নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির উদ্যোগ স্রেফ নির্বাচনী ট্রাম্প কার্ড

5

কাজির বাজার ডেস্ক
বর্তমান সরকারের শেষ বছরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে এ-সংক্রান্ত কমিটি কাজও শুরু করছে। কিন্তু শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে এ উদ্যোগ। কারণ, এমপিও নীতিমালার ‘ন্যূনতম পরীক্ষা ও পাসের হার পাস’ সংক্রান্ত ধারা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত বছরের মাঝামাঝি প্রায় তিন হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির উদ্যোগ স্রেফ নির্বাচনী ট্রাম্প কার্ড। কেননা নির্বাচনের আগে চ‚ড়ান্ত বাছাই কার্যক্রম শেষের সম্ভাবনা খুবই কম। এ উদ্যোগ নির্বাচনী মাঠে কাজে লাগাবেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থীরা।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক অধিশাখা) সোনা মনি চাকমা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে চলতি মাস থেকেই বেসরকারি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আবেদন নেওয়া হবে। এরপর সব ধরনের প্রশাসনিক কাজ শেষে চ‚ড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।
তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার আবেদন শুরু নিয়ে জটিলতা তৈরির কথা জানান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাঁরা বলছেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালার ন্যূনতম পরীক্ষা ও পাসের হারসংক্রান্ত ধারা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এ ধারায় নিম্নমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় ন্যূনতম ৭০ শতাংশ পাসের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সরকার ইতিমধ্যে এ পরীক্ষা বাতিল করেছে। আর করোনা সংক্রমণের কারণে গত তিন বছর এ পরীক্ষা হয়নি। নতুন শিক্ষাক্রমেও এই পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলা নেই।
কর্মকর্তারা আরও জানান, ইতিমধ্যে এ-সংক্রান্ত জটিলতা সমাধানে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এ-সংক্রান্ত নথি এখন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খানের দপ্তরে রয়েছে। নির্দেশনা পেলে আবেদন নেওয়া শুরু হবে।
তবে হঠাৎ করে আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন কোনো কোনো কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত তিন-চার বছর পরপর এমপিওভুক্ত করার আবেদন নেওয়া হয়। এটাই প্রচলিত নিয়ম, কিন্তু এবার ঘটেছে উল্টোটা।
সরকারের শেষ সময়ে এসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার উদ্যোগকে স্রেফ নির্বাচনী ট্রাম্প কার্ড বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ কামরুল হাসান মামুন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বড় দুটি দল সব সময় নানা প্রতিশ্রæতি দেয়। যার অনেকগুলো পরবর্তী সময়ে বাস্তবায়ন হয় না।
বিষয়টি অনেকটা টোপের মতো। বর্তমান সরকারের শেষ সময়ে এমপিওভুক্ত করার উদ্যোগ তেমনই একটি টোপ। ভোটের মাঠে ক্ষমতাসীনেরা এটি নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প কার্ড হিসেবে ব্যবহার করবে বলে মনে হচ্ছে।’
এমপিও হলো মান্থলি পে-অর্ডার বা মাসিক বেতন আদেশ। এমপিওভুক্ত হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রতি মাসে বেতনের মূল অংশ ও কিছু ভাতা সরকার থেকে পেয়ে থাকেন। আর বাকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা পান না। এ জন্য বেসরকারি স্কুল-কলেজ পর্যায়ে এমপিওভুক্ত করার বিষয়টি অন্যতম আলোচিত বিষয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ৬ এপ্রিল স্কুল-কলেজ এমপিওভুক্ত করার কার্যক্রম শুরুর নির্দেশনা দেওয়া হয়। ১০ সদস্যবিশিষ্ট এ-সংক্রান্ত কমিটির আহŸায়ক করা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) আবদুন নূর মুহম্মদ আল ফিরোজকে। অন্য সদস্যরা হলেন বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) মহাপরিচালক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজ শাখার যুগ্ম সচিব, বেসরকারি মাধ্যমিক শাখার যুগ্ম সচিব, একই শাখার উপসচিব, বাজেট শাখার উপসচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) ও ব্যানবেইসের সিস্টেম অ্যানালিস্ট। কমিটির সদস্যসচিব করা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব বেসরকারি (মাধ্যমিক-৩) বিদ্যালয় শাখাকে। এ ছাড়া টেকনিক্যাল সাপোর্টের জন্য ব্যানবেইস, মাউশি, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চারজন সিস্টেম অ্যানালিস্টকে নিয়ে একটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে।
এর আগে, গত বছরের ৬ জুলাই ২ হাজার ৭১৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। ২০১৯ সালে ২ হাজার ৬৩৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়। এর আগে ২০১০ সালে ১ হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। সব মিলিয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৯ হাজার ১৬৪টি। আর এমপিওভুক্ত হয়নি এখনো প্রায় ৭ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।