১০ দিনের প্রতিবেদন ৩৭ দিন পর জমা

5

 

স্টাফ রিপোর্টার

চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কদমতলীস্থ নবনির্মিত আধুনিক বাস টার্মিনাল পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়। চালু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই টার্মিনালের ছাদের একটি অংশে ফাটল ধরা পরে। ফাটল ধরা পড়ার পর জরুরী সংবাদ সম্মেলন করেন সিসিক মেয়র। বাস টার্মিনাল নির্মাণে ত্রæটি রয়েছে কী না তা অনুসন্ধানে ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। ওই কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন সিসিক কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়েছে ১ মাস ৬ দিন পর।
সিলেটে দেশের প্রথম আধুনিক বাস টার্মিনাল প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করে বিশ^ব্যাংক। মিউনিসিপ্যাল গভর্নমেন্ট সার্ভিস প্রজেক্ট (এমজিএসপি) প্রকল্পের আওতায় এই প্রকল্পের উদ্যোক্তা সিলেট সিটি করপোরেশন। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মেয়াদ ছিল দুইবছর। কিন্তু মেয়াদান্তে কাজ শেষ হয়নি। উপরন্তু ৬৩ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দের পর আরও ৪ কোটি টাকা বরাদ্ধ বৃদ্ধি করে ৬৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। তারপরও হয় নি কাজের কাজ। চলতি বছরের ১৫ ফেব্রয়ারি থেকে কোনো রকম উদ্বোধন ছাড়াই পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলে বাস টার্মিনালের। কিন্তু কার্যক্রম চলাকালীন টার্মিনাল ভবনের ছাদে ফাটল দেখা দেয়।
এ ঘটনায় সিটি করপোরেশেনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ১ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে নির্মাণে ত্রæটি রয়েছে কী-না তা অনুসন্ধানের জন্য ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলমকে আহবায়ক করে ৬ সদস্যের টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন।
এই কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, এলজিইডি সিলেটের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী জে এম আজাদ হোসেন, গণপূর্ত অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী রিপন কুমার রায়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: নজরুল হাকিম, সড়ক বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.মোস্তাফিজুর রহমান ও সিসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী হুমায়ূন কবীর। তবে ১০ দিনে তদন্ত প্রতিবেদন জমাদানের কথা থাকলেও ৩৭ দিন পর প্রতিবেদন হাতে পায় সিসিক কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, শনিবার তদন্ত প্রতিবেদন হাতে এসেছে। দু’একদিনের মধ্যে মেয়র মহোদয় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিবেদন বিষয়ে কথা বলবেন। সিসিকের এই কর্মকর্তার মতে, ছাদে ফাটলের কারণে মূল ভিত্তিতে কোন সমস্যা হবে না। ডিজাইনের সমস্যা থাকার কারণে এটি হয়েছে। বাইরের যে পার্টিশন ওয়াল দেয়া হয়েছে সেটার উচ্চতা বেশি। এর নিচের কলামে ফাউন্ডেশন শক্তিশালী না হওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে। তবে টার্মিনালের নকশা করা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক সুব্রত দাস বলেন, বিষয়টি মুল ভিত্তিতে আঘাত হানতে পারে।
তিনি বলেন, স্থাপনায় বেশ কয়েকটি অংশ থাকে। যার মধ্যে আর্কিটেকচারাল ডিজাইন, স্ট্রাকচারাল ডিজাইন, ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল ও প্লাম্বিং- এই পাঁচটি অংশ থাকে। টার্মিনালের ফাটল সেটি মূল যে স্ট্রাকচারাল ডিজাইন আছে তাতে নয়। এটি পার্টিশন দেয়ালের ত্রæটি। এটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। দ্রæত ব্যবস্থা না নিলে এটি মূল ভিত্তিতে আঘাত আনতে পারে।
উল্লেখ্য-২০১৮ সালে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ও সিসিকের উদ্যোগে ৮ একর ভ‚মিতে ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথমে টার্মিনালটির কাজ শুরু হলেও পরে তা বেড়ে ৬৭ কোটি টাকাতে গিয়ে দাঁড়ায়। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিন ব্রিজ, আলী আমজাদের ঘড়ি ও আসাম টাইপ বাংলোর স্থাপত্যশৈলী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কদমতলী বাস টার্মিনাল প্রকল্পের নকশা প্রণয়ন করা হয়। এতে বিমানবন্দরের আদলে বহিঃর্গমন এবং আগমনের আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়। স্থাপনার দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে গোলাকার পাঁচতলা একটি টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে টার্মিনাল পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা কার্যালয়, কন্ট্রোল রুম, পুলিশ কক্ষ এবং পর্যটন কার্যালয় স্থাপন করা হবে।
যাত্রী উঠানামার জন্য পৃথক টার্মিনাল ভবন, সুপরিসর পার্কিং ব্যবস্থা, পরিবহন সেবাদানকারীদের জন্য যাবতীয় সুবিধা সম্বলিত পৃথক ভবন, রেস্টুরেন্ট ও ফুড কোর্ট, বিশ্রামাগার, নারী, পুরুষ ও শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য আলাদা আলাদা শৌচাগার, ব্রেস্ট ফিডিং জোন, স্মোকিং জোন, ছোট দোকান, অসুস্থ যাত্রীদের জন্য সিক বেড, প্রার্থনা কক্ষসহ সব ধরনের আধুনিক সেবা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে এ স্থাপনায়। এছাড়া পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সভা অনুষ্ঠানের জন্য বিশাল হলরুম এবং যানবাহনের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওয়ার্কশপ স্থাপন করা হয়েছে।