যমন্ত্রীর কথার ওপর ভিত্তি করেই বলতে হয়, দিনের পর দিন যারা বিভিন্ন পণ্য মজুদ করে দাম বাড়িয়ে মুনাফা লুটছে-তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না কেন? কৃষকদের থেকে আড়তদাররা পেঁয়াজ কিনে নেওয়ার পর ব্যবসা তাদের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে। তারাই এখন সরবরাহ ও দামের কারসাজির সঙ্গে যুক্ত। দেশের মানুষ এখন বড় দুঃসময়ের মুখোমুখি। এসময় যেসব মজুতদার মুনাফা লাভের আশায় পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে জনগনের পকেট কাটছে, সেইসব মজুতদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।